করোনার জীবনরহস্য উন্মোচন

দুর্যোগ মোকাবিলায় কাজে লাগান

প্রকাশ: ১৪ মে ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই বিশ্বব্যাপী এ নিয়ে নানা গবেষণা শুরু হয়েছে। ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিস্কারে পৃথিবীর নানা প্রান্তের গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। প্রতিষেধকের পাশাপাশি ভাইরাসটির জীবনকাল, গতিবিধি, আক্রমণের ধরন ইত্যাদি জানার জন্য প্রয়োজন হয় জিনম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য উন্মোচন করা। আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটা ভালো খবর যে, বাংলাদেশের গবেষকরা করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন এবং তার স্বীকৃতির জন্য তা জার্মানির সংশ্নিষ্ট সংস্থায় জমা দেওয়া হয়েছে। ড. সমীর কুমার সাহার নেতৃত্বাধীন শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশন (সিএইচআরএফ) ও সংশ্নিষ্ট গবেষকদের আমরা এই প্রচেষ্টায় সাধুবাদ জানাই।

এমন সময়ে করোনার জীবনরহস্য উন্মোচনের এই প্রচেষ্টার খবর আমরা দেখছি, যখন বাংলাদেশে প্রতিনিয়তই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শনাক্ত ও মৃত্যুহারে নতুন রেকর্ড হচ্ছে। বুধবার দেশে নতুন করে এগারো শতাধিক মানুষের দেহে কভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ শনাক্ত ও ১৯ জনের মৃত্যু হওয়ার খবর আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন সংবাদ সম্মেলন থেকে জানতে পারি। এ অবস্থায় করোনা আক্রান্ত রোগী কমিয়ে আনতে সুরক্ষা ও সাবধানতা যেমন প্রয়োজন, তেমনি এর চিকিৎসা পদ্ধতি জানাও কম জরুরি নয়। এক্ষেত্রে জিনম সিকোয়েন্স বা জীবনরহস্য উন্মোচন করা জরুরি বিষয় ছিল। করোনাভাইরাসের জিনম সিকোয়েন্স উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এ ধরনের জটিল গবেষণায় কেবল আমাদের সক্ষমতাই প্রমাণ হয়নি বরং এর ফলে বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ, বিস্তার, আচরণ এবং এর অভিযোজনের ধরনও জানা যাবে। এমনকি ভবিষ্যতে করোনা প্রতিরোধে যে ধরনের ভ্যাকসিন আসবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা কতটা কার্যকর, এর ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে কিনা, জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে তা সহজে নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলে সংশ্নিষ্ট গবেষকরা বলছেন। তবে আমরা মনে করি, আরও কিছু কাজ বাকি রয়ে গেছে। জার্মানির সংস্থা গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (জিআইএসএইড) হতে স্বীকৃতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ একই সঙ্গে কেবল একজনের নমুনার ওপর নির্ভর করলে আমরা পরিপূর্ণ অবস্থা জানতে পারব না। ফলে প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য আরও নমুনা প্রয়োজন। আরও ৫০ থেকে ১০০টি সিকোয়েন্স করলে বোঝা যাবে, আমাদের দেশে কোন ধরনের সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এবং তা কতটা মারাত্মক।

আমরা চাই দেশে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচনের পরবর্তী ধাপগুলো সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক। যাতে এর মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই আমরা সুফল পেতে পারি। আমরা জানি, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের কয়েকটি দেশ, চীন এবং ভারতেও ওইসব দেশের প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন করেছেন সেসব দেশের গবেষক। আমরা দেখেছি. যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ইতালিসহ যেসব দেশে করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়েছে, সেসব দেশে এর প্রকোপ কমে এলেও বাংলাদেশে উল্টো বাড়ছে। এ অবস্থায় জরুরি করণীয় হলো, দেশে সংক্রমণ কমানো। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেই হবে। ফলে লকডাউনই করোনা থেকে সুরক্ষার সর্বোত্তম উপায়। যদিও দেশে নানা কারণে শর্তসাপেক্ষে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। কিন্তু অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে করোনা প্রতিরোধে আমরা চাই লকডাউন আরও কঠোর করা হোক। কারখানা,মার্কেট, মসজিদ, বাজার সর্বত্র যে সতর্কতার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা মানা হচ্ছে কিনা নজরদারি প্রয়োজন। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই উচিত নিজের. পরিবারের ও অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ইতোমধ্যে সাধারণ ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ঈদ যেহেতু সবাইকে কর্মস্থলে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে গণপরিবহন খুলবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের যেমন যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে, এক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রস্তুতিও প্রয়োজন।

এসব নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমেই দেশে করোনার জীবনরহস্য উন্মোচনের ফল আমরা পেতে পারি। জিনোম সিকোয়েন্সিং রোগ নির্ণয়কারী কিট তৈরি সম্ভব হবে। এমনকি এর মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ ও ভ্যাকসিন তৈরি করাও অসম্ভব হবে না। এর আগে বাংলাদেশি গবেষকরা পাট, ছাগল ও মাছের জীবনরহস্য উন্মোচন করে সফলতা দেখিয়েছেন। এ ধারায় করোনাভাইরাসের জীবনরহস্য উন্মোচন আমাদের সফলতার মুকুটে আরেকটি পলক যোগ করছে। এ জীবনরহস্য উন্মোচনে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং চ্যান-জাকারবার্গ বায়োহাব ইনিশিয়েটিভ এগিয়ে আসায় তাদেরও আমরা ধন্যবাদ জানাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর ইতোমধ্যে যে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, আমরা চাই তা আরও সম্প্রসারিত করে আমাদের দুর্যোগে এর সুফল পাওয়া পর্যন্ত সব ব্যবস্থা করবে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com