
টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তায় ডোজের ব্যবধান পরিবর্তন
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২১ । ০২:০১ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজবংশী রায়

টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রার পর এবার টিকার ডোজের সময়সীমায় পরিবর্তন আনল সরকার। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগে প্রথম ডোজ থেকে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান ছিল চার সপ্তাহ। গত সোমবার পর্যন্ত ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ মানুষ টিকা নিয়েছেন। তাদের প্রত্যেকের দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান ৩০ দিন করে লিখে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই ওইদিন বিকেলে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ব্যবধান আট সপ্তাহ নির্ধারণের ঘোষণা দেয়। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুই লাখ ২৬ হাজার ৯০২ জন টিকা নিয়েছেন। তাদের দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান আট সপ্তাহ লিখে দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল পর্যন্ত মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জন টিকা নিয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রায় তিনবার এবং সময়সীমা নিয়ে দ্বিতীয়বার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিকল্পনায় বারবার পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকাপ্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর টিকার মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি সামনে রেখে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান আনা হয়। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স মিলে আরও ৭০ থেকে ৮০ লাখ ডোজের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেছেন, টিকাদান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হয় সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে। টিকাপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে মেয়াদের বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। সুতরাং পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করে রাখা চলবে না। কারণ বিশ্বব্যাপী টিকা নিয়ে এক ধরনের সংকট আছে। অনেক দেশ টিকা চেয়েও পাচ্ছে না। কোভ্যাক্স থেকে প্রথমে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার আট লাখ ডোজ দেওয়ার কথা ছিল। এখন আবার আগামী মাসে ৫০ লাখ ডোজ দেওয়া হবে। সুতরাং টিকাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এবং মানুষের আগ্রহের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এখন নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করেন তিনি।
টিকাদান পরিকল্পনার নেপথ্যে:বর্তমানে সরকারের কাছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ৭০ লাখ ডোজ মজুদ আছে। এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া আর ৫০ লাখ ডোজ কেনা টিকা। সেরাম ইনস্টিটিউট, বেক্সিমকো ফার্মা ও সরকারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের টিকা তিন কোটি ডোজ বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে। প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি দেশে আসে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা আসার আগে জানুয়ারির শুরুতে প্রতি মাসে ২৫ লাখ টিকা বিতরণের পরিকল্পনা করে সরকার। উপহারের ২০ লাখ ডোজ এবং কেনা টিকার ৫০ লাখ হাতে পাওয়ার পর বিতরণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ টিকা বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তী মাসে কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ আসার পর উপহারের ১০ লাখ যুক্ত করে প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ৬০ লাখ ব্যক্তিকে দ্বিতীয় মাসেও টিকা দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু শুরুতে নিবন্ধন ওয়েবসাইটে টিকা গ্রহীতাদের সাড়া মিলছিল না। গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল থেকে টিকার নিবন্ধন ওয়েবসাইট 'সুরক্ষা' চালু করা হয়। টিকার জন্য ওই ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার ২৬০ মানুষ এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হন। সরকার প্রতিদিন যেখানে দুই লাখ করে মানুষের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, এর বিপরীতে টিকাগ্রহীতার এই সংখ্যা অপ্রতুল। এতে টিকাদান নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সরকার। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী টিকা সংকটের বিষয়টিও সামনে চলে আসে। ইউরোপের দেশগুলো চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের টিকা না পাওয়া অভিযোগ করেছে। এর বাইরে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারছে না অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে। একই সঙ্গে ব্রাজিল, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা চেয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাকে জানানো হয়েছে, আপাতত বেসরকারিভাবে তারা ১০ লাখ ডোজ সরবরাহ করতে পারবে না। এর পরই গত ৪ ফেব্রুয়ারি টিকাদানের পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মজুদে থাকা ৭০ লাখ টিকা দিয়ে প্রথম মাসে প্রথম ডোজের ৩৫ লাখ বিতরণ করা হবে। চার সপ্তাহ সময় ধরে পরবর্তী ডোজ বিরতণ করা হবে। অক্সফোর্ডের টিকা উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকার সময়সীমার পার্থক্য ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে হতে হবে। ট্রায়ালে দুই ডোজের ব্যবধান কম হলে টিকার কার্যকারিতা কম প্রমাণিত হয়েছে। চার সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দিলে টিকার কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ হয়। আর আট সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজে কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ হয়। কিন্তু মজুদ থাকা টিকার মেয়াদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আট সপ্তাহের পরিবর্তে চার সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকারের কাছে মজুদ থাকা অক্সফোর্ডের টিকার ৭০ লাখ ডোজের মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ টিকার মেয়াদ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে। আর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মেয়াদ এপ্রিলের শেষ দিকে শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দিতে হবে। যে হারে টিকাদান কর্মসূচি চলছে, তাতে প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ শেষ করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। এতে করে টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। তখন ওই টিকা আর ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। মজুদ থাকা টিকা শেষ না হলে সরকারের টিকাদান কর্মসূচি সমালোচনার মুখে পড়বে। এ কারণে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার উদ্যোগ থেমে যায়।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে। ৮ মার্চ থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। ৮ এপ্রিলের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ শেষ হবে। এর মধ্যে প্রথম মাসে প্রথম ডোজের ৩৫ লাখের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে মার্চ জুড়ে ওই টিকা বিতরণ করা হবে। এতে করে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই টিকার ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তবে সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চলতি মাসেই কেনা টিকার ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ আসবে। একই সঙ্গে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে কোভ্যাক্স থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এই টিকা নিশ্চিত হওয়ার পর সরকার টিকাদানের পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনল।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সমকালকে বলেন, টিকাদান পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। কারণ টিকাপ্রাপ্তি, মেয়াদ ও টিকার ব্যবহার- অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থেকে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। যখনই প্রয়োজন মনে হবে, তখনই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি। তবে যাদের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল তাদের এসএমএস করে নতুন তারিখ জানানো হবে। সুতরাং তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা সমকালকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিকভাবে যৌক্তিক। তবে প্রথম ডোজের আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে কার্যকারিতার হার বেশি। সরকার এখন প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ব্যবধান আট সপ্তাহ করেছে। এটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, এ পর্যন্ত টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রায় তিনবার এবং সময়সীমা নিয়ে দ্বিতীয়বার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিকল্পনায় বারবার পরিবর্তনের কারণ খুঁজতে গিয়ে সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকাপ্রাপ্তির ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। আর টিকার মেয়াদোত্তীর্ণের বিষয়টি সামনে রেখে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান আনা হয়। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা টিকা ও কোভ্যাক্স মিলে আরও ৭০ থেকে ৮০ লাখ ডোজের নিশ্চয়তা পাওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেছেন, টিকাদান কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনা হয় সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে। টিকাপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে মেয়াদের বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। সুতরাং পরিকল্পনা নির্দিষ্ট করে রাখা চলবে না। কারণ বিশ্বব্যাপী টিকা নিয়ে এক ধরনের সংকট আছে। অনেক দেশ টিকা চেয়েও পাচ্ছে না। কোভ্যাক্স থেকে প্রথমে ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার আট লাখ ডোজ দেওয়ার কথা ছিল। এখন আবার আগামী মাসে ৫০ লাখ ডোজ দেওয়া হবে। সুতরাং টিকাপ্রাপ্তি সাপেক্ষে এবং মানুষের আগ্রহের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এখন নতুন করে পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। এটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ বলে মনে করেন তিনি।
টিকাদান পরিকল্পনার নেপথ্যে:বর্তমানে সরকারের কাছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের ৭০ লাখ ডোজ মজুদ আছে। এর মধ্যে ২০ লাখ ডোজ ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া আর ৫০ লাখ ডোজ কেনা টিকা। সেরাম ইনস্টিটিউট, বেক্সিমকো ফার্মা ও সরকারের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের টিকা তিন কোটি ডোজ বাংলাদেশকে সরবরাহ করবে। প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ ২৫ জানুয়ারি দেশে আসে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে তিন কোটি ডোজ সরবরাহ করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা আসার আগে জানুয়ারির শুরুতে প্রতি মাসে ২৫ লাখ টিকা বিতরণের পরিকল্পনা করে সরকার। উপহারের ২০ লাখ ডোজ এবং কেনা টিকার ৫০ লাখ হাতে পাওয়ার পর বিতরণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ করে প্রথম মাসে ৬০ লাখ টিকা বিতরণের পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তী মাসে কেনা টিকার ৫০ লাখ ডোজ আসার পর উপহারের ১০ লাখ যুক্ত করে প্রথম মাসে টিকা পাওয়া ৬০ লাখ ব্যক্তিকে দ্বিতীয় মাসেও টিকা দেওয়া হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু শুরুতে নিবন্ধন ওয়েবসাইটে টিকা গ্রহীতাদের সাড়া মিলছিল না। গত ২৭ জানুয়ারি বিকেল থেকে টিকার নিবন্ধন ওয়েবসাইট 'সুরক্ষা' চালু করা হয়। টিকার জন্য ওই ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু ২ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার ২৬০ মানুষ এই ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হন। সরকার প্রতিদিন যেখানে দুই লাখ করে মানুষের টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, এর বিপরীতে টিকাগ্রহীতার এই সংখ্যা অপ্রতুল। এতে টিকাদান নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সরকার। