রক্তে লেখা নাম

বঙ্গবন্ধুর নির্ভরযোগ্য জীবনীগ্রন্থের সন্ধানে

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ২০ আগস্ট ২১ । ০০:২৪ | প্রিন্ট সংস্করণ

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান [১৯২০-১৯৭৫]

[গত সংখ্যার পর]

৬.

পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি সম্পর্কে আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ২২শে ডিসেম্বর পাকিস্তান কারাগার থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়, তবে তাঁকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। 'নিউ ইয়র্ক টাইমস' পত্রিকা ২১শে ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের ঘোষণা প্রকাশ করে। পরের দিন (২২শে ডিসেম্বর) একই পত্রিকায় লেখা হয়, তাঁকে অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনার জন্য ২৩ তারিখে তাঁকে রাওয়ালপিন্ডি আনা হয়েছে। পরবর্তীকালে তাঁকে তুরস্ক বা ইরান যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ৮ই ডিসেম্বর তারিখে আকস্মিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু ৮ তারিখে ছাড়া পেলেও লন্ডন যেতে বাধ্য হন।

১৯৭১ সালের ২২শে ডিসেম্বর রাতের খবরে রেডিও পাকিস্তান জানায় যে, পাকিস্তানের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট এবং চিফ মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জুলফিকার আলি ভুট্টোর সিদ্ধান্ত মোতাবেক পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবকে মিয়াঁওয়ালি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ওই দিন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার পাকিস্তানের রাজধানী রাওয়ালপিন্ডি থেকে জানায় যে, 'পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে এবং কোনো একটি অজ্ঞাত স্থানে গৃহবন্দি রাখা হয়েছে।' উল্লেখ্য, রয়টারের পাঠানো এই খবরটি পরদিন ২৩শে ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস' পত্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় মুদ্রিত হয়েছিল। তবে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় এমনকি ভারতের কলকাতা বা দিল্লির কোনো পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়েছিল প্রতীয়মান হয় না। বিষয়টি অনুসন্ধানের দাবি রাখে। পরদিন ২৩শে ডিসেম্বর যখন ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কেবিনেট কক্ষে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়; কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কারামুক্তি ও অন্যত্র অবস্থানের বিষয়টি বৈঠকে অংশগ্রহণকারী কারও জানা ছিল না। ২৭শে ডিসেম্বর বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠকেও ভুট্টো কর্তৃক ২২শে ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিদানের বিয়টি আলোচিত হয়নি। এ সূত্রে আরও স্মরণযোগ্য যে, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত দুর্গাপ্রসাদ ধর (ডি.পি. ধর) ২৩ থেকে ২৯শে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করে বাংলাদেশ সরকারকে নানা বিষয়ে সহায়তা প্রদান করেছিলেন।

এখানে পাঠক স্মরণ করতে পারেন যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানে একটি বেসামরিক সরকার গঠন করেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে বিজয়ী নুরুল আমিনকে প্রধানমন্ত্রী এবং জুলফিকার আলি ভুট্টোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ২০ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করেন এবং ভুট্টো স্থলাভিষিক্ত হন। যুদ্ধ থেকে ভারতকে নিবৃত্ত করতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানাতে ভুট্টো ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তা পরিষদে জ্বালাময়ী ভাষণ দিয়ে জাতিসংঘ ভবন থেকে অশ্রুময় চোখে নিষ্ফ্ক্রান্ত হন। পারিবারিক সূত্রে ইয়াহিয়া খানের জরুরি বার্তা পেয়ে তিনি ২০ তারিখে রোম হয়ে রাওয়ালপিন্ডি প্রত্যাবর্তন করেন এবং অবিলম্বে প্রেসিডেন্ট ও চিফ মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

১৬ই ডিসেম্বর অপরাহেপ্ত বিকেল ৪টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার পরে গভীর রাতে খাজা তোফায়েল নামে একজন জ্যেষ্ঠ কারা কর্মকর্তা মিয়াঁওয়ালি জেলখানায় বঙ্গবন্ধুর কারাকক্ষ এলাকার বহির্দ্বারে খুব জোরে করাঘাত করেন। শেখ মুজিবের নজরদার রাজা খান গেটের তালা খুলে দেন। তারপর দু'জনে মিলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মিয়াঁওয়ালি জেলখানা থেকে নিষ্ফ্ক্রান্ত হন। বঙ্গবন্ধু প্রশ্ন করেন, তাঁকে ফাঁসিকাষ্ঠে নেওয়া হচ্ছে কিনা। উত্তরে বলা হয়, তাঁর পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে এবং জেলে থাকলে তাঁর জীবন বিপন্ন হতে পারে; এ কারণে তাঁকে কারাগারের চৌহদ্দি থেকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

তাকে মিয়াঁওয়ালি জেলখানার অদূরবর্তী স্থানে একটি ফাঁকা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এটি ছিল স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডিএসপি (হেডকোয়ার্টারস)-এর জন্য নির্ধারিত বাড়ি। এ বাড়িতে দু-তিন দিন থাকার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে চশমাব্যারেজে আরেকটি নতুন বাড়িতে স্থানান্তর করা হয়। কয়েক মাস আগে চশমাব্যারেজের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, ২৫ বা ২৬শে ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুকে হেলিকপ্টারে করে রাওয়ালপিন্ডি শহরের কাছে অবস্থিত সিহালা রেস্ট হাউসে স্থানান্তর করা হয়।

