থাইল্যান্ড পারলে আমরা কেন পারছি না

প্রকাশ: ১৫ মে ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সফল দেশের তালিকায় চীন ও ভিয়েতনামের পর যোগ হয়েছে থাইল্যান্ডের নাম। বৃহস্পতিবার দেশটিতে মাত্র একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে প্রাণহানি শূন্যের কোঠায়। এ পর্যন্ত সেখানে সবমিলিয়ে ৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে। সন্দেহ নেই যে, প্রত্যেকটি প্রাণই মূল্যবান। আমরা মনে করি, একজনের মৃত্যুও অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু অনেক উন্নত দেশে যেখানে মৃতের সংখ্যা হাজার হাজার, সেখানে প্রাণহানি দুই অঙ্কে ধরে রাখতে পারা কম সাফল্যের নয়। এটা ঠিক, ভিয়েতনামের সাফল্য আরও বিস্তৃত। দেশটিতে একজনও করোনাভাইরাসে প্রাণ হারায়নি। কিন্তু এটাও স্বীকার করতে হবে- এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে 'উন্মুক্ত' দেশ থাইল্যান্ড। দেশটিতে যত সংখ্যক পর্যটক প্রতিদিন প্রবেশ করে, তাতে করে করোনাভাইরাসের বিস্তৃতি সবচেয়ে সহজ ছিল। যে দেশে প্রধান অর্থনৈতিক খাত পর্যটন, সে দেশের পক্ষে সবকিছু 'লকডাউন' করে দিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা স্বভাবতই ছিল সবচেয়ে কঠিন। আমরা বিস্মিত ও অনুপ্রাণিত যে, থাইল্যান্ড সেই কঠিন কাজটিই সুচারুরূপে সম্পন্ন করেছে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দৃশ্যত রেহাই পেয়েছে। জীবন সুরক্ষার এই ধারা অব্যাহত রেখে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার থাই উদাহরণ অন্যান্য দেশের জন্য তো বটেই, বাংলাদেশের জন্যও হতে পারে শিক্ষণীয়।

এই সম্পাদকীয় যখন লিখছি, বাংলাদেশে সে দিনও সংক্রমণের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা ও হার। অথচ আমাদের মনে আছে- বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পরদিন থাইল্যান্ডে প্রথম করোনা আক্রান্ত ধরা পড়েছিল। দেশটি যেখানে সংক্রমণের সংখ্যা কমবেশি তিন হাজারে ধরে রাখতে পেরেছে, আমরা সেখানে ইতোমধ্যে ১৮ হাজার ছাড়িয়েছি। মৃতের সংখ্যাও আমাদের দেশে তিনশ'র ঘরে পৌঁছতে যাচ্ছে। আবার সংক্রমণের তুলনায় টেস্টিং কতটা পর্যাপ্ত, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। আমরা মনে করি, এক্ষেত্রে বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব ও বিভ্রান্তি। আমরা এই সম্পাদকীয় স্তম্ভেই প্রথম থেকেই পুনঃপুনঃ তাগিদ দিয়েছিলাম যে, দেশের প্রবেশপথগুলোতে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ জোরদার করে করোনা শনাক্ত বা সন্দেহভাজনদের সঙ্গনিরোধের ব্যবস্থা করা হোক। দুর্ভাগ্যবশত, সেটা করা সম্ভব হয়নি। পরে যদিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কলকারখানা বন্ধ করা হয়; গণপরিবহন বন্ধ না করেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে করে পরিস্থিতির অবনতিই হয়েছিল। আবার ব্যাপক পরীক্ষা চালিয়ে সংক্রমিতদের আলাদা রাখার যে সুপারিশ আমরা একাধিকবার করেছি, সম্ভব হয়নি সেটাও। আমরা দেখেছি, থাইল্যান্ডের সাফল্যের মূলে রয়েছে এসব সিদ্ধান্ত। ভিয়েতনামের সাফল্যের চাবিকাঠিও একই।

আমরা মনে করি, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশের উচিত ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের পথ অনুসরণ করা। বৃহস্পতিবার সমকালে প্রকাশিত এক বিশেষ মন্তব্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক যথার্থই বলেছেন, সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। সব জেলায় করোনাভাইরাস পৌঁছে গেলেও সব উপজেলায় এখনও সমান সংক্রমণ নেই। আমরাও মনে করি, এখনও উপজেলাগুলো সবুজ, হলুদ, লাল শ্রেণিতে চিহ্নিত করে স্থানীয়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এমনকি উপজেলাগুলোকে 'লকডাউন' করে দিয়ে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনাও সম্ভব। করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা যদি উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অব্যবস্থাপনা সামাল দেওয়া সহজ হবে। সহজ হবে সাধারণ রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন। বস্তুত এর বিকল্পও নেই। এভাবে না লকডাউন, না খোলা পদ্ধতিতে কেবল সংক্রমণের সংখ্যাই বাড়তে থাকবে। আর যদি উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি, আমরাও এই বৈশ্বিক দুর্যোগকে পরাস্ত করার ঘোষণা দিতে পারব। থাইল্যান্ড যদি পারে, আমাদের না পারার কোনো কারণ নেই।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com