
করোনাবিধ্বস্ত বিশ্ব ও অবিশ্বাস্য বাংলাদেশ
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ফারুক মঈনউদ্দীন

আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে যে এক অজানা মহামারিতে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছিল, সেটি ছিল চীনে। হতভাগ্য মানুষগুলোর লাশ একটা ঘরে জড়ো করে পুড়িয়ে দেওয়া হতো। তারপর থেকে একে একে এথেনিয়ান প্লেগ, অ্যান্টোনাইন প্লেগ, জাস্টিনিয়ান প্লেগ, কলেরা, গুটি বসন্ত, কোকোলিজৎলি মহামারি, আমেরিকান প্লেগ, লন্ডন প্লেগ, রাশিয়ান প্লেগ, ম্যালেরিয়া, টাইফাস, স্প্যানিশ ফ্লু, এশিয়ান ফ্লু, এইডস, সোয়াইন ফ্লু এসে সংহার করেছে কোটি মানুষের প্রাণ। লক্ষণীয়, সর্বশেষ করোনা মহামারিটির উৎপত্তিও চীনে। দ্রুততম সময়ে ছড়িয়ে পড়া রোগটি সারা বিশ্বকে চুলের মুঠি ধরে যেভাবে ঝাঁকুনি দিচ্ছে, সেটি আরও কত মানুষের প্রাণ সংহার করবে, কতদিনে নির্মূল হবে, কিংবা আদৌ হবে কি না- সেকথা বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষের যুগেও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না। বিশ্বের মহাশক্তিধর দেশ আমেরিকাকেও যেভাবে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে, কিংবা ইওরোপের কয়েকটি দেশে যে বিশাল থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস, তাতে প্রমাণিত হয়, বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে চরম উন্নত এ দেশগুলো অদেখা এ জীবাণুটির বিরুদ্ধে কতখানি অসহায়।
করোনা মহামারিটির উৎপত্তি চীনে বলে প্রথমদিকে দেশটির বিরুদ্ধে অনেকেই, বিশেষ করে আমেরিকার সরকার নানান বিষোদ্গার করে আসছিল। ট্রাম্প প্রশাসন কভিড-১৯ বা করোনাকে বরাবরই 'চায়নিজ ভাইরাস' নামে অভিহিত করে এসেছে। এমনকি চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। ব্যঙ্গ করে কেউ এটির নাম দিয়েছিলেন 'কুং ফ্লু'। পরিকল্পিতভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে আমেরিকাকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে চীন এখনও রেহাই পায়নি। অনেকেরই জানা আছে, এক সময় ক্যাথলিক চার্চ প্লেগ মহামারির জন্য ইহুদিদের দায়ী করে তাদের কীভাবে নিগৃহীত করেছিল। একইভাবে ইউরোপে, বিশেষ করে ইতালিতে করোনাভাইরাস যখন তাণ্ডব শুরু করে, তখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্যবস্থার ঘোরবিরোধী ইতালীয় রাজনীতিবিদ মাত্তেও সালভিনি কিংবা দক্ষিণপন্থি ফরাসি রাজনীতিবিদ লু পেন সীমান্তহীন সেনঝেন ব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে ভাইরাস বহন করার অভিযোগে বিদেশি অভিবাসী, শরণার্থী ও পর্যটক ঠেকানোর জন্য ইতালির সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার দাবি করেছিলেন।
বস্তুত এজাতীয় মহামারির দায় সবসময় ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে অনুন্নত দেশের ঘাড়ে চাপানোর একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলেকজান্দ্রে হোয়াইট ২০১৮ সালে তার অভিসন্দর্ভে এসব ঔপনিবেশিক ব্যাখ্যার বিষয়টিকে 'মহামারির প্রাচ্যনীতি' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রোগের নামকরণের ধরন থেকে তত্ত্বটির সত্যতা প্রমাণিত হয়। যেমন- এশিয়াটিক কলেরা (১৮২৬), এশিয়াটিক প্লেগ (১৮৪৬), রিফট ভ্যালি ফিভার (১৯০০ শতাব্দী), এশিয়াটিক ফ্লু (১৯৫৬), হংকং ফ্লু (১৯৬৮), মিডলইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (২০১২) ইত্যাদি। পরবর্তী সময়ে অবশ্য নিরপেক্ষ জাতিবাচক নামে সংক্রামক রোগের নামকরণের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। ইতিহাসের এসব মহামারি কেবল কোটি কোটি লোকের প্রাণ সংহারই করেনি, বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাপন, জনমিতি, অর্থনীতি ও ইতিহাস। প্লেগ ছড়ানোর কল্পিত অভিযোগে ইউরোপে ব্যাপক হারে ইহুদি নিধন এবং তাদের দেশত্যাগ বদলে দিয়েছিল মহাদেশটির জনমিতি। কলেরা, বসন্ত কিংবা প্লেগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেশে দেশে সংঘটিত হয়েছে দাঙ্গা। আমাদের দেশে দাঙ্গা সংঘটিত না হলেও কলেরা, বসন্ত কিংবা ম্যালেরিয়া মানুষের জীবন ও অর্থনীতিকে যেমন বদলে দিয়েছে, তেমনি গাঁ উজাড় হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্তও বিরল নয়। স্বস্তির বিষয়, সেইসব ভয়াল মহামারির অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি করোনাকালীন বিশ্বের কোথাও ঘটেনি।
