
'নানান বরণ গাভীরে ভাই, একই বরণ দুধ'
পাকিস্তানের ভূত দর্শন
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
--

যতীন সরকার রচিত 'পাকিস্তানের জন্মমৃত্যু-দর্শন' বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ইতিহাসের অনন্য দলিল। 'আত্মসূত্র' অংশে গ্রন্থটি থেকে
নির্বাচিত অংশ...
আমাদের গাঁয়ে ও তার আশপাশের সব গাঁয়ে যেসব মানুষকে ছেলেবেলা থেকে দেখেছি, যাদের সঙ্গে সব সময় ওঠাবসা করেছি, তাদের শতকরা আশি ভাগই অসচ্ছল, অনক্ষর, খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সবারই সারা বছর ধরেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এদের কারো নাম মফিজ শেখ, আক্কাইল্যা, পাইন্যার বাপ আর কারো-বা নেউলা, অপর্ত, রইস্যা, ফটিক। আদমশুমারির সময় এদের কারো নামের পাশে লেখা হয় মুসলমান, কারো পাশে হিন্দু। নাম শুনেই অবশ্য কে হিন্দু কে মুসলমান সব সময় বোঝা যায় না। যার নাম রইস্যা সে মুসলমানও হতে পারে, হিন্দুও হতে পারে। যদি কখনো কোনো কারণে তার নাম লেখার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবেই হয়তো ধরা পড়বে যে ওর আসল নাম হয় রসিক, নয় তো রসিদ। রসিক হলে সে হিন্দু আর রসিদ হলে মুসলমান। এ কথাও অবিশ্য সব সময় খাটে না। রসিক নামে মানুষেরও মুসলমান হতে কোনো বাধা নেই। ফটিক বা আকইল্যা বা নেউলা নাম শুনেই-বা কে বলে দিতে পারবে সে হিন্দু না মুসলমান? আর মুসলমান হলেই-বা কী, হিন্দু হলেই-বা কী। যে সংস্কৃত মন্ত্র দিয়ে হিন্দুর হিন্দুত্ব দেবতার মন্দিরে ও আরবি সুরা দিয়ে মুসলমানের মুসলমানত্ব আল্লার মসজিদে গ্রাহ্য হয়, সেই মন্ত্র বা সুরা কোনোটার সঙ্গেই তার প্রত্যক্ষ পরিচয় বা সম্পর্ক নেই। পূজা কিংবা রোজার প্রতি তার সল্ফ্ভ্রমের অন্ত নেই, পুরাণ কিংবা কোরানের প্রতিও তার গভীর ভক্তি। কিন্তু পুরাণ কিংবা কোরান দুয়েরই অক্ষর তার অচেনা। এর জন্য তাকে পুরুত কিংবা মোল্লার মুখেই ঝাল খেতে হয়, যদিও এ রকম ঝাল খেতে সে সবসময় রাজি হয় না, কায়দা পেলেই ওদের ওপর নানাভাবে ঝাল ঝাড়ে। তার ছড়ায় প্রবাদে গল্পে গাথায় এ রকম ঝাল ঝাড়ার বহুত দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে।
