
এবার কানাডায় আদিবাসী নেতাকে গ্রেপ্তারের সময় নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০ । ১৪:৪১ | আপডেট: ১৩ জুন ২০ । ১৫:০৩
অনলাইন ডেস্ক

পুলিশের মারধরের শিকার আদিবাসী নেতা অ্যালান অ্যাডাম। ছবি : বিবিসি।
কানাডায় আদিবাসী নেতাকে আটকের সময় পুলিশি নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে কানাডার পুলিশ বাহিনীতে বিদ্যমান পদ্ধতিগত বর্ণবাদের বিষয়টিও ফের সামনে এসেছে। ভিডিওটি তিন মাস আগের বলে শনিবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গত ১০ মার্চ আলবার্টার ফোর্ট ম্যাককারি থেকে আথাবাস্কা চিপেওয়ান ফার্স্ট নেশনের প্রধান ও আদিবাসী নেতা অ্যালান অ্যাডামকে আটক করে পুলিশ। সে সময় রয়াল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশের (আরসিএমপি) এক কর্মকর্তা অ্যাডামকে মাটিতে ফেলে একের পর এক ঘুষি মারতে থাকেন।
যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হওয়া পুলিশি নিপীড়ন ও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের ঢেউ লেগেছে প্রতিবেশি কানাডাতেও। দেশটিতে পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের দাবি উঠেছে ইতোমধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে আদিবাসী নেতা অ্যাডামকে মারধরের ভিডিও প্রকাশিত হলো। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, এই ঘটনার ‘শেষ দেখে ছাড়বেন।’
শুক্রবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে আরসিএমপির কমিশনার ব্রেন্ডা লাকি বলেছেন, পদ্ধতিগত বর্ণবাদ পুলিশ বিভাগের জন্য কোনো সমস্যা কিনা তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে কানাডার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই পদ্ধতিগত বর্ণবাদ রয়েছে। আরসিএমপিতেও সে বর্ণবাদ রয়েছে বলে স্বীকার করেন কমিশনার ব্রেন্ডা। তিনি বলেন, ‘আমাদের অতীত ইতিহাস থেকে আজ পর্যন্ত আমরা আদিবাসী এবং অশ্বেতাঙ্গদের জন্য ন্যয়বিচার নিশ্চিত করতে পারিনি।’
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে আরসিএমপি থেকেই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছে বলে জানানো হয়েছে। যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তার কার্যক্রমকে অবশ্য ‘যুক্তিসঙ্গত’ বলে উল্লেখ করেছে আরসিএমপি।
মেয়াদোত্তীর্ণ একটি লাইসেন্স প্লেট নিয়ে অ্যাডাম ও তার স্ত্রীকে আরসিএমপির ওই পুলিশ কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। ১২ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি ক্যাসিনোর কার পাকিংয়ে থাকা অ্যাডামের লরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এক পুলিশ সদস্য। তার পেছনে থাকা আরসিএমপির গাড়ির ড্যাশবোর্ডের ক্যামেরাতে ওই ভিডিও হচ্ছিল।
ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে অ্যাডামকে বলতে শোনা যায়, ‘আরসিএমপির হয়রানিতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।’ তাদের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ ধরে কথা কাটাকাটি চলে। এক পর্যায়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাডামের স্ত্রীকে আটক করার চেষ্টা করেন। তখন অ্যাডাম ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন।
এরপর ঘটনাস্থলে আরও কিছু পুলিশ সদস্য হাজির হন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা আদিবাসী নেতা অ্যাডামকে আটকের চেষ্টা করেন। তখন পাশ থেকে আরও একজন পুলিশ কর্মকর্তা দৌঁড়ে এসে অ্যাডামকে মাটিতে ফেলে দেন এবং একের পর এক ঘুষি মারতে থাকেন।
ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে অ্যাডাম কানাডার সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলেছেন, ‘আমরা সংখ্যালঘু, তাই কেউ আমাদের হয়ে কথা বলে না। কিন্তু যখনি আমাদের কেউ কোনো ভুল করে, তখনি আরসিএমপি সুযোগ পেয়ে যায়। তখন তাদেরকে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে দেখা যায়। যথেষ্ট হয়েছে, এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’
অ্যাডামের আইনজীবী ব্রায়ান বেরেশ তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ প্রত্যাহার চেয়েছেন। আগামী ২ জুলাই অ্যাডামকে ফের আদালতে হাজিরা দিতে হবে।
অ্যাডামকে মারধরের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর শুক্রবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, ‘আমরা সবাই ভিডিওটি দেখেছি এবং ভীষণ অবাক হয়েছি। তবে আমরা এই ঘটনার শেষ দেখে ছাড়ব।’
গত সপ্তাহে কানাডায় পুলিশি নিপীড়ন ও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন ট্রুডো। তিনি বলেছিলেন, ‘কানাডার সব প্রতিষ্ঠানেই পদ্ধতিগত বর্ণবাদ এখনও রয়ে গেছে। আরসিএমপিসহ পুলিশ বিভাগের মধ্যেও পদ্ধতিগত বর্ণবাদ রয়েছে।’
ট্রুডোর সরকারের বিরুদ্ধেও বর্ণবাদে উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আদিবাসীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি নিপীড়ন চলে আসলেও ট্রুডো এখনও কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেননি। গত বছর প্রকাশিত খোদ সরকারি প্রদিবেদনে আদিবাসীরা ‘গণহত্যার শিকার হচ্ছেন’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সে প্রতিবেদনে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছিল তার একটিও এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেনি ট্রুডোর সরকার।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com