
করোনা গ্রাস থেকে ঘুরে দাঁড়াতে চায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০ । ১৮:৫৮ | আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০ । ১৯:২০
রঞ্জু চৌধুরী ও হাসান শাওন

সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগকালে দেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃত্বে থাকা কয়েকটি ব্র্যান্ডের কর্ণধারের সঙ্গে কথা বলেছেন ফ্লোরিডা এস রোজারিও। সাম্প্রতিক দুরবস্থা, সরকারের কাছে দাবি ও শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ।
রবিঠাকুরের বৈশাখের গান এখন যেন সবার হৃদয়ের আকুতি- 'অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা। ...' এই করোনাকালে উপদ্রুত মানুষ বাঁচতে চায়। ফিরতে চায় কাজে, আনন্দে। পেতে চায় জীবনের আনন্দ। উৎসবে সবার সঙ্গে মিলেমিশে। কিন্তু এবার কভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণে বাতিল হয়েছে বাঙালির প্রাণে উৎসব পহেলা বৈশাখ। অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে ঈদ উৎসব পালন নিয়েও। আর সবকিছুর মতো এর প্রভাব পড়েছে দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতেও।স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের শ্রম, মেধা ও নিষ্ঠায় অনেকটাই অগোচরে দেশে পোশাক শিল্প স্বতন্ত্র একটি শিল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। এই শিল্পের বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৫,০০০ প্রতিষ্ঠান। পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভরশীল।সম্প্রতি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করায় এই শিল্পে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। ইন্ডাস্ট্রি সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, মার্চ মাসের শুরু থেকে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় পোশাক বেচাকেনা শ্নথ হয়ে এরই মধ্যে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। আর মার্চের শেষে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার ফলে বৈশাখী পোশাক বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হবে দেশের পোশাক শিল্প খাত।তারা আরও জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতা, বোনাস এবং প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে যার পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক শিল্পে যুক্ত প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারের কাছে বিনা সুদে এক বছরের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের জন্য দাবি জানিয়েছেন তারা।উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই শিল্পে শতকরা ৮০ জন নারী উদ্যোক্তা এবং নারীকর্মী নিয়োজিত। যারা গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষভাবে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। এই পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে ঈদের বেচাকেনাও হারাতে বসবে এই শিল্প খাত।
ফ্যাশন উদ্যোগ ও ফ্যাশন এন্টারপ্রেনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি শাহীন আহম্মেদ মনে করেন, সরকারের যথাযথ উদ্যোগই কেবল এই শিল্পকে এবং এ শিল্প-সংশ্নিষ্ট মানুষগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে।তিনি বলেন, অনেক দুঃসময়ই আমরা একত্রে পার করেছি। আশা করা যায়, সরকার ও ফ্যাশন সংশ্নিষ্ট সবার সক্রিয়তা এবারও ঘুরে দাঁড়াবে এ শিল্প। তাই জীবাণুযুদ্ধের আমরা যেমন লড়ছি, অর্থনৈতিক যুদ্ধেও আমাদের জিততে হবে। তিলে তিলে গড়ে ওঠা দেশের বুটিক শিল্প এখন একটি বড় শিল্পে পরিণত হয়েছে। এই মহিরূহ বৃক্ষকে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা সম্ভব।
