উচ্চ আদালতের ছুটি সমন্বয়

প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২০ । ২৩:০১ | প্রিন্ট সংস্করণ

দেলাওয়ার জাহান

করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত পৃথিবী। বাংলাদেশও ঝুঁকির বাইরে নয়। সরকার ঘোষিত ১০ দিনের ছুটি কার্যত আগামী ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ছুটি বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, 'আমরা যদি খুলতে চাই, যে কোনো সময় খুলে দিতে পারব। এখন থেকে যদি না বলি, মানুষ প্রস্তুতি নিতে পারবে না। স্রোতের মতো মানুষ চলে আসবে। তারপর আবার কী পরিস্থিতি হয় বলতে পারি না। তারপরও সব আটকাব না। কিছু কিছু জায়গা খুলে দেব। যেগুলো খুব জরুরি প্রয়োজন, সেগুলো চালু থাকবে।' প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগের কারণটি যথার্থ বলেই

মনে করি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃত্যু মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও ধারণা করছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। ঢাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহজ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক মাইকেল জে রায়ান সম্প্রতি বলেছেন, 'বিশাল ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোয় কী ঘটছে, তার ওপর নির্ভর করবে এই মহামারির ভবিষ্যৎ।' পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশে বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে যাদের তারা ঘরে থাকতে চান না। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ফেরা প্রবাসীরা তথ্য গোপন করছেন, যা অন্যদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। হাসপাতালগুলোয় করোনা শনাক্ত করার জন্য জরুরি সরঞ্জামাদির অভাব রয়েছে আমাদের। চিকিৎসার অপ্রতুলতাও অবিদিত নয়। এ অবস্থায় ঘরে থাকার বিকল্প নেই।

একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। দূরদূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন উচ্চ আদালতে এসে থাকেন। তাদের বড় অংশ আগাম জামিনের জন্য একদিন, দু'দিন বা ততোধিক দিন আদালত চলাকালে অপেক্ষা করেন। এ ছাড়া নিয়মিত মামলার তদবিরে আসেন অসংখ্য মানুষ। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীর সংখ্যাও আট হাজারের অধিক। এ ছাড়া কোর্টের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বিচারকক্ষের আয়তন বিবেচনায় আইনজীবীদের আসন সংকটের কারণে গাদাগাদি করে বসতে হয়। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আদালতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। যদি আগামী ১১ এপ্রিল ছুটি শেষ হয় তাহলে এ মাসে আরও তিন সপ্তাহ আদালত খোলা থাকবে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে। পবিত্র ঈদুল ফিতর ও অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে সর্বোচ্চ আদালত আগামী ১৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত ছুটি থাকবে। অর্থাৎ মে মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ আদালত খোলা পাচ্ছি। এদিকে পুরো সেপ্টেম্বর মাস উচ্চ আদালতের নির্ধারিত অবকাশ রয়েছে। এ অবস্থায় আদালতের নির্ধারিত অবকাশ তথা সেপ্টেম্বর মাসে আদালত খোলা রাখার শর্তে আগামী ঈদুল ফিতর পর্যন্ত উচ্চ আদালত বন্ধ রাখার বিষয়টি বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। অবকাশকালীন সময়ে যেমন কয়েকটি বেঞ্চ থাকে, সে রকম কয়েকটি বেঞ্চ এ সময় থাকতে পারে। ছুটি সমন্বয় হলে মামলাজট বাড়ার আশঙ্কাও থাকবে না। ফলে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ সময়টিতে আমরা সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করার সুযোগ পাব। এতে করে আইনের আশ্রয়প্রার্থী থেকে শুরু করে বিচারক ও আইনজীবীদের কল্যাণ নিশ্চিত হবে বলে মনে করি। ততদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়।
 
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com