জন্মের অধিকারেই বামুন হয় হিন্দুর পুরুত, শূদ্র তাকে দেবতা বলেই মানতে বাধ্য। শূদ্র তো আর বেদ পড়তে পারে না, তাই বামুনের কথাই শূদ্রের কাছে বেদবাক্য। তবু সেই বামুনকেও সে ছেড়ে কথা কয় না। গায়ের শূদ্রদেরই ছড়া কাটতে শুনেছি- 'কলির বামুন ঢোঁড়া সাপ, যে না মারে তার পাপ।' অর্থাৎ বামুনরা যে প্রচার করে বামুনের গায়ে শূদ্র যদি হাত তোলে তবে সে পাপে তার নরকবাস অনিবার্য, সে কথারই ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবাদ এই ছড়াটি। সত্যযুগের বামুনের ব্রহ্মশক্তি থাকলেও থাকতে পারে, সে যুগের বামুনের গায়ে হাত তোলা হয়তো মহাপাপই ছিল। কিন্তু কলিযুগের বামুনের সেই ব্রক্ষতেজ মোটেই নেই, সে এখন ঢোঁড়া সাপের মতোই শুধু ফোঁস ফোঁস করে। একে না মারাই তো বরং মহাপাপ। বামুনকে শূদ্ররা 'ঠাকুর' বলে। ঠাকুর মানে দেবতা। কিন্তু কলিযুগের ঠাকুরদেবতাদের চরিত্র যে ফুলের মতো পবিত্র নয় তা জানে বলেই ঘৃণা ও বিদ্রুপের সঙ্গে গাঁয়ের মানুষ ছড়া কাটে- 'ঠাকুর ঠুকুর এগারো, জাইত্যা ধরো পাগারো। যদি ঠাকুর লড়ে, ঘাড় ভাইঙ্গা মরে।' 'পাগার' মানে ডোবা। ডোবার জলে বামুন ঠাকুরকে ঠেসে ধরতে হবে এবং তারপরও যদি সে নড়াচড়া করতে চায়, তবে ঘাড় ভেঙে মৃত্যু অনিবার্য। বামুনরা তাদের সুবিধা ও মতলব মতো শাস্ত্রের ব্যাখ্যা হাজির করে। দেখেছি, এ বিষয়েও গ্রাম্য প্রাকৃতজন একান্ত সচেতন। নেত্রকোনার কবিয়ালরা কবিগানের আসরে এমন একটা মজাদার গল্প পরিবেশন করেন যাতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাজক বামুন যদি হয় বুনো ওল তবে যজমান শূদ্র হচ্ছে বাঘা তেঁতুল।
হিন্দুদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের একটি উপকরণ হচ্ছে কুশ। উত্তর ভারতে কুশ নামে যে তৃণটি জন্মে বাংলায় তারই বিকল্প রূপে যা ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে 'কাশ' বা 'কাইশ্যা'। (শরৎকালে যাতে ফোটে 'কাশফুল')। এক বামুন ঠাকুর গিয়েছেন যজমান বাড়িতে শ্রাদ্ধের পৌরোহিত্য করতে। যজমান বলল, 'কর্তা মশায়, দয়া করে আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখনো কাইশ্যা আনা হয়নি তাই। কর্তামশায়ের ছিল ভীষণ তাড়া। তাকে এক্ষুনি আবার আরেক বাড়িতে পুরুতগিরি করতে ছুটতে হবে। তাই যজমানের কথা শেষ না করতে দিয়েই বললেন, কাইশ্যা লাগবে না, কিছু খ্যাড় (খড়) নিয়ে এসো।' কাইশার কাজ খ্যাড় দিয়ে হয় কী করে?
