
শুঁটকি তৈরি ও শুকানোর ধুম
কর্ণফুলীপাড়ে উৎসব
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

থরে থরে সাজানো শুঁটকি শুকানো হচ্ছে রোদে - মো. রাশেদ
'লাক্ষ্যা হুঁনির তরকারি বেশি অইয়ে ঝাল/কী সালুন রাইন্ধে বউয়ে/পুরি যারগৈ গাল'- চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, ভান্ডারি ও মরমি গানের শিল্পী প্রয়াত আবদুল গফুর হালীর কথায় শিল্পী শেফালী ঘোষ ও শ্যামসুন্দর বৈষ্ণবের গাওয়া এ গানেই লুকিয়ে আছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের শুঁটকির আদ্যোপান্ত। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে এই শুঁটকি। শীত এলে এ অঞ্চলের মানুষের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় স্থান করে নেয় নানা ধরনের শুঁটকি। রান্নায় তরকারির প্রধান পদ হিসেবেও এটিকে রাখেন ভোজনপ্রিয় অনেকে। আর তাই শীত আসার আগের এই সময়ে শুঁটকি তৈরি ও শুকানোর ধুম পড়েছে কর্ণফুলী নদীতীরে। শুরু হয়েছে 'শুঁটকি উৎসব'। এ কারণে তীরবর্তী এলাকার বাতাসে পাওয়া যাচ্ছে শুঁটকির ঘ্রাণ। হচ্ছে কোটি টাকার ব্যবসাও। আবহাওয়াগত কারণে কর্ণফুলীর তীরে প্রক্রিয়াজাত হওয়া শুঁটকি স্বাদ ও গুণগত মানে অন্য এলাকার চেয়ে আলাদা। এ কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনরসিক অনেকে শুঁটকি কিনতে ভিড় জমান চট্টগ্রামের বৃহৎ চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জের শুঁটকিপল্লিতে।
শুঁটকি দিয়ে ভর্তা, বেগুন দিয়ে শুঁটকি রান্না, ডাল দিয়ে শুঁটকির কারি, শুঁটকির মাথা দিয়ে বিশেষভাবে ভর্তা এবং শুঁটকি দিয়ে সালাদ তৈরিতে প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম। করোনাভাইরাসের কারণে টানা কয়েক মাস বিক্রি বন্ধ থাকায় এবারের শীতে বাড়তি শুঁটকি বিক্রি হওয়ার আশায় আছেন ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সংশ্নিষ্টরা। শীতের আগের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় কম সময়ে শুঁটকি শুকায়। তাই কর্ণফুলী নদীর উত্তর-দক্ষিণ তীরঘেঁষা বাকলিয়া, ইছানগর, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট, ফিশারি ঘাট, চাক্তাই ও রাজাখাল এলাকার তীরে বৃহৎ পরিসরে শুঁটকি উৎপাদন ও শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। তীরবর্তী স্পটগুলোতে প্রতিদিন সূর্যের তাপে ছোট-বড় ১৫ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হয়। এসব তীর থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। তীরে সারি সারি চাঙ (শুঁটকি শুকানোর বিশেষ ব্যবস্থা) সাজিয়ে শুকানো হচ্ছে ছুরি, ফাঁইস্যা, ইচা, লইট্টা, লাক্ষ্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া ও ছোট-বড় মিশালি জাতের শুঁটকি। একেকটি চাঙে কাজ করে ২০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। এখান থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই চলে কয়েকশ পরিবার।
সরেজমিন বাকলিয়া শুঁটকিপল্লিতে প্রবেশের কিছু আগে থেকেই চোখে পড়ে অনেক চাঙ ও মাচাঙে সারি সারি সাজিয়ে বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি শুকানোর দৃশ্য। কোনো চাঙে ছুরি, কোনোটিতে লইট্টা, কোনোটিতে আবার লাক্ষ্যা শুঁটকি ঝুলিয়ে সূর্যের তাপে শুকানো হচ্ছে। সমুদ্র থেকে মাছ নিয়ে নৌকা এলে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন তীরে এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করছে। মাছ প্রক্রিয়াজাত করে শুকানোর পর নিয়ে আসা হয় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জের শুঁটকিপল্লিতে। বৃহৎ এই তিন মোকামে গড়ে উঠেছে শুঁটকি বিক্রির কয়েকশ দোকান। এসব দোকান থেকে জেলার ১৫ উপজেলাসহ এ অঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় শুঁটকি কিনে নিয়ে যান ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। পরিবারের জন্যও ভালো মানের শুঁটকি কিনতে অনেকে ভিড় করেন।
আছাদগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা অনিল বড়ূয়া বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শুঁটকির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
শুঁটকি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্রিন ওয়ার্ল্ড ইনফেক্টের স্বত্বাধিকারী মাহবুব রানা বলেন, করোনার কারণে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাই শীত মৌসুমে বাড়তি চাহিদাকে টার্গেট করে সবাই বাড়তি শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করছেন।