শিল্পীদের মজুরি হিসেবে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাই: আজহারুল হক আজাদ, কর্ণধার, সাদাকালো
প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতা, বোনাস এবং প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি প্রদানের ক্ষেত্রে এখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে যার পরিমাণ ১৫০০ কোটি টাকা। এ পরিস্থিতিতে দেশের পোশাক শিল্পে যুক্ত প্রান্তিক কারুশিল্পী ও বয়নশিল্পীদের কাজের মজুরি এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনা সুদে এক বছরের জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
সেই সঙ্গে চাচ্ছি, উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণের কিস্তি নূ্যনতম ছয় মাস স্থগিত করা। উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণের ওপর আরোপিত সুদ নূ্যনতম ছয় মাস স্থগিত করা এবং চক্রবৃদ্ধিহারে তা পরে ধার্য না করা।
আমরা আরও চাই মহামারিকালে বাণিজ্যিক স্থাপনা যেমন- দোকান, অফিস ও কারখানার ভাড়া বিষয়ে আর্থিক সহায়তা প্রদান বা কোনো নীতিমালার মাধ্যমে ভাড়া কমানোর ব্যবস্থা করা। আমরা চাই বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিল নূ্যনতম ছয় মাসের জন্য মওকুফ করা হোক। দোকান, অফিস এবং কারখানার ভাড়ার ওপর ভ্যাট মওকুফ করা হোক। মহামারি-পরবর্তী সময়ে পুনরায় কাজ শুরু করার জন্য খুব সহজ শর্তে চলতি মূলধন জোগানের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা।মহামারি-উত্তর সময়ে দেশের পোশাক ও কারুশিল্পের পুনর্জাগরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সর্বক্ষেত্রে দেশীয় ও কারুশিল্পের পোশাক ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
২৩ মার্চ থেকে উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রেখেছি: খালিদ মাহমুদ খান. কে-ক্রাফট
এখনও দেশীয় পোশাকের বাজার অনেক বেশি মাত্রায় বৈশাখ ও ঈদের কেনাকাটানির্ভর। এ বছর বৈশাখ ও ঈদ উৎসব অল্প সময়ের ব্যবধানে হওয়াতে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দুটো উৎসবের পণ্য তৈরির জন্য বিনিয়োগ, প্রস্তুতি ও উৎপাদন সমান্তরালে এগিয়ে নিয়ে চলছিল। বর্তমান বাস্তবতায় বৈশাখের আনন্দ-উৎসব ঘরের মাঝে অন্তরীণ থেকেই সম্পন্ন হবে। যৌক্তিকভাবেই সব বিপণিকেন্দ্র বন্ধ। ঈদের বাজার পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ অনিশ্চিত।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রায় প্রতিটি দেশীয় পোশাক ডিজাইন, উৎপাদনকারী, বিক্রেতা ও প্রতিষ্ঠান তাদের সারা বছরের বাণিজ্যের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বিক্রি থেকে বঞ্চিত হবেন। নিশ্চিতভাবেই কোনো লাভ তো হবেই না, লাখ লাখ উদ্যোক্তা তাদের সর্বস্ব বিনিয়োগকৃত পুঁজি এবার ফেরত পাবেন না। ফলে মহামারি-পরবর্তী সময়ে দেশীয় পোশাক সেক্টরে এর একটি দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে।
এই সময়ে আমরা ক্রেতাদের অনুরোধে সীমিত মাত্রায় অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছি। একক কোনো উদ্যোগ এ ক্ষতি মোকাবিলায় কার্যকরী সমাধান দেবে না। নানা রকম চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে আমাদের সামনে পথ পাড়ি দিতে হবে। যেমন- এ ব্যবসায় যুক্ত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আগামী দু-তিন বছর টিকে থাকা। বেতন, ভাড়া, বিল, ঋণ কিস্তি ও সুদ ধারাবাহিকভাবে প্রদান করতে পারা, ক্রেতা, পৃষ্ঠপোষক ও কর্মীদের আস্থায় রাখা, দক্ষ কর্মীদের যথাযথ মর্যাদায় সঙ্গে রাখতে পারা, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত কারুশিল্পী, বয়নশিল্পী, সূচিকর্ম শিল্পীদের নিয়মিত কাজ দিতে পারা, ভেন্ডরস, সাপ্লাইয়ার্স, অর্থলগ্নিকারী ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সুসম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখা, উদ্যোক্তা, কর্মী ও প্রতিষ্ঠানের অ্যাফিসিয়েন্সি এবং মাল্টিটাস্কিং স্কিল বাড়ানো। একই সঙ্গে বিকল্প পণ্য ও বাজার তৈরি।