কক্সবাজারের জনপ্রিয় শিশুশিল্পী জনিকে কুপিয়ে হত্যা

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০ । ১২:৪৪ | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০ । ২১:৪৩

কক্সবাজার অফিস ও রামু প্রতিনিধি

কণ্ঠশিল্পী জনি দে

মাত্র ১৪ বছর বয়সেই সুনাম অর্জন করেছিল কক্সবাজারের কিশোর সংগীতশিল্পী জনি দে। এই বয়সেই প্রতিদিন একাধিক অনুষ্ঠানে গান করতে হতো তাকে। বুধবারও চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুটি বিয়ের অনুষ্ঠানে সে গান করেছিল।

অনুষ্ঠানের পর বৃহস্পতিবার সকালে পটিয়া থেকে বাড়ি ফিরছিল এই শিশুশিল্পী। কিন্তু বাড়ি ফেরা আর হয়নি তার। কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের হিমছড়ি ঢালায় দুর্বৃত্তরা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে জনপ্রিয় এই শিশুশিল্পীকে। এ হত্যাকাণ্ড ডাকাতি, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। নিহত জনি রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের চরপাড়া এলাকার বাসিন্দা তপন দের ছেলে।

বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় সিনএনজি অটোরিকশায় থাকা আরও দু'জন যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্বৃত্তরা সিএনজি থেকে দুই ব্যক্তিকে অপহরণও করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে তাদের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের এসআই শামীম আল মামুন জানান, ঈদগাঁও থেকে ঈদগড় যাওয়ার পথে হিমছড়ি ঢালায় একটি সিএনজি অটোরিকশার যাত্রীরা ডাকাতির শিকার হন। ডাকাত দলের সদস্যরা চায়নিজ কুড়াল দিয়ে যাত্রীদের এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে। এতে কণ্ঠশিল্পী জনিসহ তিনজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক জনিকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্য দুই যাত্রীকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল থেকে নিহত শিশুশিল্পীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নিহত জনির বাবা তপন দে জানান, ছেলে জনিসহ তিনি কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে পটিয়া থেকে শ্যামলী পরিবহনের বাসে ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডে নামেন তারা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই স্ট্যান্ডে পিতাপুত্র একসঙ্গে নাশতা করেন। তারপর সিএনজি অটোরিকশায় উঠে জনি বাড়ি যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হয়।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মনিরুল গিয়াসসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। অটোরিকশা থেকে দুই যাত্রীকে অপহরণ করা হয়েছে কিনা পুলিশ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তবে ওসি জানান, ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জনির কাছে অনেক টাকা থাকলেও সেগুলো খোয়া যায়নি।

ঈদগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টা জানান, সকালে ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ থাকার কথা থাকলেও কয়েক দিন ধরে সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। এ কারণেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটল।

প্রতিবাদে মানববন্ধন সমাবেশ: শিশুশিল্পী জনি দে রাজ হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঈদগড় বাজারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

এ সময় বক্তব্য দেন ঈদগড় এএমবি উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবু বিষ্ণু মোহন দেব, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ইব্রাহীম খলিল, নূরুল আবছার, তৌহিদুল ইসলাম, কপবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক মো. ইউছুপ, ঈদগাঁও ফরিদ আহাম্মদ কলেজের প্রভাষক ছলিম উল্লাহ, ঢাকা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মহি উদদীন, ঈদগড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শহিদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আহসান উল্লাহ, নূরুল হুদা, গিয়াস উদদীন প্রমুখ।

বক্তারা দ্রুত শিশুশিল্পী জনি হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com