
নগরায়ণ
চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতায় ঢাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০ । ০০:০০ | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০ । ০৩:১৮ | প্রিন্ট সংস্করণ
মালিক ফিদা এ খান

পাহাড়, নদী, সমুদ্র ও উপত্যকাবেষ্টিত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্য চট্টগ্রাম অন্যান্য নগরী থেকে স্বতন্ত্র হলেও বৈশ্বিক গ্রীষ্ফ্মমণ্ডলীয় প্রভাবের কারণে সেখানে বার্ষিক আড়াই হাজার থেকে চার হাজার মিলিমিটার পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানি খাড়া পাহাড়ি ঢাল বেয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়। শহরটি পূর্বে সমুদ্র, পূর্ব-দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে কর্ণফুলী নদী, উত্তর-পূর্ব দিকে হালদা নদীবেষ্টিত। উচ্চ জোয়ার ও বৃষ্টিপাতের কারণে খালগুলোতে অত্যধিক পানিপ্রবাহে প্রাকৃতিক নিস্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা এবং তার জের ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও নিস্কাশন ব্যবস্থাপনার অভাবে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবন-জীবিকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
চট্টগ্রাম শহরের ড্রেনেজ সমস্যা দূরীকরণে ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করেছিল। কিন্তু গত দুই দশকেও এর সুপারিশগুলো কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি নগরও দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে বন্দরনগরীর নিস্কাশন ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। বর্ষা মৌসুমে ভারি কিংবা মাঝারি বৃষ্টিতেই নগরের অনেক এলাকা তলিয়ে যায়।
আশার কথা, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়নে এরই মধ্যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সিডিএর সহযোগিতায়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের তত্ত্বাবধানে চলছে বাস্তবায়ন। সিইজিআইএস প্রদান করছে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কারিগরি সহায়তা। প্রকল্পটির অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিদ্যমান নিস্কাশন ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো।
প্রকল্পের আওতায় পুনঃখননের মাধ্যমে ৩৫টি খালের প্রাচীর নির্মাণ, পাঁচটি 'টাইডাল রেগুলেটর' নির্মাণ, ৬০টির বেশি সেতু ও কালভার্ট পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে মূল নিস্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১২০ কিলোমিটারজুড়ে ৯০টির বেশি 'ক্রস ড্রেইন' ছাড়াও কালভার্ট পুনর্নির্মাণ ও পরিস্কার করা হচ্ছে। প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ২১টি 'সিল্ট ট্র্যাপ'। প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিইজিআইএস দুই বছর ধরে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি এরই মধ্যে দৃশ্যমান।
এরই মধ্যে খালগুলোর অধিকাংশই পরিস্কার ও সংস্কার করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ, খালের ওপর থাকা সেতুগুলো উঁচু করার কাজ এগিয়ে চলছে। পাঁচটি 'টাইডাল রেগুলেটর' নির্মাণকাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৫০ বছরের বৃষ্টিপাতের তথ্যের ভিত্তিতে 'ডিজিটাল এলিভেশন মডেল' এবং বর্তমান নিস্কাশন ব্যবস্থা বিবেচনায় এনে নিস্কাশন অবকাঠামোও ঢেলে সাজানো হয়েছে। সে অনুসারে নালা সম্প্রসারণ এবং নতুন সংযোগ-নালা নির্মাণের জন্য নকশা প্রণয়ন করা হয়। এখন পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার নতুন ড্রেন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অবশিষ্ট অংশে নির্মাণকাজ চলমান।