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী টিকা সংকটের বিষয়টিও সামনে চলে আসে। ইউরোপের দেশগুলো চুক্তি অনুযায়ী অক্সফোর্ডের টিকা না পাওয়া অভিযোগ করেছে। এর বাইরে চুক্তি অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করতে পারছে না অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এ কারণে বিশ্বের অনেক দেশে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে। একই সঙ্গে ব্রাজিল, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা চেয়েছে। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে বেক্সিমকো ফার্মাকে জানানো হয়েছে, আপাতত বেসরকারিভাবে তারা ১০ লাখ ডোজ সরবরাহ করতে পারবে না। এর পরই গত ৪ ফেব্রুয়ারি টিকাদানের পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনা হয়। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথম মাসে ৩৫ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। মজুদে থাকা ৭০ লাখ টিকা দিয়ে প্রথম মাসে প্রথম ডোজের ৩৫ লাখ বিতরণ করা হবে। চার সপ্তাহ সময় ধরে পরবর্তী ডোজ বিরতণ করা হবে। অক্সফোর্ডের টিকা উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন, প্রথম ডোজ এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকার সময়সীমার পার্থক্য ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে হতে হবে। ট্রায়ালে দুই ডোজের ব্যবধান কম হলে টিকার কার্যকারিতা কম প্রমাণিত হয়েছে। চার সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দিলে টিকার কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ হয়। আর আট সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজে কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ হয়। কিন্তু মজুদ থাকা টিকার মেয়াদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আট সপ্তাহের পরিবর্তে চার সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সরকারের কাছে মজুদ থাকা অক্সফোর্ডের টিকার ৭০ লাখ ডোজের মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ টিকার মেয়াদ এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে শেষ হবে। আর ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মেয়াদ এপ্রিলের শেষ দিকে শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় সরকারিভাবে প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ টিকা দিতে হবে। যে হারে টিকাদান কর্মসূচি চলছে, তাতে প্রথম মাসে ৩৫ লাখ ডোজ শেষ করার বিষয়টি চ্যালেঞ্জের। এতে করে টিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারে। তখন ওই টিকা আর ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। মজুদ থাকা টিকা শেষ না হলে সরকারের টিকাদান কর্মসূচি সমালোচনার মুখে পড়বে। এ কারণে প্রাথমিকভাবে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার চিন্তাভাবনা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হলে বেসরকারি খাতকে যুক্ত করার উদ্যোগ থেমে যায়।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রথম মাসের টিকাদান কার্যক্রম চলবে। ৮ মার্চ থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার। ৮ এপ্রিলের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ শেষ হবে। এর মধ্যে প্রথম মাসে প্রথম ডোজের ৩৫ লাখের টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে মার্চ জুড়ে ওই টিকা বিতরণ করা হবে। এতে করে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আগেই টিকার ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তবে সেরামের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চলতি মাসেই কেনা টিকার ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ আসবে। একই সঙ্গে আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহে কোভ্যাক্স থেকে ৫০ লাখ ডোজ টিকা আসবে। এই টিকা নিশ্চিত হওয়ার পর সরকার টিকাদানের পরিকল্পনায় আবারও পরিবর্তন আনল।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম সমকালকে বলেন, টিকাদান পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ। কারণ টিকাপ্রাপ্তি, মেয়াদ ও টিকার ব্যবহার- অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা থেকে টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। যখনই প্রয়োজন মনে হবে, তখনই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি। তবে যাদের এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল তাদের এসএমএস করে নতুন তারিখ জানানো হবে। সুতরাং তাদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লা সমকালকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈজ্ঞানিকভাবে যৌক্তিক। তবে প্রথম ডোজের আট সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিলে কার্যকারিতার হার বেশি। সরকার এখন প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের ব্যবধান আট সপ্তাহ করেছে। এটি ভালো সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com