
টিকা উৎপাদনেই আগ্রহী বাংলাদেশ
চাহিদা অনুযায়ী কেনা হবে চীন ও রাশিয়া থেকে
প্রকাশ: ১০ মে ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ মে ২১ । ০১:২০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজবংশী রায়

চাহিদার বাইরে রাশিয়া ও চীন থেকে টিকা কিনবে না সরকার। আপৎকালীন সংকট মোকাবিলায় এই দুটি দেশের টিকা কেনা হবে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বে গঠিত টিকার জোট কোভ্যাক্সকে কেন্দ্র করেই দেশের টিকাদান কর্মসূচি চলবে। কারণ এ দুটি উৎস থেকে পাওয়া টিকার মূল্য অনেক কম।
রাশিয়া ও চীনের টিকার মূল্য সেরাম ইনস্টিটিউট ও কোভ্যাক্সের টিকার তুলনায় যথাক্রমে আড়াই গুণ ও চার গুণ বেশি পড়বে। এ কারণে সরকার এ দুই দেশ থেকে বেশি টিকা কিনতে আগ্রহী নয়। তবে রাশিয়া ও চীন প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনে সায় দিলে সরকার তাতে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চীন ও রাশিয়ার টিকা বেশি কেনা হলে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় হবে। এ ব্যয় বহন করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। আবার চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে এখনও দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জুলাই থেকে সেই টিকা আসতে পারে। ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সেরাম থেকে কোভ্যাক্সও টিকা পাবে। কোভ্যাক্স থেকে প্রথমে বাংলাদেশকে এক কোটি ৯ লাখ ডোজের কিছু বেশি টিকা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এ টিকা পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া ও চীনের টিকা উৎপাদনে আগ্রহের কথা তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, দুটি দেশই বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশও তাতে সম্মতি দিয়েছে। কারণ চীন ও রাশিয়ার টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটির নিজের দেশের চাহিদা পূরণ করে অন্যদের চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করার সক্ষমতা কম। সে কারণে তারা বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশে তিনটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। চীন ও রাশিয়া চাইলে এই তিনটি কোম্পানি উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশি এ তিনটি কোম্পানির বছরে এক কোটি ডোজের ওপরে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদেরও টিকা সরবরাহ করা যাবে। চীন ও রাশিয়া চাইলে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাড়তি টিকা রপ্তানি করতে পারবে।
যে কারণে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ :সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার মোট সাড়ে ১৩ কোটির মতো মানুষকে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হারে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং কাঁচামাল সংকটের কারণে সে দেশের সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে আর টিকা পায়নি বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া স্থগিত করে সরকার। পরবর্তী টিকা না এলে ১৩ লাখের ওপরে মানুষ নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন না। এতে চলমান টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর পরই টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। জরুরি ভিত্তিতে টিকা সংগ্রহে চীনের নেতৃত্বে জোটে যোগ দেয় বাংলাদেশ। রাশিয়াও বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করতে চায়। চীন ও রাশিয়া রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দেয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র বলছে, জুলাই মাস থেকে টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে। তখন বাংলাদেশ সেরাম ও কোভ্যাক্স- দুটি উৎস থেকেই টিকা পাবে। চলতি বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ এবং সেরাম থেকে আসা তিন কোটি এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহারের ৩২ লাখ মিলে মোট টিকা হবে ১০ কোটি ১২ লাখ ডোজ। এটা দিয়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষের টিকা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি কোভ্যাক্স প্রস্তাব দিয়েছে, যত টিকা লাগবে তারা সরবরাহ করবে। বিনামূল্যের ২০ শতাংশের বাইরে কোভ্যাক্সের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে সাত ডলার করে। আর সেরামের প্রতি ডোজের দাম পড়েছে পাঁচ ডলার করে। অন্যদিকে, চীনের টিকা সিনোফার্মের প্রতি ডোজের নূ্যনতম মূল্য ১৯ ডলার। বিভিন্ন দেশে এই টিকা ১৯ থেকে ৩৮ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার টিকার প্রতি ডোজ বিক্রি করা হয়েছে ১২ থেকে ২৪ ডলার করে। ওই দাম নিয়ে বর্তমানে দরকষাকষি করছে চীন ও রাশিয়া। দুটি দেশের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে ওই প্রস্তাবে বেশকিছু কঠিন শর্তারোপ করা হয়েছে। ওই শর্ত মেনে রাজি হলে তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি কেনা নিয়ে ২৯টি সুপারিশ করে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত হবে- রাশিয়া টিকা দিতে না পারলে অর্থ ফেরত দেবে। সেই সঙ্গে কোনো জটিলতা হলে