ভেঙে ভেঙে যাচ্ছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা

২২ দিন পর চালু গণপরিবহন রাজধানীতে যানজট

প্রকাশ: ০৭ মে ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ মে ২১ । ০১:১৭ | প্রিন্ট সংস্করণ

সমকাল প্রতিবেদক

গণপরিবহন চালুর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর কোথাও কোথাও ছিল এমন হুড়োহুড়ি ও ধাক্কাধাক্কির দৃশ্য। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করেননি যাত্রীরা। ফার্মগেট এলাকা থেকে তোলা ছবি- সাজ্জাদ নয়ন

লকডাউনে ২২ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল বৃহস্পতিবার গণপরিবহন চালুর দিনেই বদলে গেছে রাজধানীর চিত্র। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকার পথে পথে ছিল যানজট। দুপুরের দিকে বাসে যাত্রী কম থাকলেও সকাল ও বিকেলে ভিড় ছিল। জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চালু হলেও আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ থাকায় বহু যাত্রী যানবাহন পরিবর্তন করে ভেঙে ভেঙে দূরবর্তী গন্তব্যে যাতায়াত করেছেন। ফেরিঘাটে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে।

গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যেসব শর্তে গণপরিবহন চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি মানা হয়নি। অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চললেও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছিল না। তবে যাত্রী, চালকের মুখে মাস্ক আগের চেয়ে বেড়েছে। রয়েছে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।

গাবতলীতে দেখা গেছে, পুলিশ ঢাকার বাইরের বাস রাজধানীতে প্রবেশ করতে দেয়নি। ঢাকার বাসগুলোকেও ওই সব রুটে যেতে দেয়নি। গাবতলী সেতু থেকে যানবাহনগুলোকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই দৃশ্য চোখে পড়েছে রাজধানীর প্রান্তের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে। তবে ব্যক্তিগত গাড়িতে নির্বিঘ্নেই যাত্রীরা দূর-দূরান্তে যাতায়াত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওই সব যানবাহনকে কোনো বাধা দেয়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকালে গণপরিবহনে অফিসমুখী যাত্রীদের চাপ ছিল। দুপুরে তা কিছুটা কমে। আবার বিকেলে চাপ বাড়ে। দুপুরের দিকে অধিকাংশ বাসে সিট খালি ছিল। অর্ধেক আসন খালি রেখে বাস চলায় সকালে ও বিকেলে গণপরিবহন সংকট দেখা যায়। এ সময় বহু যাত্রীকে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাস শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করেছেন আসন খালি রাখতে। কিন্তু সকালে ও বিকেলে যাত্রীরা বাস থামালেই জোর করে উঠে পড়েছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, তাদের পক্ষ থেকে সরকারি সব নির্দেশনা মেনেই বাস চালানোর কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এটা দেখভাল করার প্রয়োজন ছিল।

হিমাচল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফাত উদ্দিন মাসুদ সমকালকে বলেন, তার কোম্পানির বাস রাজধানী অভ্যন্তরে, ঢাকা থেকে পাটুরিয়া এবং ঢাকা-নোয়াখালী রুটে চলে। বৃহস্পতিবার থেকে শুধু ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাস চালু হয়েছে। বাকি দুই রুটের বাস এখনও বন্ধ। প্রথম দিনে ঢাকার অভ্যন্তরীণ রুটের বাসে খুব একটা যাত্রী ছিল না।

গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আসাদগেট, বিজয় সরণি, মহাখালী, বনানী ও কুড়িল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাস অর্ধেক আসন খালি রেখে চলছে। অনেক বাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্ধেক আসন খালি রাখায় ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির অনুমতি থাকলেও কোনো কোনো বাসে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে প্রেস ক্লাবের ভাড়া ২০ টাকা। সরকারি শর্তানুযায়ী সর্বোচ্চ ৩২ টাকা নেওয়া যাবে। কিন্তু সিটি পরিবহনের বাসে ৪০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পরিবহনটির চালক আলাউদ্দিন সমকালকে বলেছেন, প্রায় এক মাস ধরে বাস বন্ধ ছিল। যে লোকসান হয়েছে, তা পোষাতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। তার ওপর মাস্ক, স্যানিটাইজারের খরচ বেড়েছে।

জিগাতলা-খিলগাঁও রুটের তরঙ্গ পরিবহনের যাত্রী নাসির উদ্দিন জানান, ভাড়া বেশি আবার সামাজিক দূরত্বও রক্ষা করা কঠিন। তার পরও তিনি খুশি বাস চালু হয়েছে বলে। সিএনজি অটোরিকশায় রামপুরা যেতে আড়াইশ টাকা ভাড়া লাগে। রিকশায় লাগে ১৫০ টাকা। বাসে ৬০ টাকায় যেতে পারছেন। বাস চালু হওয়ায় খরচ কমেছে- লকডাউনে এটাই একমাত্র স্বস্তি।

সায়েদাবাদ-বিমানবন্দর রুটের বলাকা পরিবহনের চালকের সহকারী মো. কাউয়ুম সমকালকে জানান, যাত্রী কম। তার বাসে আসন সংখ্যা ৪২। সর্বোচ্চ ২১ জন যাত্রী তোলার অনুমতি রয়েছে। অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় এবং লকডাউনের কারণে অনেক মানুষ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় যাত্রী কম। অফিস শুরু ও ছুটির সময় বাদে দিনের বাকি সময় ২১ আসন পূর্ণ হচ্ছে না।

তার পরও কাউয়ুম খুশি বাস চালু হওয়ায়। তিনি বলেছেন, লকডাউনের প্রায় এক মাস কর্মহীন ছিলেন। বাস চললে দৈনিক ৪০০ টাকা বেতন ও খোরাকি পান তিনি। বাস বন্ধ থাকায় আয় বন্ধ ছিল। পরিবার নিয়ে চলতে খুব সমস্যা হয়েছে। বাস চালু হওয়ায় এ দুর্দশা কাটবে।

যাত্রী কম থাকায় আসন সংখ্যার অর্ধেকে যাত্রী দেখা যাচ্ছে বলে মনে করেন মতিঝিলগামী কাজল মিয়া। তিনি বলেন, এখন মানুষ কম। সেজন্যই হয়তো বাসে ফাঁকা ফাঁকা বসানো হচ্ছে। যাত্রী বাড়লে নিয়ম মানবে বলে মনে হয় না।

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গণপরিবহন চালুতে শর্ত দিয়েছে, ট্রিপের আগে ও পরে গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। থাকতে হবে স্যানিটাইজার। অধিকাংশ বাসেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেখা যায়নি।

সরকারি শর্তানুযায়ী, গণপরিবহনগুলো জেলার মধ্যে চলাচল করলেও অন্য জেলায় যেতে পারবে না। ফলে দূরপাল্লার যাত্রীরা এক জেলার সীমান্তে গিয়ে ওই যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে আরেক জেলার যানবাহনে উঠেছেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com