
খুলনার রূপসার মন্দিরে ভাংচুরের মামলায় গ্রেপ্তার ১০
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২১ । ১৭:০১ | আপডেট: ০৮ আগস্ট ২১ । ২০:৪৫
খুলনা ব্যুরো ও রূপসা প্রতিনিধি

খুলনার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামে মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের দোকান ও বাড়ি ভাংচুরের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শনিবার রাতে রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রূপসা থানা।
রূপসা থানার ওসি মোশাররফ হোসেন জানান, শনিবার রাতে মামলা দায়েরের পর রাতভর অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি রয়েছেন ৯ জন। অন্য একজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে রোববার ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ঘাটভোগ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও সম্রাট মোল্লা, শিয়ালী গ্রামের মঞ্জুরুল আলম, বামনডাঙ্গা গ্রামের শরিফুল ইসলাম শেখ, রানা শেখ, মোল্লাহাট উপজেলার বুড়িগাংনী গ্রামের আকরাম ফকির, সোহেল শেখ, শামীম শেখ ও জামিল বিশ্বাস। এছাড়া বামনডাঙ্গা গ্রামের মোমিনুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মামলায় শিয়ালী পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের ইমাম নাজিম সমাদ্দারকে প্রধান আসামি, মাসুম মল্লিককে দ্বিতীয় আসামি ও লিটন মল্লিককে তৃতীয় আসামি করা হয়। তাদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
খুলনার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার বলেন, পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের অল্প সময়ে গ্রেপ্তার করা হবে। এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করছে পুলিশ।
ওই ঘটনায় রূপসা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শক্তিপদ বসু ২৫ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয় ২০০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ে করেছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, রোববার সকাল থেকে শিয়ালী গ্রামে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিলো। সকাল থেকে পুলিশ ও র্যা ব এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। এলাকায় এখনও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
রোববার সকালে শিয়ালী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামের প্রধান সড়কের দুই পাশে দাড়িয়ে নীরব প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে গ্রামের মানুষ। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে গতকাল সকালে রান্না হয়নি।
সকালে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ, রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর ও জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা এলাকা পরিদর্শনে যান। এ সময় নেতাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রামের মানুষ।
শিয়ালী গ্রামের শিবপদ ধর সমকালকে বলেন, বিকালে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার বাড়িতে হামলা চালান ৫০/৬০ জন ব্যক্তি। প্রথমে তারা তার নাম ধরে খুঁজতে থাকে। এ সময় তিনি বাড়ির পেছন পাশ দিয়ে পালিয়ে বিলের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেন। তার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও দুই সন্তান বাড়িতে ছিলো। তাদের সামনেই বাড়িঘরের বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। বাড়ির ভেতরে তার বাবার স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙ্গে ফেলে। টয়লেট, চেয়ার টেবিল কিছুই বাদ দেয়নি।
পূজা উদযাপন পরিষদের রূপসা উপজেলা সভাপতি শক্তিপদ বসু বলেন, পুলিশের ভূমিকায় এখন আমরা সন্তুষ্ট। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
এদিকে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ আগস্ট রাত সাড়ে ৮ টায় শিয়ালী পূর্বপাড়ার ১৫-২০ জন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ঢাকঢোল বাজিয়ে হরিকীর্তন গাইতে গাইতে শিয়ালী গ্রাম থেকে শিয়ালী মহাশশ্মানের দিকে যাচ্ছিলেন। শিয়ালী পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সামনে রাস্তায় পৌঁছালে মসজিদে এশার নামাজের জন্য থাকা ইমাম নাজিম সমাদ্দার মসজিদের বাইরে এসে বলেন যে, এখন নামাজের সময়। তিনি হরিকীর্তন গান গাইতে নিষেধ করেন। তখন বাকতিন্ডতা শুরু হয়।
বিষয়টি নিয়ে শনিবার থানায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু শনিবার বিকাল পৌনে ৬টার দিকে শতাধিক দুর্বৃত্ত দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় ৪টি মন্দির, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকের ৬টি দোকান ও একটি বাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়।
সংবাদ পেয়ে রূপসা থানা ও শিয়ালী ক্যাম্পের পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ৭ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে উত্তেজিত মুসল্লিরা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে।
এদিকে ভাংচুর করা মন্দির ও শ্মশানের সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়া তাছনিম। তিনি জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীঘ্রই মেরামতের কাজ শুরু হবে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com