দায় হবে দেশটির সরকারের। এ ছাড়া টিকা নেওয়ার পর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তির ধারা পর্যালোচনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চুক্তির খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে রাশিয়ার সংশ্নিষ্ট সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আরডিআইএফের কাছে পাঠানো হবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সমকালকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও প্রস্তাবিত খসড়াটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেনি। এলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেটি রাশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এমন কোনো চুক্তি করা হবে না, যাতে আবার টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়। এ জন্য সরবরাহকারী ও ক্রেতার মধ্যে চুক্তি হবে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী। কোনো বিরোধ দেখা দিলে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার রুলসের আলোকে তা নিষ্পত্তি করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও টিকা নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চীনের সঙ্গে টিকা সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা সরবরাহের বিষয়ে ইতিবাচক মত প্রকাশ করে। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশে যৌথ ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনেও যেতে সম্মত। তাদের দুটি প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে প্রথমে চীন সরকার পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার হিসেবে দেবে। আগামী ১২ মে ওই টিকা দেশে পৌঁছাবে। এরপর ওই টিকা প্রয়োগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা কেনা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, দ্বিতীয় ডোজের ১৩ লাখের মতো টিকার ঘাটতি নিয়ে তারা এখন কিছুটা উদ্বিগ্ন। এ জন্য ভারতের পাশাপাশি যেসব দেশে অক্সফোর্ডের টিকা মজুদ আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, টিকা পেয়ে যাবেন।
মন্ত্রী বলেন, টিকার জন্য একটি কিংবা দুটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাই না। এ জন্য রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে টিকার চুক্তি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুতই একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে, যাতে দেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা পাওয়া যায়। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
রাশিয়া ও চীনের টিকার মূল্য সেরাম ইনস্টিটিউট ও কোভ্যাক্সের টিকার তুলনায় যথাক্রমে আড়াই গুণ ও চার গুণ বেশি পড়বে। এ কারণে সরকার এ দুই দেশ থেকে বেশি টিকা কিনতে আগ্রহী নয়। তবে রাশিয়া ও চীন প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনে সায় দিলে সরকার তাতে আগ্রহী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চীন ও রাশিয়ার টিকা বেশি কেনা হলে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ ব্যয় হবে। এ ব্যয় বহন করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন। আবার চুক্তি অনুযায়ী ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছে এখনও দুই কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে জুলাই থেকে সেই টিকা আসতে পারে। ভারত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সেরাম থেকে কোভ্যাক্সও টিকা পাবে। কোভ্যাক্স থেকে প্রথমে বাংলাদেশকে এক কোটি ৯ লাখ ডোজের কিছু বেশি টিকা দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এ টিকা পাওয়া যায়নি।
রাশিয়া ও চীনের টিকা উৎপাদনে আগ্রহের কথা তুলে ধরে ওই কর্মকর্তা বলেন, দুটি দেশই বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশও তাতে সম্মতি দিয়েছে। কারণ চীন ও রাশিয়ার টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দুটির নিজের দেশের চাহিদা পূরণ করে অন্যদের চাহিদা অনুযায়ী টিকা সরবরাহ করার সক্ষমতা কম। সে কারণে তারা বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশে তিনটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা আছে। চীন ও রাশিয়া চাইলে এই তিনটি কোম্পানি উৎপাদনে যেতে প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশি এ তিনটি কোম্পানির বছরে এক কোটি ডোজের ওপরে টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এতে বাংলাদেশের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদেরও টিকা সরবরাহ করা যাবে। চীন ও রাশিয়া চাইলে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় বাড়তি টিকা রপ্তানি করতে পারবে।