কর্তা বলেন, 'হয়, হয়। বিপ্রস্য বচনং মূলং খ্যাড়ং কাইশ্যা। মানে হলো গিয়ে ব্রাহ্মণ যদি বলে দেন তো খ্যাড়ই কাইশ্যা হয়ে যায়। ব্রাহ্মণের কথাই তো শাস্ত্র ! নিয়ে এলো এক গাছা খ্যাড়।'
খ্যাড় দিয়েই শ্রাদ্ধের কাজ সারা হলো। এবার বামুন ঠাকুরকে দক্ষিণা দেওয়ার পালা। যজমান একটি থলে ঠাকুরের হাতে তুলে দিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলো। থলেটা বেশ ভারী মনে হচ্ছে। ঠাকুর মশাই ভীষণ খুশি। কিন্তু থলের মুখ খুলেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, 'কী, আমার সঙ্গে তুই ঠাট্টা করিস? পয়সার বদলে থলের ভেতর পুরে দিয়েছিস কতকগুলো ঝিক।'
নেত্রকোনা এলাকায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল ভাঙা খোলামকুচিকে বলে ঝিক। ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের খেলনা পয়সা বানায় এই ঝিক দিয়ে। ঝিকের থলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঠাকুর মশাই চিৎকার করতে লাগলেন, আমি কি তোর ঠাট্টার পাত্র? তুই ব্যাটা নির্বংশ হবি, তোর হাতে কুষ্ঠ হবে, তুই...।'
যজমান শান্ত কণ্ঠে বলল, 'চটবেন না কর্তা। আপনি যেমন খ্যাড় দিয়ে কাইশ্যার কাজ সেরেছেন, আমিও তেমনি পয়সার বদলে ঝিক দিয়েছি। ব্রাহ্মণের কথায় যদি খ্যাড়ই কাইশ্যা হয়ে যেতে পারে তো যজমানের কথায় ঝিক কেন পয়সা হবে না? মনে রাখবেন যজমালনস্য বচনং মূলং ঝিকং পয়সা। আমি এই ঝিকই আপনাকে দক্ষিণা দিলাম।'
সুযোগ পেলেই গাঁয়ের মানুষ বামুন ঠাকুরদের এই 'ঝিকংপয়সা'র গল্পটি শুনিয়ে দেয়।
বামুন ঠাকুরদের মতো মোল্লাদের নিয়েও গ্রামের প্রাকৃতজনদের একই রকম ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে দেখেছি। 'কাঠমোল্লার' কথাটার মধ্যেই তো রয়ে গেছে ঘৃণা ও অবজ্ঞা। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত'- এই প্রবাদ মোল্লাদের সংকীর্ণতা ও কূপমণ্ডূকতার কথাই জানিয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে প্রকৃত আলেমকে সম্মান জানাতে প্রাকৃতজনও ভূল করে না।
বামুন ঠাকুরের মতন যে মোল্লারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, তাদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে গায়ের মানুষ ছড়া বানিয়েছে-
সাত বাড়ির ভাত খাইয়া/মোল্লা মরে পেট লইয়া।
চালো (চালে) উইঠ্যা দেখে/আর নি কেউ ডাকে।
নির্বাচিত অংশ...
আমাদের গাঁয়ে ও তার আশপাশের সব গাঁয়ে যেসব মানুষকে ছেলেবেলা থেকে দেখেছি, যাদের সঙ্গে সব সময় ওঠাবসা করেছি, তাদের শতকরা আশি ভাগই অসচ্ছল, অনক্ষর, খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের সবারই সারা বছর ধরেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এদের কারো নাম মফিজ শেখ, আক্কাইল্যা, পাইন্যার বাপ আর কারো-বা নেউলা, অপর্ত, রইস্যা, ফটিক। আদমশুমারির সময় এদের কারো নামের পাশে লেখা হয় মুসলমান, কারো পাশে হিন্দু। নাম শুনেই অবশ্য কে হিন্দু কে মুসলমান সব সময় বোঝা যায় না। যার নাম রইস্যা সে মুসলমানও হতে পারে, হিন্দুও হতে পারে। যদি কখনো কোনো কারণে তার নাম লেখার প্রয়োজন দেখা দেয়, তবেই হয়তো ধরা পড়বে যে ওর আসল নাম হয় রসিক, নয় তো রসিদ। রসিক হলে সে হিন্দু আর রসিদ হলে মুসলমান। এ কথাও অবিশ্য সব সময় খাটে না। রসিক নামে