
কালরাত্রি খন্ডচিত্র
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
--

নিউ মার্কেটের মাংসের স্টলের কর্মচারীরা সকাল-সকাল খেয়ে শুয়ে পড়ে। কারণ আবার খুব ভোরেই উঠতে হয়। বাজার শুরু হয়ে যায় অন্ধকার থাকতে থাকতেই। চিরাচরিত তারা ঘুমে ঢলে পড়েছিল। রাত-দুপুরে গোলাগুলির আওয়াজে অনেকের ঘুম ভাঙলেও আবার করোট ফিরে শুয়েছিল। শহরে রাজনীতির উত্তেজনা বলতে গেলে মার্চ মাসের পয়লা থেকেই শুরু। যদিও গুলিগোলার আওয়াজ নিকটে, স্টলের অধিবাসীরা তার কোনো আমল দেয়নি। তা ছাড়া মেহনতি মানুষের কাছে ঘুমের একটা বিশেষ মূল্য আছে। ওদের স্লিপিং পিল, ঘুমের বড়ি খেতে হয় না। দেহ-যন্ত্র সারাদিন এমন চালু থাকে যে ঘুমের ওত পাতা দেখার মতো। বিছানার মধ্যেই গভীর বিশ্রাম লুকিয়ে থাকে।
নিউ মার্কেটের নিকটেই ইউনিভার্সিটি এলাকা। গোটা শহর আলোড়িত। মাংসের স্টলের কর্মচারীরা তারই মধ্যে ঘুমোয় কী করে? অতি পরিশ্রম যারা করে না তাদের পক্ষে এমন পরিস্থিতি কল্পনা প্রায় অসম্ভব।
তারা ঘুমিয়ে ছিল।
মাংসের স্টলে সাজশয্যা আর কী থাকতে পারে? অনেকে তেলচিটে দাগ-ধরা বালিশের মালিক। অনেকের তা-ও নেই। ইটের ওপর কিছু ছেঁড়া কাঁথার সামান্য টুকরো বিছিয়ে নিলেই চলে যায়। বালিশ ছাড়া, শুধু বাহু-বালিশেও বহুজন নিশ্চিন্ত ঘুমায়। এই আর এক আলাদা জগৎ।
দুপুর রাত্রে মিরপুর রোড ধরে হঠাৎ হঠাৎ মিলিটারি জিপ শাঁ শাঁ শব্দে বেরিয়ে যায়। কখনও এসে নিউ মার্কেটের সামনে থামে। আবার স্টার্টের শব্দ। প্রেতায়িত আবহাওয়া।
তারা নির্বিবাদ ঘুমে অথবা অর্ধচেতন স্বপ্নাচ্ছন্ন জগতের মধ্যে শব্দ শুনছিল মাত্র। আর কিছু না। কী ঘটছে, তার দায়িত্ব জাগ্রত মানুষের জন্যে।
শুয়েছিল তারা সারি সারি। স্টলের পর স্টল শায়িত মানুষের এমন প্রলম্ব মিছিল। অনেকের মনে হয়তো সেই ধারণা ধাক্কা দিয়ে গিয়েছিল যে দীন-দরিদ্রদের কেন-ই বা কেউ অনিষ্ট করবে- যারা রাজনীতি করে, তাদের যা হয় হতে পারে।
হঠাৎ কয়েকটা জিপ এসে থামল ঢাকা কলেজের সামনে। নিউ মার্কেট প্রায় ঢাকা কলেজের সম্প্রসারণ। এক অধ্যাপক রসিকতা করে বলতেন, 'কোনটা কার সম্প্রসারণ ধরা কঠিন। এক দিকে ইলেম বিক্রি হয়, অন্যদিকে মাল। আসল উৎপত্তি কোন দিকে- সেটাই আবিস্কার বা গবেষণার বিষয়।'
জিপ থেকে একদল জওয়ান নামল, হাতে স্টেনগান। টর্চের আলো ফেলে তারা একবার দেখে নিল। তারপর ব্রাশ ফায়ার। ট্ট-ট্ট-ট্ট-শ্ শ্ শ্ শ্...।
আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দ হেঁকে গেল, 'হে ঢাকা শহরের খরিদ্দারগণ, এসো বাজারে এসো, কাল সকালে। নতুন মাল আমদানি হয়েছে। এমন সুযোগ আর কোনো দেশে কোনো কালে পাওয়া যাবে না। সুযোগ হারিও না। সারাজীবন আফসোস করে মরবে। অপূর্ব এ মালের স্বাদ। পৃথিবীর আর কোথাও তৈরি হয় না।