যে কারণে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ :সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার মোট সাড়ে ১৩ কোটির মতো মানুষকে করোনার প্রতিষেধক টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হারে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার ৩২ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি দুই লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবং কাঁচামাল সংকটের কারণে সে দেশের সরকার টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পর থেকে আর টিকা পায়নি বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় গত ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া স্থগিত করে সরকার। পরবর্তী টিকা না এলে ১৩ লাখের ওপরে মানুষ নির্ধারিত সময়ে দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাবেন না। এতে চলমান টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এর পরই টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। জরুরি ভিত্তিতে টিকা সংগ্রহে চীনের নেতৃত্বে জোটে যোগ দেয় বাংলাদেশ। রাশিয়াও বাংলাদেশে টিকা রপ্তানি করতে চায়। চীন ও রাশিয়া রপ্তানির পাশাপাশি বাংলাদেশে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দেয়।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র বলছে, জুলাই মাস থেকে টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে। তখন বাংলাদেশ সেরাম ও কোভ্যাক্স- দুটি উৎস থেকেই টিকা পাবে। চলতি বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ এবং সেরাম থেকে আসা তিন কোটি এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহারের ৩২ লাখ মিলে মোট টিকা হবে ১০ কোটি ১২ লাখ ডোজ। এটা দিয়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষের টিকা দেওয়া যাবে। পাশাপাশি কোভ্যাক্স প্রস্তাব দিয়েছে, যত টিকা লাগবে তারা সরবরাহ করবে। বিনামূল্যের ২০ শতাংশের বাইরে কোভ্যাক্সের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে সাত ডলার করে। আর সেরামের প্রতি ডোজের দাম পড়েছে পাঁচ ডলার করে। অন্যদিকে, চীনের টিকা সিনোফার্মের প্রতি ডোজের নূ্যনতম মূল্য ১৯ ডলার। বিভিন্ন দেশে এই টিকা ১৯ থেকে ৩৮ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, রাশিয়ার টিকার প্রতি ডোজ বিক্রি করা হয়েছে ১২ থেকে ২৪ ডলার করে। ওই দাম নিয়ে বর্তমানে দরকষাকষি করছে চীন ও রাশিয়া। দুটি দেশের পক্ষ থেকেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে ওই প্রস্তাবে বেশকিছু কঠিন শর্তারোপ করা হয়েছে। ওই শর্ত মেনে রাজি হলে তাতে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।
এ পরিস্থিতিতে রাশিয়ার টিকা স্পুটনিক-ভি কেনা নিয়ে ২৯টি সুপারিশ করে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করেছে আইন মন্ত্রণালয়। সুপারিশে বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত হবে- রাশিয়া টিকা দিতে না পারলে অর্থ ফেরত দেবে। সেই সঙ্গে কোনো জটিলতা হলে দায় হবে দেশটির সরকারের। এ ছাড়া টিকা নেওয়ার পর কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের দায়মুক্তির ধারা পর্যালোচনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চুক্তির খসড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে রাশিয়ার সংশ্নিষ্ট সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আরডিআইএফের কাছে পাঠানো হবে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সমকালকে বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও প্রস্তাবিত খসড়াটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেনি। এলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেটি রাশিয়ার প্রতিনিধিদের কাছে পাঠানো হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এমন কোনো চুক্তি করা হবে না, যাতে আবার টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়। এ জন্য সরবরাহকারী ও ক্রেতার মধ্যে চুক্তি হবে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী। কোনো বিরোধ দেখা দিলে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার রুলসের আলোকে তা নিষ্পত্তি করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার চীনের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গেও টিকা নিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, চীনের সঙ্গে টিকা সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা সরবরাহের বিষয়ে ইতিবাচক মত প্রকাশ করে। একই সঙ্গে তারা বাংলাদেশে যৌথ ব্যবস্থাপনায় উৎপাদনেও যেতে সম্মত। তাদের দুটি প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তবে প্রথমে চীন সরকার পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার হিসেবে দেবে। আগামী ১২ মে ওই টিকা দেশে পৌঁছাবে। এরপর ওই টিকা প্রয়োগ করে প্রয়োজন অনুযায়ী টিকা কেনা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, দ্বিতীয় ডোজের ১৩ লাখের মতো টিকার ঘাটতি নিয়ে তারা এখন কিছুটা উদ্বিগ্ন। এ জন্য ভারতের পাশাপাশি যেসব দেশে অক্সফোর্ডের টিকা মজুদ আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, টিকা পেয়ে যাবেন।
মন্ত্রী বলেন, টিকার জন্য একটি কিংবা দুটি উৎসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাই না। এ জন্য রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে টিকার চুক্তি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দুটি দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। দ্রুতই একটি সমাধানে পৌঁছানো যাবে, যাতে দেশের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা পাওয়া যায়। সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com