
করদাতাদের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর
ট্যাক্স কার্ড পেলেন ১৪১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান
প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২১ । ২০:৫৫
সমকাল প্রতিবেদক

অতিথিদের কাছ থেকে সন্মাননা গ্রহণ করছেন শীর্ষ করদাতারা- সমকাল
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, রাজস্ব সংগ্রহ বাড়াতে করদাতা প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। রেস্টুরেন্ট বা বিভিন্ন ধরনের করদাতা প্রতিষ্ঠানকে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় আনা গেলে সেখানে কর কর্মকর্তাদের অভিযানের দরকার হবে না। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে। আমদানি-রপ্তানি পর্যায়ে বিশেষ নজর দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার দেশের শীর্ষ করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
২০১৯-২০ করবর্ষের জন্য জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৭৬ জন ব্যক্তি, ৫৩টি কোম্পানি ও অন্যান্য খাতে ১২ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মোট ১৪১টি ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা পত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন ও জেলাভিত্তিক সর্বোচ্চ করদাতা এবং দীর্ঘ সময়ের করদাতা হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন ৫২৪ জন।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে জাতীয় পর্যায়ের শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি ও শীর্ষ পাঁচ ব্যক্তি করদাতাকে ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা পত্র দেওয়া হয়। অন্যান্য শীর্ষ করদাতাদের জন্য নিজ নিজ কর অঞ্চলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। অনুষ্ঠানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী আটজন কর কর্মকর্তার পরিবারকে সমবেদনা স্মারক দেওয়া হয়েছে।
মুস্তফা কামাল আরও বলেন, জনগণ কর দিতে চায়, কিন্তু এনবিআর নিতে পারছে না। ১০ বছর আগে কর সংগ্রহ যেখানে ছিল, এখনও সেখানেই রয়েছে। করের পরিমাণ বেড়েছে, কিন্তু জিডিপির অনুপাতে হার বাড়েনি। হার বাড়াতে করহার কমিয়ে করের আওতা বাড়াতে হবে। উচ্চ করহার থাকলে জনগণ কর দিতে আগ্রহী হবেন না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু সরকার নিজেদের টাকায় করছে। এ ছাড়া পায়রা বন্দর, মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর, মেট্রোরেলসহ অনেক মেগা প্রকল্প রয়েছে। এমন আরও অনেক কিছুই করা সম্ভব, যদি যারা কর দিতে সক্ষম, তারা সবাই কর দেন।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, জনগণকে কর দেওয়ায় আগ্রহী করতে কর পরিশোধ-সংক্রান্ত সেবা আরও সহজ করা দরকার। কর ভীতি দূর করতে হবে। এজন্য এনবিআরের দক্ষতা বাড়ানো দরকার। তিনি প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কর-জিডিপি অনুপাত সন্তোষজনক নয়। এ অনুপাত বাড়াতে এনবিআর কাজ করছে। ইতোমধ্যে কর আহরণে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করের আওতা বাড়াতে বিআরটিএ ও সিটি করপোরেশন থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েকটি সংস্থা থেকে তথ্য নেওয়া হবে।
এনবিআরের সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু দেশের অর্থে নির্মাণ হচ্ছে। এটা করদাতাদের অবদান। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়েছে, দেশবাসী চাইলে সোনার বাংলা গড়া সম্ভব। এনবিআরের সদস্য গোলাম কিবরিয়া বলেন, মহামারির কারণে রাজস্ব সংগ্রহ অনেকটা পেছনে পড়েছে। এখন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে হবে। সংস্থার আরেক সদস্য হাফিজ আহমেদ মোর্শেদ বলেন, আশা করা যাচ্ছে অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
ট্যাক্স কার্ড পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গ্রামীণফোনের সিইও ইয়াসির আজমান বলেন, ২০২০ সালে করোনার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এনবিআর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে কাজ করেছে। প্রযুক্তিগত কার্যক্রম বেড়েছে। শেখ আকিজ উদ্দিন লিমিটেডের এমডি শেখ বশির উদ্দিন বলেন, এ ধরনের স্বীকৃতি কর দিতে উৎসাহ বাড়ায়। বিএটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানটির এমডি শেহজাদ মুনিম বলেন, করোনার মধ্যে ২০২০ সালে যেভাবে ব্যবসা করা গেছে, তাতে মনে হয়েছে, যে কোনো ধরনের দুর্যোগ বাংলাদেশ মোকাবিলা করার সক্ষমতা রাখে। ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড পাওয়া সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন বলেন, সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে কর দিতে হবে। একই ক্যাটাগরিতে হাকিমপুরী জর্দার স্বত্বাধিকারী হাজি মো. কাউছ মিয়াকে শীর্ষ করদাতার সম্মাননা জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে ইউনিলিভার বাংলাদেশের পক্ষে ট্যাক্স কার্ড গ্রহণ করেন এর চেয়ারম্যান কেদার লেলে।
এ বছর কোম্পানি পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান যারা শীর্ষ করদাতার সম্মাননা পেয়েছে তার মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে হা-মীম গ্রুপের রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, হা-মীম ডেনিম লিমিটেডসহ সাতটি প্রতিষ্ঠান।
আরও যেসব কোম্পানি বিভিন্ন খাতে শীর্ষ করদাতার সম্মাননা পেয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, আইডিএলসি ফাইন্যান্স, স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স, এসিআই মোটরস, নেসলে বাংলাদেশ, তিতাস গ্যাস, পদ্মা ও মেঘনা অয়েল, আকিজ জুট মিলস, বাদশা টেপটাইল, নোমান টেরিটাওয়েল, এনভয় টেপটাইল, স্কয়ার ফার্মা, রেনেটা, মিডিয়া স্টার, ইস্টওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ, ইউডিসি কনস্ট্রাকশন, নাভানা রিয়েল এস্টেট, বাটা শু, এপেপ ফুটওয়্যার, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, সিভিল এভিয়েশন অথরিটি, সেতু কর্তৃপক্ষ, পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট, সেনা কল্যাণ সংস্থা, আশা, ব্যুরো বাংলাদেশ, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ও সিডিবিএল ইত্যাদি।
ব্যক্তি পর্যায়ে সিনিয়র সিটিজেন ক্যাটাগরিতে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমান, তরুণ ক্যাটাগরিতে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল, আইনজীবী ক্যাটাগরিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, খেলোয়াড় ক্যাটাগরিতে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল খান, মাশরাফি বিন মুর্তজাসহ ৭৬ জনকে ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com