অতীতের মহামারিগুলোর মতো করোনাভাইরাসের তাণ্ডব আপাতত কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে বলে মনে হলেও গবেষক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা আরেকটি ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতির লক্ষণ দেখা দিয়েছে। বিশ্ববাজারের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির দুটি খাত সরাসরি সম্পৃক্ত বলে প্রায় অনিবার্য বিশ্বমন্দার ধকল এড়ানো আমাদের জন্য অসম্ভব না হলেও কঠিন হবে। এক্ষণে আমরা স্মরণ করতে পারি ২০০৭ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আমেরিকান সাব-প্রাইম মর্টগেজ সংকট আমেরিকা থেকে শুরু করে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বের অর্থনীতিকে কম-বেশি ঝাঁকুনি দিলেও বাংলাদেশের ওপর সেই বিপর্যয়ের ধকল খুব উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পড়েনি। এবারেও মৃত্যুহারের নিরিখে এ বিশ্বমারির করাল থাবা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বাংলাদেশকে ততখানি বিপর্যস্ত করতে পারেনি বলেই মানুষের বিশ্বাস। আমাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব, রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সঙ্গতির অভাব, মানুষের মধ্যে সচেতনতার অনুপস্থিতি, স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করার প্রবণতা এবং নাগরিক পরিচ্ছন্নতার প্রবল ঘাটতি- এতসব নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও আমাদের মৃত্যুহার উন্নত বিশ্ব, এমনকি প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় কম। মার্চ-পরবর্তী তিন মাসের স্থবিরতা আমাদের অনেকখানি পিছিয়ে দিলেও, জুনের পর থেকে মানুষের কর্মচাঞ্চল্য ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে।
দেশব্যাপী সবকিছু স্থবির থাকলেও আমাদের কৃষিখাত বরাবরের মতোই সচল ছিল বলে অর্থনীতির একটা প্রধান স্তম্ভ অটুট আছে এখনও। আমরা দেখতে পাচ্ছি প্রবাসী আয় না কমে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে এ প্রবৃদ্ধি টেকসই হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমান রেমিট্যান্সের রমরমা ভাবের পেছনে রয়েছে চাকরিহারা প্রবাসী শ্রমিকদের এককালীন পাওনা এবং ব্যবসায়ীদের সঞ্চিত মুনাফা নিয়ে দেশে ফেরা। মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে মন্দাবস্থা চলতে থাকলে আগামী বছরগুলোতে আমাদের প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হতে বাধ্য। আমাদের পোশাক রপ্তানি বাতিল বা স্থগিত আদেশগুলো ফিরে আসতে শুরু করেছে বলে এ খাতে আপাতত উন্নতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে ইউরোপ বা আমেরিকায় যদি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এসে আঘাত করে, তাহলে এ খাতটি আবার মুখ থুবড়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। অন্যান্য উৎপাদন খাতেও পুনর্বাসনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এ সব লক্ষণ মিলিয়ে ধারণা করা যায় থেমে থাকা অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে।
আমাদের শঙ্কা মিইয়ে যাওয়ার সময় এখনও আসেনি। কারণ, করোনাভাইরাসের প্রকোপ কতদিন চলমান থাকবে তার কোনো পূর্বাভাস এখনও পর্যন্ত কারও পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। অন্যদিকে নতুন ঢেউ শুরু হলে, তার ধাক্কা সামাল দিয়ে প্রবৃদ্ধির নিম্নহার ধরে রাখাও হয়ে পড়বে অসম্ভব। এমনকি আশঙ্কা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাক্কা যদি না-ও আসে, তবু অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি কতখানি বেগবান হবে সেটি নিয়ে সন্দেহ আছে। বিশ্ব অর্থনীতির প্রধান কিছু খাত প্রায় ধ্বংসের মুখোমুখি। সেসব ক্ষতির বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পথটি সংকটাকীর্ণ, সুতরাং সহজেই ধরে নেওয়া যায় বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আশু সম্ভাবনা ক্ষীণ। এক হিসাবে জানা যায়, উদীয়মান অর্থনীতিগুলো যে বিনিয়োগ হারাবে সেটি ২০০৮ সালের মন্দার সময়কার চেয়ে তিনগুণেরও বেশি হতে পারে। করোনার পরিস্থিতির আগে ১৬০টি দেশে মাথাপিছু আয় বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে উল্টো ১৭০ দেশে মাথাপিছু আয়ের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক হবে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
বাংলাদেশে মৃত্যুহার পরিস্থিতি সহনীয় মাত্রায় থাকার কারণে উৎপাদন কর্মকাণ্ড কিছুটা সচল হয়েছে বটে, কিন্তু চাহিদা পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের বহু মানুষ কর্মহীন হয়েছে, গ্রামমুখী হতে বাধ্য হয়েছে অনেকেই, অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত মানুষের দুর্দশা চরমে। এরকম পরিস্থিতিতে চাহিদা বাড়ার বিশাল চ্যালেঞ্জটি মোকাবিলা করাই হবে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ও দুরূহ কাজ। আমরা জানি প্রায় ১০০ বছর আগের মহামন্দার ধকল থেকে উৎরানোর জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর অর্থনীতি একটা বড় ভূমিকা রেখেছিল, কিন্তু এবারের যে মহামন্দা আসবে তার প্রকৃতি হবে ভিন্ন। তার দুটো কারণ, প্রথমত এটি বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতাকে বিরাট প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে, দ্বিতীয়ত এটির কারণে অর্থনীতির সব উপাদান বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।
