ঈদযাত্রা কমলাপুর

ইন্টারনেট নেই যার ট্রেনে চড়া হচ্ছে না তার

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২১ । ০৯:৫৯ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২১ । ১০:১২

রাজীব আহাম্মদ

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনে উঠছেন যাত্রীরা

লকডাউনে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চলছে যাত্রীবাহী ট্রেন। করোনার সংক্রমণ রোধে আসনের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলছে ট্রেন। সকাল ৮টার দিকে রাজধানী ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, শুধুমাত্র টিকিটধারী যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। সব টিকিট অনলাইনে বিক্রি হওয়ায় ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষ আন্তঃনগর ট্রেনে চড়ার সুযোগই পাচ্ছেন না। টিকিটের জন্য তারা স্টেশনে ভিড় করেও টিকিট না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। 

সকাল সোয়া ৮টার দিকে স্টেশনের প্রবেশমুখে কথা হয় দিনাজপুরের বিরলের মো. মুজিবের সঙ্গে। তিন ও তার আরেক সঙ্গী যাবেন দিনাজপুর। তারা মুন্সিগঞ্জে ক্ষেতে দিনমজুরের কাজ করেন। সেখান থেকে ভোরে বাসে কমলাপুর এসেছেন। এসে জানলেন, স্টেশন থেকে টিকিট দেওয়া হয় না।  

মুজিব বলেন, তাকে পুলিশ বলেছে মোবাইলে নাকি টিকিট বিক্রি হয়। মোবাইলে কী করে টিকিট কিনতে হয়, তা জানেন না। টিকিট কেনার উপায় দেখিয়ে দিতে শার্টের বুট পকেট থেকে সস্তার ফিচার মোবাইল ফোন বের এই প্রতিবেদকের হাতে ধরিয়ে দেন। আকুতি জানান, দু’টি টিকিট ‘কিনে’ দিতে। তার হাতের মুঠোয় এক তোড়া ভাংতি টাকা।  

মুজিবকে যখন জানালাম, ‘রেল সেবা’ অ্যাপ এবং ওয়েব সাইটে টিকিট বিক্রি হয়। তার জন্য স্মার্ট ফোন থাকতে হয়। আগেই থেকে অ্যাকউন্ট খুলতে হয়। টিকিটের দাম পরিশোধ করতে হয় ব্যাংকের কার্ড বা মোবাইল ব্যাংকিং থেকে। শুনে মুজিব হতভম্ব! এই সাত সকালে কোথায় পাবেন অ্যাপ বা ওয়েব! জানতে চাইলেন, মতিঝিলের দিকে গেলে দোকানে অ্যাপ বা ওয়েব পাওয়া যাবে না?  

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ ভিড়

পাশে থাকা কাওসার নামের আরেক তরুণ যাবেন বগুড়ার সান্তাহারে। তিনি ঢাকায় ইজিবাইক চালান। তারও টিকিট নেই। স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটার নেই। টিকিট পাবেনই বা কী করে। স্টেশনে এসেছিলেন যদি একটা গতি হয় এই আশায়। মুজিবের পরামর্শক হলেন কাওসার। বললেন, কম্পিউটারের দোকানে টিকিট বিক্রি হয় বলে শুনেছেন। সেখানে যেতে। মুজিবও রওনা হতে চাইলেন। তাকে থামিয়ে এই প্রতিবেদক নিজের ফোন থেকে অনলাইনে ঢুকে দেখলেন, ঢাকা-দিনাজপুরের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। 

শুনে মুজিব বললেন, ‘তাইলে তো সারছেই। আমরা গরিব মুর্খ মানুষ। সরকার আমাদের টিকিট না দিয়ে সব নেখাপড়া লোকেরে দিয়ে থুয়ে দিচ্ছে। আমাগের বড় মোবাইল নাই বলে কী ট্রেন উঠতে পারব না! কোঠি টিকিট না পালি বাসেই যাইতে হবে।' বলে সঙ্গীকে নিয়ে বাসের খোঁজে রওনা হলেন তিনি। 

স্বাভাবিক সময়ে সারাদেশে প্রতিদিন ১০২টি আন্তঃনগরসহ ৩৬০টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলে। ঈদ উপলক্ষে করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় এখন চলছে মাত্র ৩৮টি আন্তঃনগর ট্রেন। তাতে দিনে ১০ হাজারেরও কম যাত্রী পরিবহন করা যাবে। স্বাভাবিক সময়ে আন্তঃনগরে দৈনিক ৫০ হাজারের বেশি যাত্রী চলাচল করেন। 

বৃহস্পতিবার থেকে ২৩ জুলাই ভোর পর্যন্ত চলবে ট্রেন। আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত কমলাপুর স্টেশন থেকে ৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। প্রতি ঈদে সিডিউল বিপর্যয় হলেও এবার নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছাড়ছে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারোয়ার। 

আন্তঃনগরের টিকিট অনলাইনে বিক্রি হলেও মেইল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট স্টেশন থেকেই বিক্রি হচ্ছে। সকাল ৯টার দিকে কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, এসব ট্রেনের কাউন্টারের সামনে হাজারও মানুষের ভিড়। সেখান কথা হয়, জামালপুরের যাত্রী আবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, অনলাইনে দুই দিন চেষ্টা করেও আন্তঃনগরের টিকিট পাননি। সকাল ৭টায় এসে ‘জামালপুর কমিউটার’ ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন। রোদে টিকতে পারছেন না। স্ত্রী সন্তানকে গাছের ছায়ায় বসিয়ে রেখে নিজে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। 

তবে নির্বিঘ্নে স্বাচ্ছন্দ্যেই ট্রেনে চড়তে পারছেন অনলাইনে টিকিট কিনে স্টেশনে আসা আন্তঃনগরের যাত্রীরা। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে দেখা যায়, গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা করার অপেক্ষায় থাকা ট্রেনগুলো জীবাণুনাশক ছিটিয়ে পরিষ্কার করছেন রেলের কর্মীরা। অন্যান্য বছরের ঈদের তুলনায় স্টেশনের বাইরে ও প্ল্যাটফর্মে ভিড় একেবারেই নেই। কোনো কোনো প্ল্যাটফর্ম সকাল ৯টার দিকেও ছিল খালি। 

সকালে কথা হয় চট্টগ্রামগামী ‘মহানগর প্রভাতী’র যাত্রী নওসাদ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, খুব সহজেই ট্রেনে উঠেছেন। ভিড় একেবারেই নেই। আশা করছেন নির্দিষ্ট সময়েই গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ কাটাতে পারবেন। 

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com