
নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি রাবি উপাচার্যের
প্রকাশ: ২৮ জুন ২১ । ২০:২৩
রাবি প্রতিনিধি

নিজের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। সোমবার তার পক্ষে নগরীর মতিহার থানায় জিডিটি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম। মতিহার থানার জিডি নম্বর-১২৫৯।
সোমবার বিকেলে এই জিডি করা হয়। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি সাধারণ জিডির জন্য একটি অভিযোগ এসেছিল, সেটি গ্রহণ করা হয়েছে। উপাচার্যের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।
সাধারণ ডায়েরিতে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম উল্লেখ করেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা, তার নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। বিষয়টি অবহিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে ও মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে তিনি আমাকে অনুরােধ করেছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে আপনাকে একটি সাধারণ ডায়েরি নথিভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি।’
তবে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নিতে রেজিস্ট্রার বরাবর উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা একটি নোট লিখেছেন। তার নোটের প্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার এই জিডি করেন। যেটি জিডির সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে উপাচার্য বলেন, ‘গত বছর ১০ ডিসেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক আদেশের মাধ্যমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নিয়ােগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করে এবং সে নির্দেশ আমলে নিয়ে তৎকালীন উপাচার্য সকল নিয়োগ স্থগিত রাখেন। কিন্তু তার মেয়াদের শেষ দিন চলতি বছরের ৬ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে নিজ ক্ষমতাবলে ১৩৮ জনকে এ্যাডহক নিয়োগ দেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে বিভিন্ন বিভাগে ৯ জন শিক্ষক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট সেকশন ২৯, ধারা সি-৪(৩) ভঙ্গ করে এ শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চার সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গঠিত তদন্ত কমিটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নানা তথ্য-উপাত্ত সগ্রহ করেন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেন।’
এতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তরা তখন থেকে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তথা আমার ওপর বারবার চাপ বৃদ্ধি করতে থাকে। গত ১৯ জুন তারিখ সকাল ৯.৩০ মিনিটে আমার বাসার গেটের সামনে ৫০-৬০ জন চাকুরিপ্রত্যাশী হট্টগোল করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে আমার স্ত্রী-কন্যারা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বাসার কম্পাউন্ডের মধ্যে তারা প্রায় দুই ঘণ্টা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখে। সেদিনের বিশৃঙ্খলকারীদের অন্যতম হল ফিরোজ মাহমুদ, মতিউর রহমান মূর্তজা প্রমুখ। শুধু তাই নয়, গত ২২ জুন সন্ধ্যা ৬টায় আমার বাসভবনের সামনে কয়েকজন এসে মহড়া প্রদর্শন করে, তাদের অন্যতম ছিলেন ইন্দ্রনীল মিশ্র এবং শাহরিয়ার মাহবুব।’
নোটে তিনি আরও বলা হয়, '১৯ জুন ফাইন্যান্স কমিটির সভা ও ২২ জুন সিন্ডিকেট সভাও তাদের বাধার কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। গুরত্বপূর্ণ এই দু'টি সভা না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। এর ফলে বিশ্ববিদ্যায়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এবং আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন রক্ষার্থে বিষয়টি মতিহার থানায় সাধারণ ডায়রি হিসেবে অন্তর্ভূক্তকরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।'
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উপাচার্য আমায় সাধারণ ডায়েরি করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আমি হুকুমই পালন করেছি।’
রুটিন উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা ও অর্থকমিটির সভা স্থগিত করতে অনেকেই আমার বাড়িতে এসেছিল। কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্য সিন্ডিকেট অর্থ কমিটির সদস্যদের বাড়িতে গিয়ে মিটিংয়ে উপস্থিত না থাকতে হুমকি দিয়েছে চাকরি পাওয়া অনেকে। প্রশাসন ভবন, সিনেট ভবন ও উপাচার্য ভবনে তালাও দিয়েছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে আমার পরিবারের সকলেই নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।'
প্রসঙ্গত, ৬ মে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার শেষ কর্মদিবসে ১৩৮ জনকে অ্যাডহকে নিয়োগ দিয়ে যান। ওইদিনই এই নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণা করে তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সাত কর্মদিবস পর কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে এবং সেখানেও তারা এই নিয়োগকে অবৈধ উল্লেখ করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠনের কারণে গত ৮মে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগদান স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর পর থেকে চাকরিপ্রাপ্তরা নিয়মিত আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাদের বাধার মুখে ১৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভা এবং ২২ জুন অর্থ কমিটির সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com