
বিধি-নিষেধ দ্রুত শিথিল করায় পরামর্শক কমিটির উদ্বেগ
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২১ । ০১:৫২ | আপডেট: ১৪ আগস্ট ২১ । ০২:৫২
সমকাল প্রতিবেদক

ফাইল ছবি
দেশজুড়ে করোনা মহামারি রোধে বিধি-নিষেধ দ্রুত শিথিল করার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। শুক্রবার রাতে পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের লকডাউন কঠোরভাবে পালিত না হলেও জনসমাবেশ হওয়ার মত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হারে উন্নতি দেখা যায়। তবে, সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কোনোটাই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি। এমন অবস্থায় সরকার বিধি-নিষেধ দ্রুত শিথিল করার সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করা হলো।’
এতে আরও বলা হয়, ‘জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার সরকারের দায়িত্ব উপলব্ধি করে সরকারের অবদান কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করে। বিধি-নিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করেছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। লকডাউন আরও ১ থেকে ২ সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যেত। এ অবস্থায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করে। ন্যূনতম সভা সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পর্যটন-বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরও কিছুদিন বন্ধ রাখা, রেস্টুরেন্ট-ক্যাফেটেরিয়াতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না রেখে কেবলমাত্র বিক্রি করার অনুমতি দেওয়া, সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল, যে ক্ষেত্রে সম্ভব বাড়িতে বসে কাজ করা ও অনলাইন সভা, কর্মশালা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখে অফিস খোলা রাখা, শতভাগ সঠিকভাবে তিন লেয়ার বিশিষ্ট মাস্ক পরার নিশ্চয়তায় ও অন্যথায় পুনরায় বন্ধ করার বিধান রেখে অফিস, আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট, বাজার খোলা। সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও শারীরিক দুরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।’
‘সভায় সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সদ্য সমাপ্ত ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে এক সপ্তাহে ৫০ লাখের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানানো হয়। বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেওয়ায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি মনে করে- ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না। সভা গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রয়োজনে এজন্য টিকাকেন্দ্র নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।’
আরও বলা হয়, ‘স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ ২১ আগস্ট বা কাছের যেকোনো দিন থেকে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষ, শেষ বর্ষের ক্লাস চালুকরণের বিষয়ে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত চেয়ে পত্র পাঠিয়েছে। কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এরই মধ্যে এ সব ছাত্র/ছাত্রীদের দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে এ দুই বর্ষের ক্লাস শুরু করার পক্ষে কমিটি মত দেয়।’
ক) ক্লাস শুরুর আগে সব ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপর প্রশিক্ষণ করাতে হবে।
খ) শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
গ) হাসপাতালের ওয়ার্ডে ক্লাসে ছাত্র/ছাত্রীদের সঠিকভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
ঘ) ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণের ওপর নজরদারি রাখতে হবে।
ঙ) সংক্রমিত ছাত্র/ছাত্রীদের চিকিৎসা/আইসোলেশন এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের ১৪দিন কোয়ারিন্টেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় তিন লেয়ারের সঠিক মাস্ক উৎপাদন ও বিক্রি নিশ্চিত করার জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মতামত দেওয়া হয়।
এর আগে ১২ আগস্ট রাত ৯ টায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লার সভাপতিত্বে কমিটির ৪৪তম অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com