করোনা সংক্রমণে ঊর্ধ্বগতি

অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রি বেড়েছে পাঁচ গুণ পর্যন্ত

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২১ । ০২:৩৬ | প্রিন্ট সংস্করণ

রাজীব আহাম্মদ

বাতাস থেকে বিনামূল্যে পাওয়া অক্সিজেন যে অমূল্য, তা বুঝিয়ে দিয়েছে করোনাকাল। মাস দুয়েক আগে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রধান খবর ছিল, ভারতে করোনা আক্রান্তরা অক্সিজেন পাচ্ছেন না। রোগীকে বাঁচাতে স্বজনরা অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য পথে পথে ঘুরছেন, ধরনা দিচ্ছেন। বাংলাদেশও এখন ভুগছে করোনার ভারতীয় ধরনে। প্রায় প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যার রেকর্ড হচ্ছে। রোগীর সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা।

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা জানান, করোনাকালে বিক্রি বেড়েছে দুই থেকে পাঁচ গুণ পর্যন্ত। গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সিলিন্ডারের চাহিদা বেড়েই চলেছে। রোববার রাজধানীর মগবাজার রেলগেট এলাকার 'নাঈম এন্টারপ্রাইজ' নামের দোকানের সামনে অসংখ্য সিলিন্ডার চোখে পড়ে। গত সোমবার দুপুরে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়।

দোকানটির মালিক নাঈম হাসান সমকালকে জানান, করোনা মহামারি শুরুর আগে দিনে পাঁচ থেকে ১০টি সিলিন্ডারের চাহিদা ছিল। গত বছরের এপ্রিল থেকে বিক্রি বাড়তে শুরু করে। তখন অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে প্রয়োজন না থাকলেও বাসায় অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুদ করেন। সে কারণে চাহিদা বেড়েছিল। তবে সেগুলো ব্যবহারের প্রয়োজন না হওয়ায় পূর্ণ অবস্থাতেই ফেরত এসেছিল।

নাঈম হাসান জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। তখনও দিনে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০টি সিলিন্ডার বিক্রি হতো। কিন্তু এ বছরের এপ্রিলে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। সিলিন্ডারের চাহিদা বাড়তে থাকে। এপ্রিল ও মে মাসে দিনে ২০ থেকে ৩০টি সিলিন্ডারের চাহিদা ছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে দিনে সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। তবে কোম্পানি থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।

এখানে কথা হয় হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিক্ষানবিশ চিকিৎসক সাব্বির হাসানের সঙ্গে। তিনি নিজেই ক্রেতা। জানালেন, তাদের মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রের স্বজন করোনায় আক্রান্ত। তার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিচ্ছেন।

হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে পাইপের মাধ্যমে বা সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও সিলিন্ডার কেন? এ প্রশ্নে ডা. সাব্বির জানান, করোনা আক্রান্তদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সহায়তা প্রয়োজন। রোগীকে হয়তো মিনিট পাঁচেকের জন্য শৌচাগারে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। এই সময়টুকু তাকে অক্সিজেন ছাড়া রাখলে বিপদ হতে পারে। তাই সব রোগীর সঙ্গে সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে।

১৯৯৬ সাল থেকে এ ব্যবসা করা নাঈম জানান, করোনাকালে অনেকে সুযোগ পেয়ে সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ অনৈতিক কাজটি তিনি করছেন না। আগের দামেই বিক্রি করছেন। ১০ কেজি অক্সিজেন ধারণ ক্ষমতার বড় সিলিন্ডার ৬০০ টাকা, মাঝারি সিলিন্ডার ৪০০ এবং ছোট সিলিন্ডার ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তবে সিলিন্ডারের জন্য ১০ হাজার টাকা জামানত রাখছেন। রোগীর প্রয়োজন শেষ হলে সিলিন্ডার ফেরত দিয়ে জামানতের টাকা ফেরত নিচ্ছেন। তবে কেউ স্থায়ীভাবে সিলিন্ডার কিনতে চাইলে দাম ১৪ হাজার টাকা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই দোকান খোলা রয়েছে। যে কোনো সময়েই অক্সিজেন রিফিল করা যাবে।

অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজে আসা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৌকির হাসান বলেন, তার বাবা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের করোনা হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালের কোনো কোনো রোগী দুই-তিনটি করে সিলিন্ডার মজুদ করেছেন অক্সিজেন সংকটের আশঙ্কায়। তাকেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত সিলিন্ডার মজুদ রাখতে। তাই নিচ্ছেন।

অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ীরা জানান, বাসাবাড়িতে রান্নার গ্যাস যে প্রক্রিয়ায় বিপণন করা হয়, একইভাবে অক্সিজেন বিক্রি হয়। বড় কোম্পানিগুলো অক্সিজেন ভরে দেয় সিলিন্ডারে। তারা দোকানে সিলিন্ডারে ভর্তি অক্সিজেন বিক্রি করেন এবং খালি সিলিন্ডার ফেরত নেন।

মগবাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডারের আরেক দোকান এম আবদুল্লাহ এন্টারপ্রাইজে সোমবার দুপুরে দেখা যায়, হাসপাতালের জন্য সিলিন্ডার নিতে গাড়ি এসেছে। এফঅ্যান্ডএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের এক কর্মী জানালেন, ১০টি সিলিন্ডার নিতে এসেছেন করোনা রোগীদের জন্য। দোকানের কর্মী জানালেন, তাদের প্রতিষ্ঠান ছোট। মূলত অ্যাম্বুলেন্সে অক্সিজেন সরববরাহ করেন তারা। করোনাকালে বিক্রি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে।



© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com