
বজ্রপাতে লোহার গেট বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজনের মৃত্যু
প্রকাশ: ০৫ জুন ২১ । ২২:৩২ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২১ । ১৪:০৭
সমকাল প্রতিবেদক

দিনে বৃষ্টি হলেই গলিতে নেমে পড়ত সাবিনা ওরফে পাখি (১০) ও ঝুমা (১২)। পাশাপাশি দুই বাসায় থাকত তারা। যতক্ষণ বৃষ্টি হতো, ততক্ষণই ভিজত আর খেলা করত। শনিবার দুপুরে বৃষ্টি শুরু হলে ঘরে থাকতে পারেনি এ দুই শিশু। বৃষ্টির সময় বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল বিকট শব্দে। এরপরও তারা নেমে পড়ে ভিজতে। আনন্দ-উল্লাস করছিল পানির ঝুম শব্দের সঙ্গে।
কিন্তু তারা আর ফিরতে পারেনি ঘরে। বজ্রপাতের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে এ দুই শিশুসহ তিনজন। অন্যজন হলেন আব্দুল হক (৬০)। শিশু দুটিকে বাঁচাতে গিয়ে তারও মৃত্যু হয়। রাজধানীর মালিবাগে আবুল হোটেলের পেছনের একটি গলিতে মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিসের খিলগাঁও স্টেশনের সিনিয়র অফিসার মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান সমকালকে বলেন, তিনজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ইউনিট নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তারা পৌঁছানোর আগেই তিনজনকে হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। প্রথমে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে জানান, বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুতের তার ছেঁড়ার মতো কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। বৃষ্টির সময় বজ্রপাত হয়েছে। বজ্রপাতে লোহার গেট বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনজন প্রাণ হারিয়েছে।
পুলিশ জানায়, পাখির বাবা মহসিন আলী রিকশাচালক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আবুল হোটেলের পেছনে সোনা মিয়ার গলিতে একটি টিনশেড বাসায় বাস করেন। শনিবার দুপুরে বৃষ্টির সময় পাখি ভিজতে নামে। একই সময় প্রতিবেশী ঝুমাও ভিজছিল। তাদের বাসা পাশাপাশি এবং একে অপরের পরিচিত। হঠাৎ বিকট শব্দে বজ্রপাত হয়। এ সময় সোনা মিয়ার গলির একটি বাড়ির লোহার গেট বিদ্যুতায়িত হয় এবং তাতে হাত দিয়ে প্রাণ হারায় ঝুমা। তাকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারায় পাখি।
তাদের দু'জনকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আব্দুল হক তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে তিনিও বিদ্যুতায়িত হয়ে মারা যান। ঝুমার বাবা ফুটপাতে ফুচকা বিক্রি করেন। শিশু দুটির মা গার্মেন্ট কর্মী। ঘটনার সময় তাদের বাবা-মা কেউই বাসায় ছিলেন না।
ঝুমার মা জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে তিনি শুনেছেন, ঝুমা লোহার গেটে হাত দিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় পাখি ভেবেছিল সে এমনিতেই পড়ে রয়েছে। এই ভেবে সে ঝুমার গায়ে লাথি মারে এবং সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর সে পড়ে যায়।
পাখির মা কুলসুম বেগম বলেন, তার এক মেয়ে এক ছেলে। এর মধ্যে পাখি বড়। সে স্থানীয় একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে। তিনি বলেন, দিনের বেলায় বৃষ্টি হলেই তার মেয়ে ভিজতে নামত। বারবার নিষেধ করলেও সে শুনত না।
হাতিরঝিল থানার ওসি আব্দুর রশীদ বলেন, ঘটনার পর স্বজনরা পাখিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঝুমা ও আব্দুল হককে মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে কমিউনিটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। তাদের শরীরে কোনো দাগ নেই বলে জানান তিনি।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com