মেড ইন পাকিস্তান। শুধু পাকিস্তানে নির্মিত হয়, আর কোথাও না। পাকিস্তান ইসলামী রাষ্ট্র। এসো, কাল সকালে এসো। বড় থলি নিয়ে এসো। এখানে বিক্রি হবে খুব ভোর থেকেই মানুষের গোস্তের সঙ্গে মেশানো গরুর গোস্ত, খাসির গোস্ত। অপূর্ব তার স্বাদ। অপূর্ব এই পাঞ্চ বা মিশ্রণ। আদম-গোস্ত-গাওয়া-গোস্ত প্রসেস্ড ইন ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান...।
নিউ মার্কেটের নিকটেই ইউনিভার্সিটি এলাকা। গোটা শহর আলোড়িত। মাংসের স্টলের কর্মচারীরা তারই মধ্যে ঘুমোয় কী করে? অতি পরিশ্রম যারা করে না তাদের পক্ষে এমন পরিস্থিতি কল্পনা প্রায় অসম্ভব।
তারা ঘুমিয়ে ছিল।
মাংসের স্টলে সাজশয্যা আর কী থাকতে পারে? অনেকে তেলচিটে দাগ-ধরা বালিশের মালিক। অনেকের তা-ও নেই। ইটের ওপর কিছু ছেঁড়া কাঁথার সামান্য টুকরো বিছিয়ে নিলেই চলে যায়। বালিশ ছাড়া, শুধু বাহু-বালিশেও বহুজন নিশ্চিন্ত ঘুমায়। এই আর এক আলাদা জগৎ।
দুপুর রাত্রে মিরপুর রোড ধরে হঠাৎ হঠাৎ মিলিটারি জিপ শাঁ শাঁ শব্দে বেরিয়ে যায়। কখনও এসে নিউ মার্কেটের সামনে থামে। আবার স্টার্টের শব্দ। প্রেতায়িত আবহাওয়া।
তারা নির্বিবাদ ঘুমে অথবা অর্ধচেতন স্বপ্নাচ্ছন্ন জগতের মধ্যে শব্দ শুনছিল মাত্র। আর কিছু না। কী ঘটছে, তার দায়িত্ব জাগ্রত মানুষের জন্যে।
শুয়েছিল তারা সারি সারি। স্টলের পর স্টল শায়িত মানুষের এমন প্রলম্ব মিছিল। অনেকের মনে হয়তো সেই ধারণা ধাক্কা দিয়ে গিয়েছিল যে দীন-দরিদ্রদের কেন-ই বা কেউ অনিষ্ট করবে- যারা রাজনীতি করে, তাদের যা হয় হতে পারে।
হঠাৎ কয়েকটা জিপ এসে থামল ঢাকা কলেজের সামনে। নিউ মার্কেট প্রায় ঢাকা কলেজের সম্প্রসারণ। এক অধ্যাপক রসিকতা করে বলতেন, 'কোনটা কার সম্প্রসারণ ধরা কঠিন। এক দিকে ইলেম বিক্রি হয়, অন্যদিকে মাল। আসল উৎপত্তি কোন দিকে- সেটাই আবিস্কার বা গবেষণার বিষয়।'
জিপ থেকে একদল জওয়ান নামল, হাতে স্টেনগান। টর্চের আলো ফেলে তারা একবার দেখে নিল। তারপর ব্রাশ ফায়ার। ট্ট-ট্ট-ট্ট-শ্ শ্ শ্ শ্...।
আগ্নেয়াস্ত্রের শব্দ হেঁকে গেল, 'হে ঢাকা শহরের খরিদ্দারগণ, এসো বাজারে এসো, কাল সকালে। নতুন মাল আমদানি হয়েছে। এমন সুযোগ আর কোনো দেশে কোনো কালে পাওয়া যাবে না। সুযোগ হারিও না। সারাজীবন আফসোস করে মরবে। অপূর্ব এ মালের স্বাদ। পৃথিবীর আর কোথাও তৈরি হয় না।
মেড ইন পাকিস্তান। শুধু পাকিস্তানে নির্মিত হয়, আর কোথাও না। পাকিস্তান ইসলামী রাষ্ট্র। এসো, কাল সকালে এসো। বড় থলি নিয়ে এসো। এখানে বিক্রি হবে খুব ভোর থেকেই মানুষের গোস্তের সঙ্গে মেশানো গরুর গোস্ত, খাসির গোস্ত। অপূর্ব তার স্বাদ। অপূর্ব এই পাঞ্চ বা মিশ্রণ। আদম-গোস্ত-গাওয়া-গোস্ত প্রসেস্ড ইন ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান...।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com