আছাদগঞ্জ শুঁটকিপল্লির মেসার্স রহিম ব্রাদার্সের মো. রহিম বলেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই ছুরি, ইচা ও লইট্টা শুঁটকি বেশি পছন্দ করেন। প্রতি কেজি ছুরি মানভেদে ১ হাজার থেকে ১৮০০ টাকা, ইচা ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, লইট্টা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ফাঁইস্যা শুঁটকি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুঁটকি কিনতে আসা হানিফ চৌধুরী বলেন, পরিবার ও বিদেশে থাকা ছেলের জন্য পাঠাতে ছুরি, ইচা ও লইট্টা শুঁটকি কিনতে এসেছি।
শুঁটকি শুকানোর কাজে কর্মরত চর পাথরঘাটার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, শুঁটকির কাজ করে প্রতিদিনের আয় দিয়েই চলে ছয় সদস্যের সংসার।
ডাঙ্গারচরের শ্রমিক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটি তীরে আশানুরূপ শুঁটকি শুকানো হচ্ছে। আশা করছি, এবার বিক্রিও ভালো হবে।
শুঁটকি দিয়ে ভর্তা, বেগুন দিয়ে শুঁটকি রান্না, ডাল দিয়ে শুঁটকির কারি, শুঁটকির মাথা দিয়ে বিশেষভাবে ভর্তা এবং শুঁটকি দিয়ে সালাদ তৈরিতে প্রসিদ্ধ চট্টগ্রাম। করোনাভাইরাসের কারণে টানা কয়েক মাস বিক্রি বন্ধ থাকায় এবারের শীতে বাড়তি শুঁটকি বিক্রি হওয়ার আশায় আছেন ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ সংশ্নিষ্টরা। শীতের আগের এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকায় কম সময়ে শুঁটকি শুকায়। তাই কর্ণফুলী নদীর উত্তর-দক্ষিণ তীরঘেঁষা বাকলিয়া, ইছানগর, ডাঙ্গারচর, কর্ণফুলী ঘাট, ফিশারি ঘাট, চাক্তাই ও রাজাখাল এলাকার তীরে বৃহৎ পরিসরে শুঁটকি উৎপাদন ও শুকানোর কাজ শুরু হয়েছে। তীরবর্তী স্পটগুলোতে প্রতিদিন সূর্যের তাপে ছোট-বড় ১৫ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হয়। এসব তীর থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। তীরে সারি সারি চাঙ (শুঁটকি শুকানোর বিশেষ ব্যবস্থা) সাজিয়ে শুকানো হচ্ছে ছুরি, ফাঁইস্যা, ইচা, লইট্টা, লাক্ষ্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, পোয়া ও ছোট-বড় মিশালি জাতের শুঁটকি। একেকটি চাঙে কাজ করে ২০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। এখান থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই চলে কয়েকশ পরিবার।
সরেজমিন বাকলিয়া শুঁটকিপল্লিতে প্রবেশের কিছু আগে থেকেই চোখে পড়ে অনেক চাঙ ও মাচাঙে সারি সারি সাজিয়ে বিভিন্ন ধরনের শুঁটকি শুকানোর দৃশ্য। কোনো চাঙে ছুরি, কোনোটিতে লইট্টা, কোনোটিতে আবার লাক্ষ্যা শুঁটকি ঝুলিয়ে সূর্যের তাপে শুকানো হচ্ছে। সমুদ্র থেকে মাছ নিয়ে নৌকা এলে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন তীরে এক থেকে দেড় হাজার শ্রমিক কাজ করছে। মাছ প্রক্রিয়াজাত করে শুকানোর পর নিয়ে আসা হয় চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আছাদগঞ্জের শুঁটকিপল্লিতে। বৃহৎ এই তিন মোকামে গড়ে উঠেছে শুঁটকি বিক্রির কয়েকশ দোকান। এসব দোকান থেকে জেলার ১৫ উপজেলাসহ এ অঞ্চলের বেশকিছু এলাকায় শুঁটকি কিনে নিয়ে যান ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা। পরিবারের জন্যও ভালো মানের শুঁটকি কিনতে অনেকে ভিড় করেন।
আছাদগঞ্জের শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির নেতা অনিল বড়ূয়া বলেন, বছরের অন্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শুঁটকির চাহিদা বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
শুঁটকি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্রিন ওয়ার্ল্ড ইনফেক্টের স্বত্বাধিকারী মাহবুব রানা বলেন, করোনার কারণে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাই শীত মৌসুমে বাড়তি চাহিদাকে টার্গেট করে সবাই বাড়তি শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করছেন।
আছাদগঞ্জ শুঁটকিপল্লির মেসার্স রহিম ব্রাদার্সের মো. রহিম বলেন, বেশিরভাগ ক্রেতাই ছুরি, ইচা ও লইট্টা শুঁটকি বেশি পছন্দ করেন। প্রতি কেজি ছুরি মানভেদে ১ হাজার থেকে ১৮০০ টাকা, ইচা ১ হাজার ৫৫০ থেকে ২ হাজার টাকা, লইট্টা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা ও ফাঁইস্যা শুঁটকি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুঁটকি কিনতে আসা হানিফ চৌধুরী বলেন, পরিবার ও বিদেশে থাকা ছেলের জন্য পাঠাতে ছুরি, ইচা ও লইট্টা শুঁটকি কিনতে এসেছি।
শুঁটকি শুকানোর কাজে কর্মরত চর পাথরঘাটার বাসিন্দা মমতাজ বেগম বলেন, শুঁটকির কাজ করে প্রতিদিনের আয় দিয়েই চলে ছয় সদস্যের সংসার।
ডাঙ্গারচরের শ্রমিক জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটি তীরে আশানুরূপ শুঁটকি শুকানো হচ্ছে। আশা করছি, এবার বিক্রিও ভালো হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com