১৯৩০ সালের মহামন্দা উত্তরণে কর্মসংস্থানের যে ব্যবস্থা গ্রহণ করার অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা গিয়েছিল, এবারের ব্যবস্থাগুলোর সঙ্গে তার পার্থক্য হবে, কারণ, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। সুতরাং সরকারি বিনিয়োগ বাড়ালেই যে কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে সেটা সঠিক বলা যায় না। অথচ আমাদের প্রয়োজন ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করা। এ বিষয়ে আমরা বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনসের সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার তত্ত্বটির কথা স্মরণ করতে পারি। প্রথমদিকে কেইনসের তত্ত্ব হালে পানি পায়নি, কারণ কারোরই ধারণা ছিল না যে ১৯৩০-এর দশকের মন্দাটা এত দীর্ঘস্থায়ী হবে। এটি যখন মহামন্দায় পর্যবসিত হয়, তখন তার বক্তব্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হতে শুরু করে।
আমাদের সরকারি কিছু মহাপ্রকল্প চলমান রয়েছে। তবুও সেসব প্রকল্প ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করবে না। ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে সরকারিভাবে অবারিত করা হয়েছে বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা প্যাকেজ, যা ব্যাংক ঋণ হিসেবে কেবল ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে বিতরণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটিকে কেইনসীয় তত্ত্বের পরামর্শপত্রের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ, এই প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ কেবল ঋণগ্রহীতাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সক্ষম হতে পারে মাত্র, উৎপাদন কর্মকাণ্ড না বাড়লে তাতে কর্মসংস্থান বাড়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পক্ষান্তরে এই প্রণোদনা অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে, এমন আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এতসব নেতিবাচক আশঙ্কার মধ্যেও বাংলাদেশের সদাসংগ্রামী মানুষের অনিঃশেষ কর্মচাঞ্চল্যের ওপর ভরসা রেখে ধারণা করা যায়, করোনাবিধ্বস্ত অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারের বিশালতা। একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য কেবল খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদনের মহাযজ্ঞ আমাদের জিডিপিকে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতায় ভাসমান রাখতে সক্ষম। ঠিক এই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান তথা ক্রয়মতা বাড়ানো হলে গতি ফিরে পাবে অর্থনীতি। করোনাকালীন সকল বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর মানুষ যেভাবে সকল ভয় উপেক্ষা করে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে নেমে এসেছে, তাতে বিশ্বাস দৃঢ়মূল হয়, করোনার অভিঘাত মোকাবিলা করতে সক্ষম আমরা। আমরা জানি, সকল বিপর্যয় থেকে মাথা তুলে দাঁড়ায় কিছু নতুন সম্ভাবনা। করোনার কারণেই হয়তো এরকম নতুন সম্ভাবনার দিগন্তগুলো বিস্তৃত হবে। ওষুধ শিল্প, স্বাস্থ্য উপকরণ ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ইতোমধ্যে আইএমএফ শুনিয়েছে আশার বাণী। চলতি বছরের এপ্রিলে সংস্থাটির পূর্বাভাস ছিল আমাদের প্রবৃদ্ধি হবে ২ শতাংশ, কিন্তু পাঁচ মাসের ব্যবধানে তারা সংশোধিত হিসাবে বলছে, এই প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, এই উপমহাদেশে সর্বোচ্চ। যদিও বিশ্বব্যাংক ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের হিসাবের সঙ্গে সংস্থাটির পূর্বাভাসের যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
তবু সকল প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মাথা তুলে দাঁড়াবার মতো আশাবাদী জাতি হিসেবে আমরা জানি, কিছুমাত্রার নিবেদিত ও আন্তরিক উদ্যোগ নিশ্চিত করা গেলে 'আমরা করব জয় নিশ্চয়'। বিগত বছরগুলোতে বিশ্বকে তাক লাগানো বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রগতিকে যেরকম বলা হতো 'বাংলাদেশ প্যারাডক্স' (অবিশ্বাস্য বাংলাদেশ), বর্তমান মহামারির ধকল কাটিয়ে উঠলে বিশেষণটি হয়তো আবারও ব্যবহার করা হবে আমাদের উদ্দেশে। 'অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো' আর 'সকল দ্বন্দ্ব বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো' সেই প্রত্যাশা নিয়ে আমরা অপেক্ষা করব, জানি 'শাশ্বত রাত্রির বুকে সকলি অনন্ত সূর্যোদয়।'
লেখক
প্রাবন্ধিক
কথাসাহিত্যিক
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com