
বঙ্গবন্ধু এক রাত কাটান এই ঘরে
প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০ । ২১:২৭
তাজনুর রহমান, শৈলকূপা (ঝিনাইদহ)

এই ঘরে বঙ্গবন্ধু এক রাত কাটান- সমকাল
পরিবারটির গর্ব বাড়ির এই ঘরটি নিয়ে। গর্বিত প্রতিবেশীরাও। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ঘরে কাটিয়েছেন একটি রাত। গোসল করেছেন এ বাড়ির পুকুরে। আজও জরাজীর্ণ ঘরটিকে স্মৃতি হিসেবে ধরে রেখেছেন তারা।
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে কুষ্টিয়া আসেন বঙ্গবন্ধু। সেখান থেকে ঝিনাইদহের শৈলকূপার অজপাড়াগাঁ পুরাতন বাখরবা গ্রামে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহচর আওয়ামী লীগ নেতা (সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য) অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের বাড়ি। সঙ্গে ছিলেন বরিশালের মহিউদ্দিন ও খুলনার শেখ আব্দুল আজিজ।
বঙ্গবন্ধু যে ঘরটিতে রাত কাটিয়েছেন, কাঠামো ঠিক রেখে দলীয় বা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাঠাগার হিসেবে রাখতে চান মরহুম কামরুজ্জামানের সহধর্মিণী নুরুন্নাহার বেগম। তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালে তিনি গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। সেই সময় হঠাৎ এমন অজপাড়াগাঁয়ে তাদের বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর চলে আসাটা ছিল কল্পনাতীত। একটি রাত কাটিয়েছিলেন তাদের বৈঠকখানার ঘরে। তখন বাড়িতে ভালো বিছানাও ছিল না। আমি একটু লজ্জা পাচ্ছিলাম বিছানার চাদরটা বিছাতে। তিনি টের পেয়ে আমাকে বললেন, 'নুরুন্নাহার, লজ্জা কিসের? বিছায়ে দাও।' রাত্রিযাপন করে বঙ্গবন্ধু সকালে আবার রওনা হয়ে যান। তার ও পরিবারের ইচ্ছা, সরকারি বা দলীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অজপাড়াগাঁয়ে বঙ্গবন্ধুর এই স্মৃতিটুকু বেঁচে থাক।
প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার সেই সময়কার ১২ বছরের কিশোর সারুটিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা তবারেক হোসেন মোল্যা বলেন, ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে ঝিানইদহ-শৈলকূপা-হরিণাকুণ্ডু আসনে যুক্তফ্রন্টের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন কামরুজামান। সেই নির্বাচনের প্রচার চালাতে বঙ্গবন্ধু ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া আসেন। তারপর ট্রেনে খোকসা। সেখান থেকে নৌকায় গড়াই নদী পার হয়ে শৈলকূপার কাতলাগাড়ি পৌঁছে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে আসেন অজপাড়াগাঁ বাখরবা গ্রামের কামরুজ্জামানের বাড়িতে। সেখানে দুপুরে পুকুরে গোসল শেষে খাবার খান তিনি। এর পর বিকেলে কাতলাগাড়িতে মিটিং শেষে ফিরে এসে রাত্রিযাপন করেন কামরুজ্জামানের বৈঠকখানায়। পরদিন সকালে রওনা হন ঝিনাইদহের উদ্দেশে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঘরটির সংরক্ষণ চান তিনি।
বাখরবা গ্রামের এ বাড়িতে বসবাসকারী সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম কামরুজ্জামানের ভাতিজা বিল্লাল হোসেন জানান, তারা এখনও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ঘরটি ধরে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য প্রয়াত কামরুজ্জামানের মেয়ে পারভীন জামান কল্পনা বলেন, ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের গ্রামের বাড়ি শৈলকূপার বাখরবায় এসেছিলেন। আমাদের বৈঠকখানায় কাটিয়েছেন একটি রাত। মা বলেন, তখন আমাদের ভালো বিছানার চাদরও ছিল না।’ কল্পনা জামানও চান বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসসমৃদ্ধ একটি পাঠাগার এখানে নির্মিত হোক।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com