সরকার ইতোমধ্যে বিনিয়োগ সহযোগিতামূলক বেশকিছু আশাজাগানিয়া উদ্যোগ নিয়েছে। এই উদ্যোগগুলো সঠিকভাবে, সহজ উপায়ে সত্যিকারের উৎপাদনকারীর কাছে পৌঁছে দেওয়া গেলে আমাদের দেশের পোশাক উৎপাদনকারীরা উপকৃত হবেন।এ ছাড়া রিটেল ইন্ডাস্ট্রির জন্য আরও কিছু উদ্যোগ সময়ের দাবি। যেমন বাণিজ্যিক ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আগামী কয়েক বছর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, বাণিজ্যিক ভাড়ার ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, দু-তিন বছর ফ্ল্যাট রেটে উৎপাদন ও বাণিজ্যিক ইউটিলিটি বিল নির্ধারণ।
এ ছাড়া রাষ্ট্রীয়, প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত- সর্বস্তরে কেনাকাটায় দেশীয় পোশাক ব্যবহারের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছি।
আগামী দুটি বছর বাংলাদেশের প্রতিটি সচেতন মানুষ যদি দেশীয় পোশাক শিল্পকে সমর্থন দেন, তাহলে আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিশ্চয়ই ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবো।আমাদের ঈদের প্রস্তুতি ভালোভাবেই এগিয়ে ছিল। কর্মীদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা ২৩ মার্চ থেকে উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ রেখেছি। আশা করি, অবস্থা স্বাভাবিক হলে যেসব পণ্য অসম্পূর্ণ রয়েছে, সেগুলো দ্রুত প্রস্তুত করা যাবে।আমাদের দেশীয় পোশাক শিল্প অনেক বেশি মাত্রায় অলঙ্করণনির্ভর। ফলে একটি পোশাকে নানাজনের সৃজনশীলতা, শ্রম ও নিখুঁত কারুকাজে একটি পণ্য উৎপাদিত হয়ে ক্রেতা সন্তুষ্টির জন্য উপস্থাপিত হয়ে থাকে।
ক্রেতারাই আমাদের সব অনুপ্রেরণার উৎস। একটি দেশীয় পোশাক কিনে আপনি আমাদের দেশের জন্য ভালো একটা কাজ করছেন। আপনার সহযোগিতা ও সমর্থনে অগণিত নারী-পুরুষ তাদের বিশেষ কারুশিল্পগুণকে একটি পণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। আমাদের সব ক্রেতাকে আগামী দুটি বছর দেশীয় পোশাককে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের জন্য বিশেষ অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রডাকশন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে: লিপি খন্দকার
আমার মতে, করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের দেশীয় পোশাক শিল্পের ব্যবসার সামগ্রিক ক্ষতি প্রায় দু-তিন হাজার কোটি টাকা। এখানেই ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি সব প্রতিষ্ঠানই এর অন্তর্ভুক্ত। আমাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে বৈশাখ এবং দুই ঈদ। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে সব পুঁজি বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। এই ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের আকার অনুযায়ী প্রত্যেকেই ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র, মাঝারি আর বড় আকারের লোন নিয়ে থাকেন এই উৎসবকে কেন্দ্র করে। মূলত এ ব্যবসা করেই সব প্রডিউসার, বকেয়া বিল পরিশোধ এবং অন্যান্য বিল পরিশোধ করা হয়। এখন সবকিছু বন্ধ থাকায় দোকান ভাড়া এবং আনুষঙ্গিক, কর্মচারীদের বেতন-বোনাস, কারিগরদের পারিশ্রমিক, ব্যাংক লোন পরিশোধ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। ব্যবসা চলমান না থাকলে আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেন, কোনো এক সময় তারাও কর্মহীন হয়ে পড়বে। আমাদের ব্যবসা না থাকলে তাদেরও আর আমরা কাজ দিতে অক্ষম হবো। এতে করে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে। আমাদের দেশে প্রায় ৫০ হাজার বুটিক আছে এবং তার সঙ্গে জড়িত আছে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এবং এর ৬০ ভাগ নারী। এভাবে আর এক মাস চললেও বন্ধ হয়ে যেতে পারে অনেক প্রতিষ্ঠান।