মানুষেরও মুসলমান হতে কোনো বাধা নেই। ফটিক বা আকইল্যা বা নেউলা নাম শুনেই-বা কে বলে দিতে পারবে সে হিন্দু না মুসলমান? আর মুসলমান হলেই-বা কী, হিন্দু হলেই-বা কী। যে সংস্কৃত মন্ত্র দিয়ে হিন্দুর হিন্দুত্ব দেবতার মন্দিরে ও আরবি সুরা দিয়ে মুসলমানের মুসলমানত্ব আল্লার মসজিদে গ্রাহ্য হয়, সেই মন্ত্র বা সুরা কোনোটার সঙ্গেই তার প্রত্যক্ষ পরিচয় বা সম্পর্ক নেই। পূজা কিংবা রোজার প্রতি তার সল্ফ্ভ্রমের অন্ত নেই, পুরাণ কিংবা কোরানের প্রতিও তার গভীর ভক্তি। কিন্তু পুরাণ কিংবা কোরান দুয়েরই অক্ষর তার অচেনা। এর জন্য তাকে পুরুত কিংবা মোল্লার মুখেই ঝাল খেতে হয়, যদিও এ রকম ঝাল খেতে সে সবসময় রাজি হয় না, কায়দা পেলেই ওদের ওপর নানাভাবে ঝাল ঝাড়ে। তার ছড়ায় প্রবাদে গল্পে গাথায় এ রকম ঝাল ঝাড়ার বহুত দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে।
জন্মের অধিকারেই বামুন হয় হিন্দুর পুরুত, শূদ্র তাকে দেবতা বলেই মানতে বাধ্য। শূদ্র তো আর বেদ পড়তে পারে না, তাই বামুনের কথাই শূদ্রের কাছে বেদবাক্য। তবু সেই বামুনকেও সে ছেড়ে কথা কয় না। গায়ের শূদ্রদেরই ছড়া কাটতে শুনেছি- 'কলির বামুন ঢোঁড়া সাপ, যে না মারে তার পাপ।' অর্থাৎ বামুনরা যে প্রচার করে বামুনের গায়ে শূদ্র যদি হাত তোলে তবে সে পাপে তার নরকবাস অনিবার্য, সে কথারই ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবাদ এই ছড়াটি। সত্যযুগের বামুনের ব্রহ্মশক্তি থাকলেও থাকতে পারে, সে যুগের বামুনের গায়ে হাত তোলা হয়তো মহাপাপই ছিল। কিন্তু কলিযুগের বামুনের সেই ব্রক্ষতেজ মোটেই নেই, সে এখন ঢোঁড়া সাপের মতোই শুধু ফোঁস ফোঁস করে। একে না মারাই তো বরং মহাপাপ। বামুনকে শূদ্ররা 'ঠাকুর' বলে। ঠাকুর মানে দেবতা। কিন্তু কলিযুগের ঠাকুরদেবতাদের চরিত্র যে ফুলের মতো পবিত্র নয় তা জানে বলেই ঘৃণা ও বিদ্রুপের সঙ্গে গাঁয়ের মানুষ ছড়া কাটে- 'ঠাকুর ঠুকুর এগারো, জাইত্যা ধরো পাগারো। যদি ঠাকুর লড়ে, ঘাড় ভাইঙ্গা মরে।' 'পাগার' মানে ডোবা। ডোবার জলে বামুন ঠাকুরকে ঠেসে ধরতে হবে এবং তারপরও যদি সে নড়াচড়া করতে চায়, তবে ঘাড় ভেঙে মৃত্যু অনিবার্য। বামুনরা তাদের সুবিধা ও মতলব মতো শাস্ত্রের ব্যাখ্যা হাজির করে। দেখেছি, এ বিষয়েও গ্রাম্য প্রাকৃতজন একান্ত সচেতন। নেত্রকোনার কবিয়ালরা কবিগানের আসরে এমন একটা মজাদার গল্প পরিবেশন করেন যাতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যাজক বামুন যদি হয় বুনো ওল তবে যজমান শূদ্র হচ্ছে বাঘা তেঁতুল।
হিন্দুদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের একটি উপকরণ হচ্ছে কুশ। উত্তর ভারতে কুশ নামে যে তৃণটি জন্মে বাংলায় তারই বিকল্প রূপে যা ব্যবহার করা হয় তা হচ্ছে 'কাশ' বা 'কাইশ্যা'। (শরৎকালে যাতে ফোটে 'কাশফুল')। এক বামুন ঠাকুর গিয়েছেন যজমান বাড়িতে শ্রাদ্ধের পৌরোহিত্য করতে। যজমান বলল, 'কর্তা মশায়, দয়া করে আপনাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। কারণ এখনো কাইশ্যা আনা হয়নি তাই। কর্তামশায়ের ছিল ভীষণ তাড়া। তাকে এক্ষুনি আবার আরেক বাড়িতে পুরুতগিরি করতে ছুটতে হবে। তাই যজমানের কথা শেষ না করতে দিয়েই বললেন, কাইশ্যা লাগবে না, কিছু খ্যাড় (খড়) নিয়ে এসো।' কাইশার কাজ খ্যাড় দিয়ে হয় কী করে?
