সরেজমিন পূর্ব রাজাবাজার

বের হতে এমপি সচিবকে দিয়েও তদবির!

প্রকাশ: ১৩ জুন ২০ । ০০:০০ | আপডেট: ১৩ জুন ২০ । ০২:৫৫ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

ছবি ফাইল

জোনভিত্তিক লকডাউন চলা রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের অনেক বাসিন্দা নিয়ম ভেঙে বাইরে বের হতে নানা রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা সংসদ সদস্য, সচিব দিয়েও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে তদবির করছেন। তবে সেসব অনুরোধ রাখছেন না লকডাউন বাস্তবায়নকারী সংশ্নিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, লকডাউন আরও শক্ত করার জন্য গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ফটকে রেজিস্টার খাতা খোলা হয়েছে। বাইরে বের হওয়া ও ভেতরে প্রবেশে যাদের অনুমতি আছে, তাদেরও রেজিস্টার খাতায় নাম-পরিচয় এন্ট্রি করে ঢুকতে বা বেরোতে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান সমকালকে বলেন, এই লকডাউনে অনেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে। প্রথম দু'দিন বের হতে কিছু লোক নানা ফন্দি শুরু করেছিল। দেয়াল ফুটো করে রেখেছিল। সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে চলছে বড় বড় মানুষকে দিয়ে তদবির। এমপি-সচিবসহ এমন লোকজন ফোন করে কিছু লোককে বাইরে বের হওয়ার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করছেন, যা বলাও মুশকিল। কিন্তু প্রত্যেককে বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে যাব না। তাতে কেউ অখুশি হলে কিছু করার নেই।

জানা যায়, গ্রিন রোড সংলগ্ন পূর্ব রাজাবাজারে প্রবেশের ফটকে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ১৮৫ জনকে বের হতে দেওয়া হয়। তারা স্বাস্থ্যসেবা সংশ্নিষ্ট এবং গণমাধ্যমকর্মী। তাদেরও আইডি কার্ড দেখিয়ে বের ও প্রবেশ করতে হয়েছে। নাম, পেশা, সময় এন্ট্রি করে তাদের বের হতে হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবী রাকিবুল ইসলাম জানান, পান্থপথ, ফার্মগেটসহ আশপাশে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিক আছে। এ কারণে ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত লোকজনের বসবাস পূর্ব রাজাবাজারে বেশি।

সরেজমিন দেখা যায়, আইবিএ হোস্টেল সংলগ্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবী ও পুলিশ সদস্যরা বসে আছেন। কেউ ঢুকতে বা বেরোতে চাইলে পরিচয় জানতে চাওয়া হচ্ছে।

ছুটির দিন হওয়ায় তুলনামূলকভাবে গতকাল বের হওয়ার চেষ্টা করেছেন খুব কম সংখ্যক লোক। অনেকেই বাধা পেয়ে 'বড় ভাই' বা উচ্চ পর্যায়ের কোনো কর্মকর্তার কাছে ফোন করে কথা বলানোর চেষ্টা করেছেন। তাদের বোঝানো হচ্ছে- একজনকে ছাড়লে আরেকজনের অনুরোধও রাখতে হবে। এভাবে লকডাউনের উদ্দেশ্য সফল হবে না।

শেরেবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুনশি বলেন, পূর্ব রাজাবাজারের ভেতরে এবং বাইরে পুলিশের টহল টিম কাজ করছে। অনেকেই নানা অজুহাতে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত এবং গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে বের হতে বা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, অন্যান্য দিনের চেয়ে গতকাল দ্বিগুণ সংখ্যক সবজির ভ্যান ভেতরে ঢোকানো হয়। মাছ-মাংসের গাড়িও ছিল। পূর্ব রাজাবাজারের একাধিক বাসিন্দা ফোনে জানান, গলির শেষ মাথায় যখন সবজির ভ্যান আসে, তখন ভালো সবজি থাকে না। তারা গলির শেষ মাথার জন্য সবজির আলাদা ভ্যান পাঠানোর জন্য বলেন।

এদিকে জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে না যাওয়ার জন্য দুপুর ১২টা থেকেই মাইকিং করা হয়। প্রত্যেককে বাসায় নামাজ পড়তে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে মহল্লায় করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে। করোনা রোগী শনাক্তে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে নমুনা পরীক্ষার বুথও করা হয়েছে। ব্র্যাকের সিনিয়র ম্যানেজার ডা. ফারহানা রহমান বলেন, এলাকার বাসিন্দারা আগে মোবাইল ফোনে নমুনা দেওয়ার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিচ্ছেন। তারপর নির্ধারিত সময়ে এসে নমুনা দিচ্ছেন। জনসমাগম এড়াতেই এভাবেই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com