লকডাউন অবস্থায় কোনোভাবেই আমাদের ব্যবসা করা সম্ভব নয়। বেচাকেনা না হলে সব পণ্য স্টক হয়ে যাবে বিশেষ করে বৈশাখের। এগুলো পরে বিক্রি করা খুবই কঠিন। তাই এখন পর্যন্ত আসলে ধারণা নেই বা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি কীভাবে এর মোকাবিলা করব। সরকারের কাছ থেকে আমরা অবশ্যই আশা করব, এই সেক্টরটির দিকে যেন দৃষ্টি দেয়। আমরা চাই এক থেকে ছয় মাস পর্যন্ত ঋণের সুদ মওকুফ করা এবং ২-৩ শতাংশ সুদে এ ঋণ দেওয়া পরবর্তী প্রডাকশন করার জন্য। ট্যাপ মওকুফ করা। দোকান ভাড়ার ওপর ইনসেনটিভ দেওয়া এবং সবাই যেন এই ঋণ সহজভাবে পায়।
আর একটা বিষয়ে বিশেষ নজর দেীয়া খুবই প্রয়োজন তা হলো, ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান থেকে পোশাক আনা বন্ধ করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের দেশীয় পোশাকের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশের এই ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান, আর দেশীয় এই পোশাক শিল্পের পুনর্জাগরণ সম্ভব হবে। অন্যথায় এই ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়বে। এই বিষয়টা সবচাইতে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে সরকারকে।
আমাদের অনেকাংশে প্রডাকশন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে সব কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে সবার সুরক্ষার জন্য। এখানেও অনেক কাঁচামালের বিশাল স্টক হয়ে যাবে। অনেকটা প্রস্তুতি থাকার পরও কিন্তু এই অনিশ্চিত দুর্যোগে আমরা কেউ বলতে পারি না এবার ঈদের ব্যবসাও হবে কিনা এবং সবার পাওনা টাকা পরিশোধ হবে কীভাবে?
ক্রেতাদের উদ্দেশে একটা কথাই বলতে পারি যে, এই দুর্যোগ থেকে আমরা মুক্তি পেলে সবাই আমরা যেন দেশকে ভালোবেসে এই দেশীয় পোশাক শিল্পের উন্নয়নের কথা ভেবে সবাই যেন দেশীয় পোশাক কেনে। তাতে অনেক পরিবারের কর্মসংস্থান হবে, বেঁচে যাবে যারা এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিষ্ঠানগুলো বেঁচে যাবে।
কবে নাগাদ উৎপাদনে যেতে পারব তার নিশ্চয়তাও নেই: কনক আদিত্য, কর্ণধার, দেশাল
নববর্ষ এবং ঈদ মৌসুমে আমাদের সারা বছরের মোট বিক্রয়ের ৬০-৭০% বিক্রি হয়, যা সারা বছর চলার রসদ জোগায়। মহামারির কবলে আগামী কয়েক বছরেও এই ক্ষতি পোষানো যাবে না। আসলে প্রতিষ্ঠান নতুন করে দাঁড়াতে পারবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। আমাদের সঙ্গে ফ্যাশন উদ্যোগের আলাপ হয়েছে। সম্মিলিত কোনো প্রক্রিয়া ও ব্যবস্থাপনায় হয়তো শিল্পটিকে রক্ষা করতে পারে। এ সময় শুধু অনলাইন বেচাকেনার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি।
ফ্যাশন উদ্যোক্তাদের সংগঠন 'ফ্যাশন উদ্যোগ' এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রহণ ও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা নিয়ে। আশা করি, সরকার নানাভাবে আমাদের সহায়তা করবে।
প্রতি বছরের মতোই এবারও ঈদ নিয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু করোনার ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা বন্ধ রেখেছি। সব ধরনের উৎপাদন বন্ধ। কবে নাগাদ উৎপাদনে যেতে পারব তার নিশ্চয়তাও নেই। কাজেই ঈদ মৌসুমটাতেও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে বুটিক শিল্প।এ মুহূর্তে সবাইকে ঘরে থাকার অনুরোধ করছি। সুস্থ থাকলে আমরা সবাই মিলে আবার এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারব। একটাই অনুরোধ, এখন ঘরে থাকুন সবাই।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com