
দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়
অপরাধী একটি অপরাধ করে পার পেলে দ্বিতীয় অপরাধ সংঘটিত করতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এভাবে ব্যক্তি কেবল নানা অপরাধের সঙ্গেই জড়িয়ে পড়ে না; একই সঙ্গে অপরাধ চক্র গড়ে তুলতে পারে। অপরাধী বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ প্রভাবশালীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়। অনেক সময় দেখা যায়, এরা ক্ষমতাবান ও সম্পদশালীদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করে। আমরা দেখেছি, রাজনীতির সঙ্গে অপরাধের যোগসাজশ কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। ঠিক এমনি প্রেক্ষাপটে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর 'অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করবেন না' শীর্ষক সতর্কবার্তা অত্যন্ত ইতিবাচক। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার তাৎপর্য এখানেই যে, তিনি যেমন রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে এ বার্তা দিয়েছেন, একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলপ্রধান হিসেবেও নেতাকর্মীদের দলের নীতিগত অবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী বরাবরই অপরাধীর বিরুদ্ধে শূন্য-সহিষ্ণুতা প্রদর্শনের পক্ষে। তিনি যথার্থই বলেছেন, 'অপরাধী এবং তাকে রক্ষাকারী সমান অপরাধী। এমপিরা কেউ যেন অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা না করেন।' আমাদের জাতীয় নীতিও 'দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন'।
তারপরও আমরা দেখেছি, অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে বেআইনি অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে দেশের আইন প্রণেতাদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যোগসাজশ ছিল। অনেক সময় অপরাধীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধরলেও সংসদ সদস্যের সুপারিশে ছাড়া পাওয়ার অভিযোগও কম নয়। সংসদ সদস্যদের মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন এই কারণেও যে, যাতে তিনি স্ব-স্ব এলাকার সমস্যা সমাধানে জাতীয় সংসদে কথা বলতে পারেন। রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে প্রত্যেকের নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার দায়িত্বও তার। আমরা জানি, সংসদ সদস্যরা যেমন জনপ্রতিনিধি, একই সঙ্গে রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাও বটে। তার দলের কোনো নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে অপরাধ করলে আইন অনুযায়ী যেমন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; একই সঙ্গে দলীয় ব্যবস্থাও নেওয়া চাই।
গত বছরের শেষদিকে দলে শুদ্ধি অভিযান শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নিজেই এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে আমরা মনে করি। আমরা দেখেছি, দুর্নীতি, ক্যাসিনো-বাণিজ্য ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ইতোমধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। এমনকি করোনাকালেও গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। আমরা মনে করি, সংসদ সদস্যরা চাইলে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা থেকেই এ শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে পারেন। সংসদ সদস্যরা অপরাধীর প্রতি কঠোর হলে কেবল মানুষের নিরাপত্তাই নিশ্চিত হবে না; একই সঙ্গে তিনি এলাকার উন্নয়ন ও সামাজিক নানা দায়িত্ব পালনেও মনোযোগ দিতে পারবেন।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যের কাজ আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখা হলেও আমরা জানি, তাদের আইনগতভাবে আরও অনেক নির্বাহী দায়িত্বও রয়েছে। বলা যায়, একজন সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী। স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনীসহ সব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন, সেটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে হয়। এ ছাড়া এলাকার শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকে। এমনকি স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও সংসদ সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ওপরেও সংসদ সদস্যের নিয়ন্ত্রণ থাকে। আমরা দেখেছি, এসব দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় অনেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আমরা চাই, সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবার্তা আমলে নিয়ে দুষ্টের দমনে যেমন নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন, একই সঙ্গে তার ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com