
যেভাবে সামাজিক দূরত্ব নিয়ন্ত্রণ করেছে উহান
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০ । ১৭:৫৯
অনলাইন ডেস্ক

লকডাউনেই সুফল মিলেছে। করোভাইরাসের উৎসভূমি চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে এ পথেই। ঘরে বন্দি হয়ে পড়া মানুষকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দিয়েছে করোনা। তবে এর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত প্রবীণ মানুষদের মনে করিয়ে দিয়েছে অনেক বছর আগের এক সময়ের কথা।
৭৫ বছর বয়সী জিয়াং হং এ বিষয়টিকে তুলনা করেছেন মাও সে তুংয়ের সময়কালের ঘটনার সঙ্গে। তিনি বলেন, করেনাা পরিস্থিতি আমাদের ৬০এর দশকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তুমি সবকিছুই পাচ্ছো; তবে পছন্দের ক্ষমতা তোমার নেই।
জিয়াং বলেন, তখন উচ্চস্বরে বার্তা পৌঁছে দেওয়া হতো। তবে ২০২০ সালে এসে এর পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে স্মার্টফোন। খাবার কেনার জন্য কুপনও আর ব্যবহার করছে না জনসাধারণ।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট বলছে, করোনার সংকটে পড়ে এই অবস্থায় অন্য বয়ষ্ক বাসিন্দাদের মতো জিয়াংকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাপ উইচ্যাটে অভ্যস্ত হতে হয়। তার সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অ্যাপের একটি গ্রুপ খোলা হয়। সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সব কিছু। এই কমিউনিটি ‘সেলে’র মাধ্যমে সরকারের বার্তা তাদের কাছে পৌঁছায়। এর মাধ্যমেই প্রতিবেশিরা নজরদারি কিংবা সামাজিক ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্ত হন।
লকডাউনের এই অবস্থার সঙ্গে মাও সে তুংয়ের সময়কার তুলনা করে সার্বিক ব্যবস্থাকে 'অধিকতর শহুরে উন্নত পরিবার' ব্যবস্থাপনার সঙ্গে তুলনা করেছেন ইস্ট্যার্নফোর্ড ইউনিভার্সিটির যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার সহকারী অধ্যাপক জেনিফার প্যান।
তিনি বলেন, চীনেই এটি সম্ভব; কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে এই দেশ স্বৈরতান্ত্রিক। অন্যথায় এই ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন হয়ে যেত।
গত জানুয়ারির ২৩ তারিখ থেকে উহানে অন্য লক্ষাধিক পরিবারের মতো জিয়াংয়ের পরিবারও কার্যত বন্দি। এই অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘জলরোধী নজরদারি’। তিনি যে কমিউনিটিতে থাকেন সেখানে এমন কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি জানান, লকডাউন ঘোষণার পর অন্যদের মতো তাদের অ্যাপার্টমেন্টও সিল করে দেওয়া হয়েছে। আর খুব প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ার উপায় নেই। একটি মাত্র গেট রাখা হয়েছে; যেখান দিয়ে প্রবেশ ও বের হতে নিরাপত্তাপ্রহরীর সামনে পড়তে হয়।
করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর উহানে লকডাউন তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যেও জিয়াং যে এলাকায় থাকেন ওই কমিউনিটিতে ব্যাপন নিরাপত্তা এখনও বহাল রয়েছে। বাসা থেকে বের হতে বা বাইরে যাওয়ার সময় এসব মেনে চলতে হয় তাদের। শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণও বাধ্যতামূলক রয়েছে।
লকডাউন ঘোষণার পর উদ্বেগ বাড়তে থাকে মানুষের মধ্যে। তখন আসলে কেউই জানত না; কি হতে যাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে। লকডাউন পরিস্থিতিতে ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি উহানে আরও জনবল পাঠায় কর্তৃপক্ষ। এরপর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে।
তখন উহানের কমিউনিস্ট পর্টির নেতা করোনায় আক্রান্তদের খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন। এরপর তাদের আইসোলেশনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের যৌথ প্রচেষ্টা কাজে দিতে শুরু করে। এরপরই পরিস্থিতি্র উন্নয়ন ঘটে।
গত ১৭ মার্চের পর উহানে নিজ দেশের মধ্যে আর সংক্রমণ নেই বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। তবে এই সময়ের পর অন্যদেশ থেকে সেখানে প্রবেশ করা ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।
করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর উহানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হিসেবে ব্যবহার হয়েছে লকডাউন। এই লকডাউন ব্যবস্থা এখন বিশ্বের অন্য দেশেও ব্যবহার করা হচ্ছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com