ধুনটে সরকারি ধান কাটা মেশিন ক্রয় ও বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ

প্রকাশ: ০৭ মে ২০ । ১৫:৩৮

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

বগুড়ার ধুনটে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে সরকারি ভর্তুকির ধান কাটা মেশিন কেনা ও বিতরণে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি অর্থ লুটপাট করতে কাগজপত্র বানিয়ে পুরাতন মেশিন নতুন করে বিতরণ দেখিয়েছে ওই কমিটি। এ পরিস্থিতিতে উপজেলায় এ প্রকল্পের সুফল মিলবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। মাঠের পাকা ধান ঘরে তুলতে ভোগান্তিতে পড়েছেন চাষীরাও।   

ধান কাটা মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার) ও ধান রোপন (রাইস ট্রান্সপ্লান্টার) কেনার জন্য প্রতিটি মেশিনে সরকারি ভুর্তকি হিসেবে ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। ২৮ লাখ টাকা মুল্যের এসব মেশিন ভুর্তকির মাধ্যমে পাওয়ার জন্য ধুনটের ১০টি ইউনিয়নের ২১ জন কৃষক আবেদন করেন। আবেদনগুলো যাচাই বাছাই করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়িতে পাঠানো হয়। একমাস পর গত ২৫ মার্চ অতিরিক্ত পরিচালক স্বাক্ষরিত  পত্রে উপজেলায় ৪টি ধান কাটা মেশিন ও ১টি রোপন মেশিন কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়। 

কৃষক নির্বাচন, মেশিন ক্রয় ও সময়মতো বিতরণের জন্য উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে গত ১৬ এপ্রিল উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় আবেদনকারী কৃষকদের মধ্যে থেকে  নাটাবাড়ি গ্রামের আজাহার আলীর ছেলে ফরহাদ রেজা, চিকাশী গ্রামের মন্টু আকন্দের ছেলে ছানোয়ার হোসেন, পাঁচথুপি গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল ইসলাম ও কাশিয়াহাটা গ্রামের আব্দুল আউয়ালের ছেলে আবু সামা আকন্দকে (কম্বাইন হারভেস্টার) ধান কাটা মেশিন দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়। ২১ এপ্রিল এসিআই মোটরস লি. ডেলিভারী চালানে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা এবং কমিটির সদস্য সচিব কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হকের যৌথ স্বাক্ষরে ফরহাদ রেজা, ছানোয়ার হোসেন ও আশরাফুল ইসলামের নামে তিনটি মেশিন কাগজকলমে বিতরণ দেখিয়ে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাত করার চেষ্টা করা হয়। 

প্রকৃতপক্ষে এই তিন ব্যক্তি ২০১৯ সালে এসিআই মোটরস থেকে ধানকাটা মেশিন কিস্তিতে কিনে বিভিন্ন এলাকায় ধান ও গম কাটার কাজ করেন। ধানকাটা মেশিন থাকার পরও তাদের নামে সরকারি ভুর্তকির মেশিন বিতরণের বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ৫ জন ভুক্তভোগী কৃষক উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি রাজিয়া সুলতানার কাছে একটি অভিযোগ দেন। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি টিআই এম নুরুন্নবী তারিক ধানকাটা মেশিন কেনা ও বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ জানালে ইউএনও রাজিয়া সুলতানা ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে বগুড়া জেলা প্রশাসক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়। 

এ বিষয়ে কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি ও সদস্য সচিবের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। 

কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি ইউএনও রাজিয়া সুলাতানা বলেন, কৃষি অফিসার মশিদুল হক সরকারি অর্থ লুটপাট করতে মেশিন আছে, এমন কৃষকদের নামে কাগজপত্র তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে তার স্বাক্ষর নিয়ে মেশিন বিতরণ দেখিয়েছেন। 

তবে কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে কোন কাজ করা হয়নি। প্রতারণার মাধ্যমে স্বাক্ষর নেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক বলেন, অনিয়ম হয়ে থাকলে কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি দায় এড়াতে পারেন না। তিনি কমিটির সভাপতি হয়ে তদন্তও করতে পারবেন না। 

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com