
নেতানিয়াহু গেলেও ফিলিস্তিনের জন্য সুসংবাদ নেই
প্রকাশ: ০৫ জুন ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ০৫ জুন ২১ । ০২:৪২ | প্রিন্ট সংস্করণ
মারওয়ান বিশারা

ইসরায়েলের বিরোধী জোটের লক্ষ্য দেশটির প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিদায় ঘটলেও ইসরায়েলে বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কি ইতিবাচক কোনো পরিবর্তন আসবে? এই জোটের ধরন ও দীর্ঘমেয়াদের চুক্তি এটাই বলছে, রাজনৈতিক ময়দানে আদর্শের চেয়ে ব্যক্তিগত ইচ্ছাই বড় হয়ে উঠবে। এমনকি নেতানিয়াহু প্রথমে দেখিয়েছিলেন ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহের ঊর্ধ্বে উঠে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু ফিলিস্তিনি আরব দলগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তির ক্ষেত্রে তার আচরণ ছিল অগ্রহণযোগ্য। উল্টো নেতানিয়াহু ইসরায়েলে বর্ণবাদ উস্কে দিয়েছেন।
এখন মনে হচ্ছে, নেতানিয়াহু 'দ্য ম্যাজিশিয়ান' বা জাদুকর তার জাদু হারিয়েছেন। তিনি অনেক বেশি বেড়েছেন, অনেক বেশি মিথ্যা কথা বলেছেন এবং শীর্ষে থাকার জন্য অনেককেই মাড়িয়েছেন। এজন্যই তার বিরুদ্ধে সবাই জোট গড়েছেন। অন্তত এজন্য তারা যেন পুনরায় নেতানিয়াহুর দ্বারা প্রতারণার শিকার না হন। বিরোধী দলগুলোর চুক্তি অনুযায়ী কট্টর ডানপন্থি দল ইয়ামিনা পার্টির প্রধান নাফতালি বেনেট প্রথমে দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। বেনেটের সঙ্গে এভিগডর লিবারম্যানের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের কথা রয়েছে। এরা উভয়েই নেতানিয়াহুর সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসরায়েলের হবু আইনমন্ত্রী গিডেন সায়ার নেতানিয়াহুর মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমনকি বেনেটের পরবর্তী দুই বছরের জন্য হবু প্রধানমন্ত্রী মধ্যপন্থি দল ইয়েস আদিতের নেতা ইয়ার লাপিড এবং তার সঙ্গে বেনি গান্টস অতীতে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন। এই দু'জনই নেতানিয়াহুকে প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে নামাতে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন।
তবে গাছ থেকে আপেল পড়লে তা খুব বেশি দূরে যায় না। নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করা এই নেতৃবৃন্দ মতাদর্শিক দিক থেকে খুব বেশি দূরে অবস্থান করবেন- এমনটা ভাবার কারণ নেই। আমরা দেখেছি, বিরোধী জোটের এই শরিকরা নেতানিয়াহুর সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিগত বড় বিষয়ে খুব কমই দ্বিমত পোষণ করেছিল। বেনেট কখনোই পশ্চিম তীরে নতুন বসতি নির্মাণ কিংবা গাজা দখলের বিরুদ্ধে হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। সংসদীয় আসনে সীমাবদ্ধতাও এখানে রয়েছে।
আগামী দিনগুলোতে কী হবে কেউ যদি তা চিন্তা করেন, তাহলে নেতানিয়াহুর চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হবে না। আমি বলব, তাহলে দ্বিতীয়বার চিন্তা করুন। বেনেট হলেন সেই ব্যক্তি- একটি পরিচিত সেটলার গ্রুপের সাবেক নেতা, যার মধ্যে এমন উগ্রতা রয়েছে যে, আরবদের হত্যা করে গর্ববোধ করেন। এমনকি নেতানিয়াহুর চেয়েও বেনেটের সংশয় কম। ২০১৯ সালের এপ্রিলে তার দল নেসেটে যাওয়ার মতো কোনো আসনই পায়নি। আর এখন তিনি কিনা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। অবিশ্বাস্য বটে!
লিকুদ পার্টি যদি অপরাধে অভিযুক্ত নেতানিয়াহুকে দলের নেতৃত্ব থেকে পদচ্যুত করে, বিশেষ করে এখন যেভাবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও জালিয়াতির মতো গুরুতর অপরাধের বিচার হচ্ছে, সেক্ষেত্রে তাকে জেলে যেতে হতে পারে। সেটিই অন্যদের পথ খুলে দেবে; যার মাধ্যমে ডানপন্থি দলগুলো ইসরায়েলি সংসদ নেসেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। এখন নেসেটে ডানপন্থি লিকুদ পার্টি ৩০ আসনে রয়েছে।
গত কয়েক দশকে প্রতিষ্ঠিত দলগুলো কিছু কট্টর দলের জন্ম দিয়েছে যারা ফিলিস্তিনে অবৈধ দখল ও পশ্চিম তীরে বসতি নির্মাণে সমর্থন দিচ্ছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোর বিরোধিতা করছে। এ দলগুলো ভবিষ্যতের যে কোনো জোটের জন্য পরিহার্য হয়ে উঠবে। তাদের ছাড়া বড় কোনো দলই সরকার গঠন করতে পারবে না। মোদ্দাকথা, ইসরায়েলে সরকার পরিবর্তনের মধ্যে নীতিগত পরিবর্তনের কোনো প্রত্যাশা করা ঠিক বোকামি। বরং সরকার পরিবর্তনে অনিবার্য হিসেবেই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। নেতানিয়াহু চলে যেতে পারেন কিন্তু নেতানিয়াহুর অনুসারীরা কিন্তু আসছেন।
আলজাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্নেষক; ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর মাহফুজুর রহমান মানিক
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com