
টিসিবির পণ্যেরও মূল্যবৃদ্ধি
ওঝাই যখন সর্প!
প্রকাশ: ০৩ এপ্রিল ২১ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
সম্পাদকীয়
পবিত্র মাহে রমজান আসন্ন। বাজারের উত্তাপ মানুষের জীবনযাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে ব্যবসায়ী ও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় আরও বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে। তাই প্রতিবারই অসাধু ব্যবসায়ীরা ঝোপ বুঝে কোপ মারে। নানা অজুহাত দাঁড় করিয়ে এবারও নিত্যপণ্যের দাম ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত বৃহস্পতিবার থেকে সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১০ টাকা ও চিনি কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়িয়েছে। কিছুদিন আগেও টিসিবি সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়িয়েছিল। বাড়িয়েছিল পেঁয়াজ ও মসুর ডালের দামও। করোনা সংক্রমণের প্রভাবে মানুষের জীবনে যে বাড়তি আর্থিক চাপসহ নানারকম অভিঘাত সৃষ্টি হয়েছে, এ অবস্থায় সরকারি তরফে নিত্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। টিসিবির দায়িত্বশীলরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা খোঁড়া যুক্তি বলেই আমরা মনে করি। টিসিবির পণ্য নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে কারসাজি না করতে পারে এজন্য 'মূল্য সমন্বয়' করতে গিয়ে টিসিবির পণ্যের দাম বাড়িয়েছে- এমন যুক্তি বিস্ময়কর। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে খোলাবাজারের নিয়মের সঙ্গে সরকারি বিপণন সংস্থাকেও কি সমীকরণ করে চলতে হবে? মানুষ যখন দুর্যোগে নানাভাবে বিপন্ন-বিপর্যস্ত ও আয়ের ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে, তখন যাতে তারা অধিকতর সাশ্রয়ী দামে পণ্য কিনতে পারে তা নিশ্চিত করা সরকারি এই সংস্থার দায়। শুক্রবার সমকালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিসিবির রমজানের পণ্য বিক্রির প্রথম দিনেই ক্রেতার দীর্ঘ লাইন। বাজারের নিত্যপণ্যের উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে; সেই অনুপাতে টিসিবির 'ট্রাক সেল' পণ্যের দাম কিছুটা কম বটে, কিন্তু টিসিবিও দফায় দফায় যেভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে তাতে মানুষের ভরসার আর জায়গা কোথায়? বাজারের পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশল হিসেবে টিসিবিকে কার্যকর ও গতিশীল সংস্থায় পরিণত করার তাগিদ দীর্ঘদিন ধরে নানা মহল থেকে দেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। টিসিবি যদি বিকল্প বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারত, তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যেত। আমরা জানি- রমজানে ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, ডালসহ অন্য আরও কিছু পণ্যের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকারের সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো কিছু ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। কিন্তু এবার সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবিই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে আরও বৈরী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। কিছুদিন আগেও এ সম্পাদকীয় স্তম্ভেই আমরা বলেছিলাম, করোনা পরিস্থিতিতে বাজার ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসতে পারে। বস্তুত তা-ই হয়েছে। কয়েকদিন আগে সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা দুর্যোগে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, এর পাশাপাশি বেড়েছে আমদানিও। বাজারের নিত্যপণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। তাহলে এখন কোন যুক্তিতে খোলাবাজারে ও সরকারি বিপণন সংস্থা নিত্যপণ্যের দাম বাড়াল? বাজারে কি সরকারের কোনোই নিয়ন্ত্রণ নেই? নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার যে পদক্ষেপ নেয় কিংবা যেসব সংস্থা ও সংগঠনকে যুক্ত করে কার্যক্রম চালায় এর মধ্যে টিসিবিও একটি। কিন্তু টিসিবির কার্যক্রম প্রশ্নমুক্ত নয়। দক্ষ জনবলের অভাব, অপর্যাপ্ত সরবরাহ, মূলধনের অভাবসহ নানারকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে সংস্থাটির। তাদের সরাসরি পণ্য আমদানি ও ক্রয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে আইনি প্রতিবন্ধকতা। এ দুর্যোগ ও রমজান সামনে রেখে ভর্তুকি দিয়ে হলেও নিত্যপণ্যের আপৎকালীন মজুদ গড়ে ভোক্তাদের সরবরাহ করা জরুরি। তবে টিসিবি তার পণ্যের দাম বাড়িয়ে খোলাবাজারে নিত্যপণ্যের আরেক দফা দাম বৃদ্ধির যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে, তা সরকারকেই দূর করতে হবে। যে কোনো উপলক্ষে, বিশেষ করে রমজানে বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। খোলাবাজারে নজরদারি কঠোর করার পাশাপাশি অতি মুনাফাখোরদের আইনের আওতায় আনতে হবে। যদি সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে আর্থসামাজিক সংকট প্রকট হবে। টিসিবি নিত্যপণ্যের বর্ধিত দাম কমিয়ে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসুক।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com