
ভরাট হতেই খুঁড়তে আসে আরেক দল
ওয়াসার পর গ্যাস কোম্পানি, এখন খুঁড়ছে পিডিবি * দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না খুলনা নগরবাসীর
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২১ । ০৯:০৮ | প্রিন্ট সংস্করণ
হাসান হিমালয়, খুলনা

খুলনা নগরীর ব্যস্ততম মুজগুন্নী মহাসড়কে চলছে পিডিবির লাইন সঞ্চালনের কাজ সমকাল
রাস্তা খুঁড়ে খুলনা ওয়াসার পাইপ বসানোর কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। যেনতেনভাবে ভরাট করা গর্ত দিয়ে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরীর বয়রা এলাকার মানুষ। খালিশপুর এলাকার বাসিন্দাদের কষ্ট আরও বেশি। ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির এক বছর পর সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিল। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে গ্যাসের পাইপ বসাতে সেই সড়কে আবারও 'শাবল' চালায় নর্থ ওয়েস্টার্ন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল)। প্রায় এক বছর দুর্ভোগ পোহানোর পর ওই সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এই ধারাবাহিক খোঁড়াখুঁড়িতে এবার যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। নগরীর খালিশপুর গোয়ালপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৩০ কেভি সঞ্চালন লাইন যাবে বটিয়াঘাটার হোগলাডাঙ্গা উপকেন্দ্রে। পুরোটাই যাবে মাটির নিচ দিয়ে। এভাবে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয় ছাড়া রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে দুর্ভোগও পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর। সামনে বর্ষা মৌসুমে কী অবস্থা হবে, সেটা ভেবেই তারা আতঙ্কিত।
খালিশপুর থেকে নতুন রাস্তা মোড়, সেখান থেকে মুজগুন্নী মহাসড়ক হয়ে বয়রা মোড়, বয়রা মোড় থেকে জলিল সরণি হয়ে মোস্তর মোড়, সেখান থেকে রূপসা শহর বাইপাস হয়ে জিরো পয়েন্ট, সেখান থেকে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়ক দিয়ে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক খোঁড়ার উদ্যোগ নিয়েছে পিডিবি। গোয়ালপাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে হোগলাডাঙ্গা উপকেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার। সড়কের ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে যাবে বিদ্যুতের তার। এতে প্রতিটি সড়কই গভীরভাবে খুঁড়তে হবে। পিডিবির আওতায় নগরীর খালিশপুরে নির্মাণ হচ্ছে ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০১৮ সালে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা এখনও চলছে। এ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যাবে হোগলাডাঙ্গা উপকেন্দ্রে। সে জন্যই সড়ক খোঁড়ার আয়োজন।
প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী কাজী মাসুদ মিয়া সমকালকে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারপাশে আবাসিক এলাকা। সেখানে টাওয়ার বসিয়ে ওপর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নেওয়ার সুযোগ নেই। এ জন্য মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে হোগলাডাঙ্গা পর্যন্ত মোট ১২ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়ক খোঁড়া হবে। তিনি বলেন, কাজ শুরুর আগে কেসিসি ও সড়ক বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। সড়ক খোঁড়া ও দ্রুত সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণও দেওয়া হবে।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী লিয়াকত আলী খান বলেন, ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। পিডিবি দিতে সম্মত হয়েছে। তিনি বলেন, মুজগুন্নী মহাসড়ক ও জলিল সরণি সংস্কারের জন্য কেসিসির প্রকল্প রয়েছে। পিডিবির কাজ শেষ হলে দ্রুত সড়ক দুটি সংস্কার করা হবে।
নগরীর বয়রা রায়েরমহল এলাকায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ক্লিন-এর কার্যালয়। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী সমকালকে বলেন, ওয়াসা খুঁড়ে রাখার পর গত দুই বছরে জলিল সরণি সংস্কার করা হয়নি। অথচ খোঁড়ার আগেই ওয়াসা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে শুনেছি। সড়ক একবার খুঁড়লে আর সংস্কার হয় না। উন্নত বিশ্বে সড়কে সেবা সংস্থার কেবল, পাইপলাইনের জন্য সার্ভিস লাইন থাকে। সবকিছু ওই লাইনের মধ্য দিয়ে যায়। এতে দুর্ভোগ কমে এবং অর্থ সাশ্রয় হয়। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকা হিসেবে বিবেচ্য রায়েরমহলে দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করতে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। নতুন করে সড়ক খোঁড়ার সংবাদে সবাই উদ্বিগ্ন।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, ওয়াসার পর গ্যাস কোম্পানি সড়ক খুঁড়েছে। এখন খুঁড়ছে পিডিবি। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের জন্য ওয়াসা আবার সড়ক খুঁড়বে। এরপর মাটির ওপরের সব বৈদ্যুতিক তার মাটির নিচে নিতে ওজোপাডিকোর একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। এভাবে সড়ক খোঁড়া এবং সংস্কারের খেলা কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। তিনি বলেন, সংস্থাগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে বিপুল ব্যয় সাশ্রয় হওয়ার সঙ্গে নাগরিক দুর্ভোগ কমানো সম্ভব। কিন্তু এতে সংস্থাগুলোর মনোযোগ কম। বছর বছর বরাদ্দ ও প্রকল্প নেওয়াতেই সবার ঝোঁক বেশি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com