করোনার প্রভাব

আশা-নিরাশার দোলাচলে হালদাপাড়ের জেলেরা

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম

নদী থেকে মা মাছের ডিম আহরণের পর রেণু ফুটানোর জন্য তৈরি কুয়া - ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বন্ধ রয়েছে কলকারখানা। কমেছে নদীদূষণ। অন্যান্য বছরের তুলনায় মা মাছও মারা গেছে কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে হালদা। ফলে এবার রেকর্ড পরিমাণ কার্প জাতীয় মাছের ডিম আহরণের প্রত্যাশা করছেন দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদাপাড়ের জেলেরা। তবে দেশব্যাপী যানবাহন চলাচল বন্ধ ও হাটহাজারী উপজেলা লকডাউন থাকায় মাছের রেণু বিক্রি হওয়া নিয়ে আশঙ্কাও রয়েছে। রেণু সংগ্রহে আসা ক্রেতাদের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

প্রতিনিয়ত দখল ও দূষণের কারণে হালদায় মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে কমে আসছিল। তবে গত কয়েক বছর স্থানীয় প্রশাসনের কিছু উদ্যোগের কারণে মা মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। এবার নিকট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা করছেন জেলেরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মনজরুল কিবরিয়া বলেন, 'হালদা নদীদূষণের দায়ে ইতোমধ্যে এশিয়ান পেপার মিল ও হাটহাজারী পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ছুটির কারণে নগরের অক্সিজেন ও কুলগাঁও এলাকার অনেক কারখানাও বন্ধ। এসব শিল্পের বর্জ্য খালের পথ বেয়ে হালদায় পড়ত। ফলে দূষণ অনেক কমেছে। এছাড়া প্রশাসনের নজরদারির কারণে বালু উত্তোলনের ড্রেজার চলাচল এবং উজানে তামাক চাষও ৭০ শতাংশ বন্ধ হয়েছে। এ বছর মা মাছও তেমন মারা যায়নি। সব মিলিয়ে গত ২০ বছরের মধ্যে এবার হালদা নদী সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বলা যায়। পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলে গতবারের চেয়ে বেশি ডিম পাওয়া যাবে।' প্রতি বছর মার্চ থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন হালদাপাড়ের জেলেরা। মৌসুমের প্রথম বৃষ্টির পরেই ডিম ছাড়ার প্রহর গোনা শুরু হয়। এ সময় ডিঙি নৌকা নিয়ে নদীতে চক্কর দিতে থাকেন জেলেরা। ডিম ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে নৌকা ও জাল নিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। ডিম সংগ্রহ করে কুয়া (অগভীর পুকুর) ও হ্যাচারিতে রাখা হয়। পরিচর্যার পর ডিম থেকে রেণু ফুটলেই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। হালদা নদীর চট্টগ্রামের রাউজান ও হাটহাজারী উপজেলা অংশে আজিমের ঘোনা, অংকুরি ঘোনা, রামদাশ মুন্সীর ঘাট, সত্তার ঘাট, মাছুয়া ঘোনা, মাদার্শা, কাগতিয়া, গড়দুয়ারাসহ বিভিন্ন অংশ থেকে ডিম সংগ্রহ করেন জেলেরা। ডিম থেকে রেণু ফুটাতে দুই উপজেলার পাঁচটি সরকারি হ্যাচারির ১৬৭টি কুয়া প্রস্তুত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। পাশাপাশি আরও শতাধিক কুয়া (অগভীর পুকুর) প্রস্তুত করেছেন জেলেরা। ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, রেণু ও পোনা কিনতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, যশোর, রাজশাহী, বরিশাল, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্তত ১৭ জেলার লোকজন এখানে আসেন।

হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার ডিম আহরণকারী কামাল উদ্দিন বলেন, 'এবার নদীতে মা মাছের আনাগোনা বেশি দেখা যাচ্ছে। ভারি বৃষ্টি হলেই ডিম ছাড়তে পারে। ডিম সংগ্রহ করতে সবাই প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে ডিম সংগ্রহের সময় যারা সহযোগিতা করেন, তারা বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসেন। তারা আসতে না পারলে ডিম সংগ্রহ কষ্টকর হয়ে যাবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যে ক্রেতারা আসেন, তারা না এলে তো পোনা বিক্রি হবে না।'

হাটহাজারী ইউএনও রুহুল আমিন বলেন, 'রেণু সংগ্রহে আসা ক্রেতাদের আসা-যাওয়ায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। কেউ যোগাযোগ করলেই তাদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে। আর রেণু সংগ্রহকারী, ক্রেতাসহ সংশ্নিষ্ট সবার জন্য হালদা কার্ড করা হয়েছে। এই কার্ড নিয়ে তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় রেণু নিয়ে যেতে পারবেন।' এছাড়া মা মাছ রক্ষায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com