যেসব স্থানে নিস্কাশন ব্যবস্থা নেই, সেখানে ১০.৭৭ কিলোমিটার নালা তৈরি হয়েছে এবং ৩৪টি খাল অবৈধ দখল হতে উদ্ধার করে পুনরায় স্বাভাবিক পানিপ্রবাহের উপযোগী করা হয়েছে। যে ২২টি স্থানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়, সেখানে পানি যাতে জমে না থাকে এবং সে জন্য আনুমানিক ১১১ কিলোমিটার খাল নতুনভাবে পরিস্কার বা সংস্কার করে পানিপ্রবাহ সচল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে স্বাভাবিক নিস্কাশন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য অনেকগুলো খাল আছে। এ খালগুলোই মূলত জোয়ার-ভাটার সহায়তায় বৃষ্টির পানি নিস্কাশনে ভূমিকা পালন করত। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে জোয়ারের পানি প্রবেশের পথ সংকুচিত হওয়ায় বা প্লাবনভূমি সংকুচিত হওয়ায় পরবর্তীকালে পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে বর্ষাকালের বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বন্যার সমস্যা দৃশ্যমান হতো।
মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রাম শহর এলাকা ভারি বৃষ্টিপাতপ্রবণ এলাকা। এখানে ১৯৭৮ সালে এক দিনে সর্বোচ্চ প্রায় ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেরও রেকর্ড রয়েছে। এ খালগুলো ব্যবহারে অসচেতনতাও বিভিন্নভাবে খালের দখল, খালে নানা আবর্জনা জমা হওয়া, পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ বা সংকুচিত হওয়া মূলত চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার কারণ। এর প্রেক্ষাপটেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসনে আলোচ্য প্রকল্পটি প্রণয়ন করেছিল এবং তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনে পাস হয়েছিল।
কারিগরি সহায়তার শুরুতেই সিইজিআইএস থেকে আমরা বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছিলাম। বাংলাদেশ জরিপ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় 'স্যাটেলাইট ইমেজ' থেকে খালের বর্তমান অবস্থা সংগ্রহ নির্ভুল ও সমন্বিত নকশা প্রণয়নে সহায়ক হয়েছে। উল্লেখ্য, নকশাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যা জলবায়ুসহিষ্ণুও বটে। বিশেষ করে ৫১৪ মিলিমিটার বৃষ্টির পরিমাণকে বিবেচনায় এনে ২০০ বছরের 'রিটার্ন পিরিয়ড' চিন্তা করে এ খালগুলোর ক্রস সেকশন ও রেগুলেটরের আকৃতি নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নকশা বাস্তবায়িত হলে আশা করা যায়, আগামী ৫০ বছরের অধিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনে যে ধরনের বৃষ্টিপাত হবে, তা এ খালগুলো পরিবহন করতে পারবে।
স্যাটেলাইট ইমেজ ও ডিজিটাইজড 'বিএস ম্যাপ' ব্যবহার করে খালগুলোর কতখানি ভরাট হয়ে গেছে বা দখল হয়ে গেছে, সেগুলো নিপুণভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে প্রায় ৪০ হেক্টর জমি পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যে পরিমাণ জমি দখল হয়েছিল এবং খালের উভয় পাশে যারা জমি দখল করেছিল, তাদের এ নিখুঁত মাপের পরিমাণ বুঝিয়ে দেওয়ায় এ পুরো ৩৬টি খালের দু'পাড়ে বসবাসকারী কোনো পক্ষ থেকেই কোনোরকম অভিযোগ বা মামলা হয়নি। এটা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
খালগুলো পুরোনো অবস্থায় ফিরিয়ে আনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এবং এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য জিইআইএস ও রিমোট সেনসিং টেকনোলজি কাজে লাগিয়ে নিখুঁতভাবে খালের দু'পাড় নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরন্তু এ প্রকল্পে উদ্ধারকৃত খালগুলোর জমি ও দু'পাড় পরে যেন কোনোরকম দখল না হতে পারে, তার জন্য খালের দু'পাশে বিএস ম্যাপ অনুসারে প্রতিরোধ দেয়ালের মাধ্যমে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে তিনটি সুবিধা হবে- যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা, খাল পরিস্কারের সুবিধা ও পুনর্দখল রোধ করা। যেসব জায়গায় খালের পাশে রাস্তা করা সম্ভব হবে না, সেখানে রেলিং দিয়ে ফুটপাত তৈরির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে ব্রিজগুলো খালের প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত, সেগুলো ভেঙে ৬০টি নতুন ব্রিজ ও কালভার্ট পুনর্নির্মাণ ও নির্মাণ শুরু হয়েছে এবং ১০টি ব্রিজের কাজ শেষ হতে যাচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় একটি বৃহৎ রেগুলেটরসহ পাঁচটি রেগুলেটরের কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী বছরের মধ্যে এ এলাকার সবচেয়ে বড় খাল মহেশখালের রেগুলেটরের কাজ সম্পন্ন হবে। এর অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এতে একটি 'নেভিগেশন লক' সন্নিবেশিত রয়েছে এবং এতে তিনটি অত্যাধুনিক পাম্প থাকবে। আমাদের উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত পানির প্রভাব থাকার কারণে রেগুলেটরের গেটগুলো 'কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল' দিয়ে তৈরির প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। যদি কোনো সময় বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত বেশি হয় এবং জোয়ারের পানির উচ্চতা ততোধিক বেড়ে যায়, তাহলে পাম্প দিয়ে খালের পানি নিস্কাশন করা যাবে।
আমরা দেখেছি, চট্টগ্রাম নগরীর ২ নম্বর ঘাট, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতাল, জিইসি মোড় এবং প্রবর্তক মোড়সহ আরও চার-পাঁচটি এলাকায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ বেশি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব এলাকায় ড্রেনেজ সিস্টেমের আমূল পরিবর্তন করে সেকেন্ডারি ও প্রাইমারি, টারশিয়ারি ও সেকেন্ডারি ড্রেনের মাধ্যমে খালের সংযোগগুলো নতুনভাবে তৈরি করা হয়। খালগুলো চার দশক ধরে পরিস্কার না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনায় এগুলোর প্রবাহ ক্ষমতা প্রায় নিঃশেষিত। এ প্রকল্পের আওতায় খালগুলো একটি 'সিস্টেমেটিক অর্ডার' অনুযায়ী পরিস্কার করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের এ প্রকল্পের একটি বড় বিষয় হচ্ছে পলি ব্যবস্থাপনা। চট্টগ্রাম শহরের একটি অংশ পাহাড়ি এলাকা। এই পাহাড়ি এলাকা থেকে যখন বৃষ্টির পানি নেমে আসে, তখন তার সঙ্গে অনেক পলি আসে, যা খালগুলোর তলদেশ অনেকখানি ভরে ফেলে। খালের ধারণক্ষমতা বা প্রবাহ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এগুলোকে সার্বিকভাবে পর্যালোচনা করে ২১টি বিভিন্ন খালে 'সিল্ট ট্র্যাপ' স্থাপনের প্রস্তাব ও নকশা করা হচ্ছে। যদি এই নকশা বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা প্রায় শূন্যে নিয়ে আসা যাবে। এর পরও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী ৫০ বা ১০০ বছরের বৃষ্টির পরিমাণ বিবেচনা করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের দেশে প্রচলিত প্রাকৃতিক জলাধার ধারণার মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরেও কিছু জলাধার তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে অতিবৃষ্টির অতিরিক্ত পানি ধরে রাখা যায়। প্রাকৃতিক নিস্কাশন ব্যবস্থাকে মূল ধরে কৃত্রিমভাবে তৈরি নালা ও খালগুলো নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করাই আমাদের প্রকল্পের মূলনীতি।
আগেই বলেছি, এ প্রকল্পে সিডিএ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, চট্টগ্রাম ওয়াসা এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিইজিআইএস সমন্বিতভাবে কাজ করেছে। সমন্বিত সহযোগিতার জন্যই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডসহ সব সহযোগী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটিকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পেরেছে।
চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য গৃহীত বহুমাত্রিক কার্যক্রম এবং ব্যবহারিক ক্ষেত্রে তার বাস্তব প্রয়োগের অভিজ্ঞতায় আমরা মনে করি, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রাজধানীর ঢাকার জলাবদ্ধতাও দূর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, রাজউক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বয় হতে হবে।
বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা নদী ও টঙ্গী খাল ঢাকা শহরকে চারদিকে ঘিরে রেখেছে। এখানেও চট্টগ্রামের নীতি অনুসরণ করে, অর্থাৎ সিএস, আরএস ও বিএস ম্যাপের মাধ্যমে খালগুলো পুনরুজ্জীবিত করতে পারি আমরা। চট্টগ্রামের তুলনায় এখানকার পানি নিস্কাশন ব্যবস্থার পার্থক্য হলো, চট্টগ্রামের সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি ড্রেনগুলো ভূমির ওপরে। আর ঢাকায় অনেক সেকেন্ডারি বা টারশিয়ারি নালা ভূগর্ভস্থ। আমরা যদি প্রাইমারি বা সেকেন্ডারি ড্রেনগুলোর সঙ্গে অন্য খালগুলোর সংযোগ এবং খালের সঙ্গে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর সংযোগ নিরবচ্ছিন্নভাবে স্থাপন করতে পারি, তাহলেই হবে।
আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু খাল শনাক্ত করেছি, যেগুলোর সংস্কার, পুনঃখনন এবং উন্নয়ন দরকার। যেমন- কাঁটাসুর খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, ইব্রাহিমপুর খাল, কল্যাণপুর খাল, আবদুল্লাহপুর খাল, বাউনিয়া খাল, আলোকদী দিগুন খাল, দিয়াবাড়ী খাল, ধোলাইখাল এবং হাজারীবাগ খাল। এ খালগুলোর সঙ্গে অন্য সব ড্রেন ও ঢাকার চারপাশের নদীর সংযোগ স্থাপন সম্ভব হলে আমি বিশ্বাস করি, ঢাকার জলাবদ্ধতা সমাধান সম্ভব।
একটি বিষয় এখানে বলা বাঞ্ছনীয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ খালের রেগুলেটরের গেট বা কপাটের আকারে আমূল পরিবর্তন এনেছে। আক্ষেপের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা এখনও এই কারিগরি পরিবর্তনের মানসিকতায় পৌঁছাতে পারিনি। গেটগুলো যদি বড় করি এবং গেটের উপাদানগুলো 'কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল' দিয়ে তৈরি করি, তাহলে মাছসহ জলজ প্রাণীর চলাচল অনেক সহজ হবে। তখন আলাদাভাবে 'ফিশ পাস' করার প্রয়োজন হবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, রেগুলেটরগুলো যেন এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যাতে গেটগুলো সহজেই ওঠানামা করা যায় এবং কোনো 'সেডিমেন্ট' জমা না হয়। আশার কথা, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার গেটের নকশা পরিবর্তনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরাও চেষ্টা করব, ঢাকার খাল বা নদীগুলোর মধ্যে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক নিস্কাশন ব্যবস্থাকে যতদূর সম্ভব পুনরুদ্ধার করতে।
আমি ও আমার প্রতিষ্ঠান আশাবাদী, সবার সহযোগিতা ও সদিচ্ছা থাকলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার জটিল সমস্যা আমরা যেভাবে সমাধানের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছি, একইভাবে ঢাকার সমস্যাও সমাধানের দিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ও আশাবাদ, আমরা সরকারেরও সর্বাত্মক সহযোগিতা পাব।
সিইজিআইএস তার বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত কাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতার আমূল সংস্কার করতে সক্ষম হয়েছে। সেখানকার অভিজ্ঞতা, কারিগরি কর্মদক্ষতা, সর্বোপরি দৃঢ় মনোবল পুঁজি করে সবার সহযোগিতায় সম্মিলিত উদ্যোগে ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে আমরা আত্মবিশ্বাসী।
আমরা বিশ্বাস করি- সকল সংস্থার আন্তরিকতায় এবং আমাদের সার্বিক কারিগরি সহায়তায় ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ সম্ভব। আমি জানি, আমাদের সবারই লক্ষ্য এক ও অভিন্ন- ঢাকা শহরকে জলাবদ্ধতার অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্ত করে একটি পরিপাটি ও আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তোলা।
নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস-সিইজিআইএস
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com