হত্যা মামলায় জামাতার জামিন চাইতে গিয়ে বিপাকে শ্বশুর

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০ । ২১:১৩

সমকাল প্রতিবেদক

মেয়েকে হত্যার ঘটনায় ২০১৮ সালে জামাইকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন শ্বশুর। অথচ প্রায় দুই বছর পর এসে সেই জামাতার জামিনের পক্ষেই সাফাই দিয়েছেন তিনি। জামিনের এফিডেভিট আবেদনে ঝালকাঠীর জলিল দুয়ারি বলেন, জামাতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছিল।

এ ঘটনায় শ্বশুরের বিরুদ্ধেই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি আসামি জামাতা মোহাম্মদ কাউসার গাজীকেও জামিন দেওয়া হয়েছে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও মো. বদরুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, প্রায়ই জামিন পাওয়ার জন্য আসমিপক্ষ প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিনের চেষ্টা করে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া উচিত। তাই এ ঘটনায় মামলার বাদী জলিল দুয়ারির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসাদ মিয়া। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্ল্যাহ।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পটুয়াখালীতে সাথী আক্তার নামে এক নারীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় পটুয়াখালী সদর থানায় নিহতের বাবা জলিল দুয়ারি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলায় নিহতের স্বামী মোহাম্মদ কাউসার গাজীকে আসামি করা হয়। এরপর আদালত আসামি কাউসার গাজীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় আদালত। পরে ওই ঘটনায় নিহত সাথীর মেয়ে শিশু (৫) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সে বলে, আমার আম্মুকে আব্বু লাঠি দিয়ে মাথায় এবং দাদা শরীরে আঘাত করে হত্যা করে। পরে ছাগলের রশি দিয়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে। ময়নাতদন্তেও আঘাতের ফলে মৃত্যুর বিষয়টি প্রমাণিত হয়।

কিন্ত দুই বছর পর এসে জলিল দুয়ারি এফিডেভিট সহকারে হাইকোর্টকে জানান, তিনি প্ররোচিত হয়ে এ হত্যা মামলা করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় কাউসার গাজীকে অব্যাহতি দিয়ে জামিন দিলে তার কোনও আপত্তি নেই।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে শুনানিকালে হাইকোর্ট বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে মামলা করা ঠিক হয়নি, অথবা মিথ্যা এফিডেভিট দিয়ে আসামির জামিনে সহযোগিতা করাও তার ঠিক হয়নি। তাই এ ঘটনায় পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।

এদিকে মামলার বাদী ঝালকাঠীর জলিল দুয়ারি এফিডেভিটে বলেন, 'আমার মেয়ে সাথী আক্তারের গর্ভে এবং আমার মেয়ে জামাই কাওসার গাজীর ঔরসে শিশু কন্যা (৫) ও ছেলে শিশুর (১) জন্ম হয়। আমার মেয়ে সাথী আক্তার জামাইকে ভুল বুঝিয়ে তার সঙ্গে রাগান্বিত হয়ে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর সেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। এই আত্মহত্যায় আমার মেয়ের জামাই ও তার বাবা- মা জড়িত না। কিন্ত পরবর্তীতে কিছু কুচক্রী লোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি। যা সত্য নয়। আমার মেয়ের জামাই দুটি নাবালক সন্তানের পিতা। ওদের ভবিষৎ দেখাশোনার জন্য মামলাটি পরিচালনা করা আমার আবিশ্যকতা নেই এবং মামলা থেকে আসামিকে অব্যহতি দিলে আমার আপত্তি নেই।'


© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com