করোনা আতঙ্কের মধ্যেই শনিবার ৩ আসনে ভোট, ভোটার খরার শঙ্কা

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০ । ২৩:৫৭ | আপডেট: ২১ মার্চ ২০ । ০২:০১

 সমকাল প্রতিবেদক

গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনের ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী উপকরণ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবিটি শুক্রবার তোলা -সমকাল

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে- সরকারি সংস্থার কাছ থেকে এমন সতর্কবার্তা সত্ত্বেও শনিবার তিনটি সংসদীয় উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ করা হবে। মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় জনসমাগম এড়ানো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বার্তা দিলেও ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ এবং বাগেরহাট-৪ আসনের ভোটারদের আজ কেন্দ্রে আসতে হবে।

সমালোচনার পরও নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ বদল না করায় করোনা আতঙ্কে থাকা ভোটাররা আদৌ কেন্দ্রে আসবেন কিনা সেই প্রশ্ন রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ২৩ শতাংশ। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের জমজমাট প্রচার, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বতঃস্ম্ফূর্ত অংশগ্রহণের পরও ভোটার উপস্থিতি ছিল হতাশাজনক। করোনার কারণে মানুষ যখন বাড়ি থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছে, এমন সময়ে ভোটার উপস্থিতি নগণ্য হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইসি তিন আসনের নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করেছে। শুক্রবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইভিএম, ব্যালট পেপার, ব্যালট বাপসহ ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ভোটগ্রহণ-সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারাও নিজ নিজ কেন্দ্রে পৌঁছে গেছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা দিতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও টিস্যু পেপার পাঠানো হয়েছে। নেওয়া হয়েছে অন্যান্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে করোনা বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারপত্র ও ব্যানারও পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার সদস্য। রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ স্ট্রাইকিং ফোর্সও।

শনিবার অনুষ্ঠেয় তিনটি সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনের মধ্যে কেবল ঢাকা-১০-এ ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা করা হবে। বাকি দুই আসনে ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস পদত্যাগ করলে শূন্য হয় ঢাকা-১০ আসন। গত ২৭ ডিসেম্বর ইউনূস আলী সরকারের মৃত্যুতে গাইবান্ধা-৩ এবং ১০ জানুয়ারি মোজাম্মেল হোসেনের মৃত্যুতে বাগেরহাট-৪ আসন শূন্য হয়। সংবিধান অনুযায়ী, আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ঢাকা-১০ আসনের চিত্র : ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে মোট ছয়জন প্রার্থী রয়েছেন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ও বিএনপির শেখ রবিউল আলম রবি। মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১২ হাজার ২৮১ জন।

ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানা নিয়ে ঢাকা-১০ আসন। গতকাল ধানমন্ডি ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও ভোটের আমেজ নেই। কোনো কেন্দ্রের সামনে প্রার্থীদের ক্যাম্প পর্যন্ত নেই। কোনো কেন্দ্রে নেই পোস্টার, ব্যানার।

ভোটের কারণে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঢাকা-১০ এলাকায়। গতকাল বিকেলে ধানমন্ডির সিটি কলেজের সামনে দেখা যায়, মোটরসাইকেল আটকাচ্ছে পুলিশ। শনিবার ভোটের কথা শুনে অবাক হন একজন মোটরসাইকেল চালক।

ঢাকা-১০ আসনের আওতাধীন ট্যানারি মোড়ের বাসিন্দা মেরাজ উদ্দিন সমকালকে বলেছেন, ভোট দিতে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। করোনা ঠেকাতে সরকারের তরফ থেকেই বারবার বলা হচ্ছে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে। কিন্তু ভোট কেন্দ্রে তো জনসমাগমই হবে।

গাইবান্ধা ও সাদুল্যাপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকার মতো ভোট দিয়ে আগ্রহ নেই গাইবান্ধা-৩ (সাদুল্যাপুর-পলাশবাড়ী) আসনেও। এই আসনের উপনির্বাচনে কাগজে-কলমে চারজন প্রার্থী থাকলেও শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে রয়েছেন তিনজন। তারা হচ্ছেন- নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী ডা. সৈয়দ মইনুল হাসান সাদিক এবং লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পাটির প্রার্থী মইনুর রাব্বী চৌধুরী রুমান।

গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৩২টি ও ভোটকক্ষ ৭৮৬টি। ভোটগ্রহণে ১৩২ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৮৬ জন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এবং এক হাজার ৫৭২ জন পোলিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ, আনসার, র‌্যাব, বিজিবিসহ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনে উপনির্বাচনের ভোটের সরঞ্জামের সঙ্গে কেন্দ্রগুলো পাঠানো হয়েছে টিস্যু পেপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান। প্রতিটি কেন্দ্রে একটি করে সচেতনতামূলক ব্যানারও দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ইউনুচ আলী জানিয়েছেন, ভোট দিয়েই ভোটারদের কেন্দ্র ত্যাগের অনুরোধ করা হয়েছে।

এই আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী দু'জন। তারা হলেন নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন এবং লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি প্রার্থী সাজন কুমার মিস্ত্রি। বিএনপি প্রার্থী কাজী খায়রুজ্জামান শিপন আপিলেও প্রার্থিতা ফিরে পাননি।

বাগেরহাট-৪ আসনে ১৪৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১৬ হাজার ৫১০ জন। ১০ প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন কোস্টগার্ড ও র‌্যাবের ১০টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছেন ২৩ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ২ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট। এছাড়াও থাকছে পুলিশ।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com