
অপ্রতুল চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ
ভেজা বারুদ নিয়ে যুদ্ধযাত্রা!
প্রকাশ: ০৭ মে ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়
হাসপাতালে হাসপাতালে চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ সংকটে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা সংকটের মুখে পড়েছে- বুধবার সমকালে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনের এমন ভাষ্য আমাদের প্রবাদেও সেই যুদ্ধক্ষেত্রের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। সেখানে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার জন্য সেনাপতি যে শতাধিক কারণ ব্যাখ্যা করতে যান, তার প্রথমটিই হচ্ছে বারুদ ভেজা ছিল। এরপর আর বাকি কারণ শোনার প্রয়োজন পড়ে না। সন্দেহ নেই যে, করোনাভাইরাস চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য যুদ্ধ পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছে। আর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা ব্যবস্থা যদি সংকটে থাকে, তাহলে তা বারুদ ভেজা থাকারই নামান্তর। বস্তুত ডাক্তাররা যদি চিকিৎসা ব্যবস্থার মস্তিস্ক হন, তাহলে সেবিকা বা নার্সরা হচ্ছেন চোখ-কান। আর চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ বা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের বলা যেতে পারে চিকিৎসা ব্যবস্থার হাত-পা। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ ছাড়া বর্তমান সময়ের একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা চলৎশক্তিহীন বিবেচিত হতে বাধ্য।
আমরা জানি, সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকট নতুন নয়। আমরা প্রায়শই সংবাদমাধ্যমে দেখি- ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের যত পদ রয়েছে, ততজনের পদায়ন নেই। আবার যাদের পদায়ন হয়েছে, তারাও নানা অজুহাতে মফস্বলের কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এ নিয়ে গত কয়েক বছরে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছিল যে, হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীকে একাধিকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে হয়েছে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সময়ই ঢাকার বাইরে কর্মস্থলে থাকার জন্য শর্তারোপ করতে হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি কতখানি উন্নতি হয়েছে, আমরা জানি না। চিকিৎসক অনুপস্থিতি বা অপ্রতুলতার মতো না হলেও নার্স সংকট নিয়েও মাঝে মধ্যে আলোচনা দেখা যায়। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অপ্রতুলতা যে এতটা প্রকট, আলোচ্য প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে সম্ভবত খুব বেশি নাগরিকের জানা ছিল না।
দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ছয়টি শাখা মিলিয়ে সারাদেশে চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদের পদ রয়েছে প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে কমবেশি তিন হাজার পদ খালি রয়েছে। ফলে কী পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, সমকালের প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হবিগঞ্জের চিত্র তার প্রমাণ। জেলাটিতে যেখানে ২০টি পদ রয়েছে, সেখানে কর্মরত ছিল মাত্র চারজন। তাদের মধ্যেও তিনজন নানা কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। মাত্র একজন চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ গোটা জেলার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করছেন- অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সবেধন নীলমণি এই স্বাস্থ্যকর্মী যদি কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অপরাগ হন, তাহলে কী হবে? বলা বাহুল্য, এই চিত্র কেবল হবিগঞ্জের নয়। খোঁজ নিলে আরও অনেক জেলায় এমন নাজুক পরিস্থিতি দেখা যাবে। আমাদের প্রশ্ন- চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাজীবীদের এমন অপ্রতুলতা নিয়ে করোনা মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? কেবল করোনা চিকিৎসা নয়, অন্যান্য রোগের নমুন সংগ্রহ বা পরীক্ষারই বা কী হবে?
মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদদের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এই ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সন্দেহভাজন রোগীদের বাড়িতেই অবস্থান করতে বলা হয়। চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদরা সেখানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা করেন। পুরো প্রক্রিয়া সময়, শ্রম ও অধ্যবসায় সাপেক্ষ। এই পেশায় নারীর সংখ্যাও কম নয়, তাদের পক্ষে রোগীর বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এর ওপর যদি সংখ্যাস্বল্পতা থাকে, তাহলে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে কীভাবে? চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদদের মানবিক দিকটিও বিবেচনাযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, করোনা রোগীর সংস্পর্শে এলে যেখানে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গনিরোধে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তাদের দায়িত্বই করোনা রোগীর কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ। নিছক বদলি সহকর্মী নেই বলে তারা প্রয়োজনীয় সঙ্গনিরোধেও যেতে পারে না। এভাবে চলতে পারে না। যদি চালানোর চেষ্টা করাও হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
আমরা মনে করি, ভেজা বারুদ নিয়ে এই যুদ্ধযাত্রা বন্ধ করতেই হবে। অবিলম্বে পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ দিতে হবে। কেবল শূন্যপদে নিয়োগ নয়; পদের সংখ্যাও বাড়ানো জরুরি। মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোতে ভাইরাসজনিত রোগের সংখ্যা ও পরম্পরা আরও বাড়বে। তখন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন হবে আরো বাড়তি জনবল। এখন থেকে তার প্রস্তুতি না রাখলে যুদ্ধক্ষেত্রে কেবল বিপর্যয়ই অপেক্ষা করে থাকবে।
আমরা জানি, সরকারি হাসপাতালগুলোতে জনবল সংকট নতুন নয়। আমরা প্রায়শই সংবাদমাধ্যমে দেখি- ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকের যত পদ রয়েছে, ততজনের পদায়ন নেই। আবার যাদের পদায়ন হয়েছে, তারাও নানা অজুহাতে মফস্বলের কর্মস্থলে অনুপস্থিত। এ নিয়ে গত কয়েক বছরে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর আকার ধারণ করেছিল যে, হাসপাতালে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহীকে একাধিকবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে হয়েছে। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার সময়ই ঢাকার বাইরে কর্মস্থলে থাকার জন্য শর্তারোপ করতে হয়েছে। তারপরও পরিস্থিতি কতখানি উন্নতি হয়েছে, আমরা জানি না। চিকিৎসক অনুপস্থিতি বা অপ্রতুলতার মতো না হলেও নার্স সংকট নিয়েও মাঝে মধ্যে আলোচনা দেখা যায়। কিন্তু বিভিন্ন হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অপ্রতুলতা যে এতটা প্রকট, আলোচ্য প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে সম্ভবত খুব বেশি নাগরিকের জানা ছিল না।
দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ছয়টি শাখা মিলিয়ে সারাদেশে চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদের পদ রয়েছে প্রায় আট হাজার। এর মধ্যে কমবেশি তিন হাজার পদ খালি রয়েছে। ফলে কী পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে, সমকালের প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হবিগঞ্জের চিত্র তার প্রমাণ। জেলাটিতে যেখানে ২০টি পদ রয়েছে, সেখানে কর্মরত ছিল মাত্র চারজন। তাদের মধ্যেও তিনজন নানা কারণে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। মাত্র একজন চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ গোটা জেলার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করছেন- অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। সবেধন নীলমণি এই স্বাস্থ্যকর্মী যদি কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে অপরাগ হন, তাহলে কী হবে? বলা বাহুল্য, এই চিত্র কেবল হবিগঞ্জের নয়। খোঁজ নিলে আরও অনেক জেলায় এমন নাজুক পরিস্থিতি দেখা যাবে। আমাদের প্রশ্ন- চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাজীবীদের এমন অপ্রতুলতা নিয়ে করোনা মোকাবিলা কীভাবে সম্ভব? কেবল করোনা চিকিৎসা নয়, অন্যান্য রোগের নমুন সংগ্রহ বা পরীক্ষারই বা কী হবে?
মনে রাখতে হবে, করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদদের প্রয়োজনীয়তা ও প্রাসঙ্গিতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। এই ভাইরাস সংক্রমণ ও বিস্তার রোধে সন্দেহভাজন রোগীদের বাড়িতেই অবস্থান করতে বলা হয়। চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদরা সেখানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে এনে পরীক্ষা করেন। পুরো প্রক্রিয়া সময়, শ্রম ও অধ্যবসায় সাপেক্ষ। এই পেশায় নারীর সংখ্যাও কম নয়, তাদের পক্ষে রোগীর বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাড়তি চ্যালেঞ্জ। এর ওপর যদি সংখ্যাস্বল্পতা থাকে, তাহলে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা কাঙ্ক্ষিত গতি পাবে কীভাবে? চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদদের মানবিক দিকটিও বিবেচনাযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, করোনা রোগীর সংস্পর্শে এলে যেখানে অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গনিরোধে পাঠানো হচ্ছে, সেখানে তাদের দায়িত্বই করোনা রোগীর কাছে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ। নিছক বদলি সহকর্মী নেই বলে তারা প্রয়োজনীয় সঙ্গনিরোধেও যেতে পারে না। এভাবে চলতে পারে না। যদি চালানোর চেষ্টা করাও হয়, চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
আমরা মনে করি, ভেজা বারুদ নিয়ে এই যুদ্ধযাত্রা বন্ধ করতেই হবে। অবিলম্বে পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ নিয়োগ দিতে হবে। কেবল শূন্যপদে নিয়োগ নয়; পদের সংখ্যাও বাড়ানো জরুরি। মনে রাখতে হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনগুলোতে ভাইরাসজনিত রোগের সংখ্যা ও পরম্পরা আরও বাড়বে। তখন নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন হবে আরো বাড়তি জনবল। এখন থেকে তার প্রস্তুতি না রাখলে যুদ্ধক্ষেত্রে কেবল বিপর্যয়ই অপেক্ষা করে থাকবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com