কর্তা বলেন, 'হয়, হয়। বিপ্রস্য বচনং মূলং খ্যাড়ং কাইশ্যা। মানে হলো গিয়ে ব্রাহ্মণ যদি বলে দেন তো খ্যাড়ই কাইশ্যা হয়ে যায়। ব্রাহ্মণের কথাই তো শাস্ত্র ! নিয়ে এলো এক গাছা খ্যাড়।'
খ্যাড় দিয়েই শ্রাদ্ধের কাজ সারা হলো। এবার বামুন ঠাকুরকে দক্ষিণা দেওয়ার পালা। যজমান একটি থলে ঠাকুরের হাতে তুলে দিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলো। থলেটা বেশ ভারী মনে হচ্ছে। ঠাকুর মশাই ভীষণ খুশি। কিন্তু থলের মুখ খুলেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন, 'কী, আমার সঙ্গে তুই ঠাট্টা করিস? পয়সার বদলে থলের ভেতর পুরে দিয়েছিস কতকগুলো ঝিক।'
নেত্রকোনা এলাকায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল ভাঙা খোলামকুচিকে বলে ঝিক। ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের খেলনা পয়সা বানায় এই ঝিক দিয়ে। ঝিকের থলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ঠাকুর মশাই চিৎকার করতে লাগলেন, আমি কি তোর ঠাট্টার পাত্র? তুই ব্যাটা নির্বংশ হবি, তোর হাতে কুষ্ঠ হবে, তুই...।'
যজমান শান্ত কণ্ঠে বলল, 'চটবেন না কর্তা। আপনি যেমন খ্যাড় দিয়ে কাইশ্যার কাজ সেরেছেন, আমিও তেমনি পয়সার বদলে ঝিক দিয়েছি। ব্রাহ্মণের কথায় যদি খ্যাড়ই কাইশ্যা হয়ে যেতে পারে তো যজমানের কথায় ঝিক কেন পয়সা হবে না? মনে রাখবেন যজমালনস্য বচনং মূলং ঝিকং পয়সা। আমি এই ঝিকই আপনাকে দক্ষিণা দিলাম।'
সুযোগ পেলেই গাঁয়ের মানুষ বামুন ঠাকুরদের এই 'ঝিকংপয়সা'র গল্পটি শুনিয়ে দেয়।
বামুন ঠাকুরদের মতো মোল্লাদের নিয়েও গ্রামের প্রাকৃতজনদের একই রকম ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতে দেখেছি। 'কাঠমোল্লার' কথাটার মধ্যেই তো রয়ে গেছে ঘৃণা ও অবজ্ঞা। মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত'- এই প্রবাদ মোল্লাদের সংকীর্ণতা ও কূপমণ্ডূকতার কথাই জানিয়ে দেয়। কিন্তু তাই বলে প্রকৃত আলেমকে সম্মান জানাতে প্রাকৃতজনও ভূল করে না।
বামুন ঠাকুরের মতন যে মোল্লারা ধর্ম নিয়ে ব্যবসা করে, তাদের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে গায়ের মানুষ ছড়া বানিয়েছে-
সাত বাড়ির ভাত খাইয়া/মোল্লা মরে পেট লইয়া।
চালো (চালে) উইঠ্যা দেখে/আর নি কেউ ডাকে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com