
লঙ্গন নদীতে ৭ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০ । ১৩:০৭
নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ভলাকুট ও গোয়ালনগর ইউনিয়নের লঙ্গন নদীর উপর দিয়ে নির্মিত প্রায় ৭ কিলোমিটারজুড়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষায় পানি বৃদ্ধির কারণে বৈদ্যুতিক খুঁটি পানির নিচে চলে যাওয়ায় নৌযান চলাচল নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এলাকাবাসী।
তবে, পল্লী বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টদের দাবি, নৌপথের যোগাযোগ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কিছু স্থানে বাঁশ দিয়ে টাওয়ার তৈরি করাসহ তারে সাঁটানো হয়েছে লাল নিশানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভলাকুট ও গোয়ালনগরের কিছু এলাকার নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের জন্য লঙ্গন নদীর উপর দিয়ে ২০১৫ সালে প্রায় ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন দেওয়া হয়। ২ হাজার ৮শ’ গ্রাহকের জন্য এসব লাইনে বসানো হয়েছে ৭৫টি ট্রান্সফরমার।
গোয়ালনগর ও ভলাকুট ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের একেকটি খুঁটির দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট। বর্ষার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি খুঁটি ৩৫ ফুট পানির নিচে চলে গেছে। এতে নৌযান চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া, প্রায় সময়ই ঝড়বৃষ্টিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে তার ছিঁড়ে নদীর পানিতে পড়ে থাকে।
এদিকে উজান থেকে নেমে আসা পানি আর ভারী বর্ষণে উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে হাওরবেষ্টিত ভলাকুট ও গোয়ালনগর ইউনিয়নের চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিরাপদ রাখতে গত ২১ জুলাই অস্থায়ীভাবে বাঁশ দিয়ে টাওয়ার তৈরি করে নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লোকজন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোয়ালনগর গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, শক্তিশালী বৈদ্যুতিক খুঁটিই পানির চাপ নিতে পারে না সেখানে বাঁশের খুঁটি দিয়ে কৃত্রিম টাওয়ার তৈরি করে বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন ঝুঁকিমুক্ত রাখাটা বোকামি। বিষয়টিকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে স্থায়ী সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি।
একই গ্রামের মোহনলাল দাস বলেন, ‘নদীর উপর দিয়া বিদ্যুৎ সংযোগ লাইন গেছে। একটু বাতাস আইলেই কারেন্টের (বিদ্যুৎ) তার ঝুলতে থাকে আর কারেন্টও বন্ধ কইরা দেয়। মাঝে মধ্যে কারেন্টের তারও ছিঁড়া যায়। হের পর ৪/৫ দিন আর কারেন্ট আয়ে না। আর ভোল্টেজ আপ-ডাউনত আছেই।’
গোয়ালনগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. আজহারুল হক জানান, ভৌগলিক বিবেচনায় গোয়ালনগর ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা নৌকা। নদীর উপর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। খুঁটির দূরত্ব বেশি হওয়ায় বিপদজনকভাবে নিচু অবস্থায় সঞ্চালন লাইন ঝুলে আছে, কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের।
নাসিরনগর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আবুল বাসার সামছুদ্দিন আহাম্মদ সমকালকে বলেন, বর্ষার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা গোয়ালনগরের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত বন্ধ রাখতাম। কিন্তু ঈদ ও প্রচণ্ড গরমের কথা চিন্তা করে সন্ধ্যার পর লাইন চালু করার সিদ্ধান্ত নেই।
তিনি বলেন, গোয়ালনগর ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের লিখিত দিয়েছেন, সকাল-সন্ধ্যায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নৌযান চলাচল স্বভাবিক রাখতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা পাহারার ব্যবস্থা করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় লাল নিশানা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এলাকায় মাইকিং করে জানানো হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে নৌযান চালাতে।
বর্ষা শেষ হলে ৬৫ ফুট দৈর্ঘ্যের বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানো হবে বলে জানান তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com