এসএসসির ফল

উচ্ছ্বাস এবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে

প্রকাশ: ০১ জুন ২০ । ০০:০০ | আপডেট: ০১ জুন ২০ । ১৬:৩০ | প্রিন্ট সংস্করণ

হাসনাইন ইমতিয়াজ ও জাহিদুর রহমান

বরিশাল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের গাছে ঝুলছে নোটিশ বোর্ড। তবে তাতে টানানো হয়নি ফল -সমকাল

রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস নুজহাতের পরিবারের। পড়াশোনা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি বালিকা বিদ্যালয়ে। এসএসসি পরীক্ষার পর বন্ধুদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেছিল নুজহাত, ফল প্রকাশের দিন কে কোন পোশাক পরে স্কুলে আসবে। কিন্তু নুজহাতদের সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ফল প্রকাশ করা হলেও এবার করোনা মহামারির বিস্তার এ প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে ফেলে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, বাসায় বসে মোবাইল ফোনেই ফল জানতে হবে পরীক্ষার্থীদের।

১০ বছরের সাধনার ফল ঘরে বসে পেতে হবে, এমন খুশির দিনেও ঘরেই থাকতে হবে- এ কথা কখনও কল্পনাও করেনি অদম্য মেধাবীরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। নুজহাত নিজে জিপিএ ৫ পেয়েছে। সাফল্যের মুখ দেখেছে প্রায় সবাই। তবে নুজহাত এবং তার মতো ২০ লাখ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীকে ফলের সাফল্য নিয়ে আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশের জন্য বেছে নিতে হয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে।

সকাল থেকেই ফল প্রকাশ হওয়ার আগপর্যন্ত উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সব উৎকণ্ঠার অবসান ঘটে ফল প্রকাশের পর। আশানুরূপ ফলে তাদের চোখে-মুখে ফুটে ওঠে সাফল্যের হাসি। কিন্তু আগের বছরগুলোতে সকাল থেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জড়ো হতো শিক্ষার্থীরা। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে তৈরি হতো আনন্দমেলা। নেচে-গেয়ে ও পরস্পরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সন্তানের ভালো ফলের আনন্দে যোগ দিতেন তাদের অভিভাবকরাও। টেলিভিশনগুলোও এমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের লাইভ দেখাত।

গতকাল রোববার ফল প্রকাশের পর দেশের কোনো স্কুলেই দেখা যায়নি শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকদের। স্কুলগুলোও ছিল তালাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা অনলাইনেই ফল জানতে পেরেছে। যে কারণে এ বছর ক্যাম্পাসে কোনো প্রাণোচ্ছল নেই।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পাসগুলো খাঁ খাঁ করছে। প্রবেশপথ বন্ধ। শুধু নিরাপত্তাকর্মীরা অলস বসে আছেন। মতিঝিলের একটি সরকারি স্কুলের একজন নিরাপত্তাকর্মী বলেন, দুই মাস থেকে স্কুল বন্ধ। মাঝেমধ্যে অফিসের কাজে শিক্ষকরা আসেন। কিন্তু আজ তারাও

আসেননি। ভালো ফলে ছাত্ররা আনন্দ করে। তাদের খুশিতে মন ভরে যায়। অনেকেই মিষ্টি নিয়ে আসে। বেশ ভালো লাগে। কিন্তু করোনার কারণে সবই থমকে গেছে এবার।

রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল ওহাব তার মোবাইল ফোনে জিপিএ ৫ পাওয়ার মেসেজ আসার পরপরই বাইরে বের হতে চেয়েছিল বন্ধুদের সঙ্গে একত্রিত হতে। কিন্তু মা-বাবার বাধায় বের হতে পারেনি। বাধ্য হয়ে ফেসবুকে ভিডিওকলে বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছে সে। শুধু আবদুল ওহাব নয়, তার মতো সব শিক্ষার্থীরই আনন্দ-উচ্ছ্বাস প্রকাশের প্রধানতম অবলম্বন এখন ফেসবুকের মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই ফেসবুকে একের পর এক উচ্ছ্বসিত স্ট্যাটাস দিয়ে চলেছে তারা কিছু সময়ের জন্য মহামারি করোনার প্রকোপ ভুলে।

ইশাত জাহান রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ ৫ পেয়েছে। করোনা না থাকলে মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে গিয়েই ফল ঘরে আনত। কিন্তু তা আর হয়নি। ইসরাতের ফল পাওয়ার পরপরই তার ব্যবসায়ী বাবা রেজাউর রহমান ও মা লিপি রহমান ফেসবুকেই মেধাবী মেয়ের কৃতিত্ব উদযাপন করেছেন। ফেসবুকে তারা মেয়েকে অভিনন্দন জানিয়ে তার ভবিষ্যৎ সফলতা কামনা করেন। রেজাউর রহমান বলেন, আমরা ভীষণ খুশি। তবে করোনার কারণে আনন্দের জোয়ারে ভাটা পড়েছে।

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, এসএসসির ফল একজন শিক্ষার্থীর দীর্ঘ ১০ বছরের সাধনার ফল। তাই এর উচ্ছ্বাস-উৎকণ্ঠা সবই অন্যরকম। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধির কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে প্রযুক্তির কারণে ঘরে বসেই সবাই ফল পেয়েছে।

খিলগাঁওয়ের একটি স্কুল থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফারহান খানের মা গৃহিণী ইসমত আরা জানান, তার প্রথম সন্তানের এসএসসির ফল ভালো হলে অনেক কিছু করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে কিছু করা যায়নি। ফল পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি। কিন্তু কাউকে মিষ্টি খাওয়ানো হলো না। ছেলেও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছে না। তাই একটু মন খারাপ ওর।

এবার করোনাকালে এসএসসির ফল প্রকাশের পুরো প্রক্রিয়াই ছিল ডিজিটাল। ফল প্রকাশের আগেই শিক্ষার্থীরা মোবাইল ফোনে 'প্রি-রেজিস্ট্রেশন' করে রেখেছিল। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে ফল চলে যায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ফল প্রকাশ করছে প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও ফেসবুক লাইভে ফল প্রকাশ করেন। এবার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই ফল পাঠানো হয়নি। শিক্ষা বোর্ডগুলোর পক্ষ থেকে স্কুলের অফিসও বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।



© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com