কোনো সূত্রোল্লেখ ছাড়াই এস. এ. করিম তাঁর গ্রন্থে ২৬শে ডিসেম্বর প্রথমে একটি গেস্ট হাউসে বঙ্গবন্ধুকে স্থানান্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন, ওই গেস্ট হাউসে এক রাত অবস্থানের পর তাঁকে সিহালা রেস্ট হাউসে স্থানান্তর করা হয়। বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও গতিবিধি-সংক্রান্ত সব তারিখ (এবং সময়) যাচাই করা দরকার। সম্প্রতি ৬ এপ্রিল ২০২১ তারিখে বাংলাদেশ অবজার্ভার পত্রিকায় ইরতিজা হাসনাইনের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, যার বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় ভুট্টো আসার কয়েকদিন আগেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সিহালা রেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয়েছিল।

সিহালা রেস্ট হাউসটি সিহালস্থ পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে কমান্ডেন্ট বাংলোর অদূরে অবস্থিত। ছয় কক্ষের সুসজ্জিত এই রেস্ট হাউস গুরুত্ববহ রাজনৈতিক বন্দিদের জন্য প্রায়শ ব্যবহার করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এ রেস্ট হাউসে কিচেন-সংলগ্ন প্রথম কক্ষেই ছিলেন ২৫শে বা ২৬শে ডিসেম্বর রাত থেকে ৮ জানুয়ারি দিন পর্যন্ত। রেস্ট হাউসটি সুসজ্জিত হলেও এর চারপাশে কোনো সীমানা প্রাচীর (বাউন্ডারি ওয়াল) নেই। বঙ্গবন্ধু পাজামা-পাঞ্জাবির ওপর ওভারকোট পরে বিকেলে লনে হাঁটাহাঁটি করতেন।

খাজা তোফায়েল ছিলেন কারা কর্মকর্তা ও শেখ আবদুর রহমান ছিলেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের এস. পি। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার খাতিরে নিজেদের উদ্যোগেই বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেছিলেন, না এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কারও নির্দেশ ছিল তা নিয়ে কোথাও কেউ লেখালেখি করেননি; কিন্তু বিষয়টি যে কৌতূহলোদ্দীপক তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

'দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস' পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল 'শেখ মুজিব মুভড ফ্রম প্রিজন টু হাউস অ্যারেস্ট'। হাউস অ্যারেস্ট শব্দটি সরকারি ভাষা। মিয়াঁওয়ালি কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুক্ত করা হয়েছিল কিনা এবং তাকে প্রথমে কোথায় রাখা হয়েছিল, এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। সন্দেহ নেই, পাকিস্তান থেকে বঙ্গবন্ধুর দ্রুত মুক্তির ব্যাপারে ভুট্টোর দৃঢ় ভূমিকা ছিল। কিন্তু তার পক্ষে ২১শে ডিসেম্বরের আগে সক্রিয় হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।

৭.

শেখ মুজিবুর রহমানকে লায়ালপুর (ফয়সালাবাদ) কারাগারে অন্তরীণ রাখা হয়েছিল। সেখানেই তাঁর বিচার হয়। ডিসেম্বরের ৩ তারিখে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ শুরু হলে তাকে মিয়াঁওয়ালি কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের ৪ তারিখে শেখ মুজিবকে লায়ালপুর কারাগার থেকে মিয়াঁওয়ালি কারাগারে নেওয়া হয়। মিয়াঁওয়ালি কারাগারের এক বন্দির বিবরণ অনুযায়ী-ডিসেম্বরের শুরুর দিকে এক রাতে জেল কমপাউন্ডে একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে কে বা কারা নেমে এলো সেটা আমরা দেখতে পাইনি। কেননা আমাদের সেল তালাবদ্ধ ছিল। সকালে আমরা জানতে পারি শেখ মুজিবকে লায়ালপুর জেল থেকে মিয়াঁওয়ালি আনা হয়েছে।

পাকিস্তানে নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপ্রধান জুলফিকার আলি ভুট্টো ২৭শে ডিসেম্বর এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। ভুট্টো সর্বমোট তিনবার এই রেস্ট হাউসে এসে সাক্ষাৎ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। পাছে ভুট্টো শেখ মুজিবকে আক্রমণ করে বসে, তাই নিরাপত্তার স্বার্থে গুলিভরা রিভলভার হাতে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর রাজা আনোয়ার খান। শেখ মুজিব এবং ভুট্টোর মধ্যকার কথোপকথন তিনি ভালোই শুনতে পেয়েছিলেন। এ ছাড়া স্পেশাল ব্রাঞ্চ মাইক্রোট্রান্সমিটার লাগিয়েছিল একটি গদিওয়ালা চেয়ারের নিচে। এই কথা টেপ রেকর্ড করা হয়েছিল। কিন্তু রেকর্ডিং ভালো হয়নি। পরবর্তীকালে জার্মানিতে নিয়ে গিয়েও রেকর্ডকৃত কথোপকথন সম্পূর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে যতখানি উদ্ধার করা গিয়েছিল তার কিছু স্টেইনলি ওলপার্ট ১৯৯৩-এ প্রকাশিত তাঁর 'জুলফি ভুট্টো অফ পাকিস্তান :হিজ লাইফ অ্যান্ড টাইমস' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (পৃ. ২২১ থেকে ২২৫)।

বঙ্গবন্ধু ড. কামাল হোসেনকে দেখতে চাইলে ভুট্টো পরদিনই তার ব্যবস্থা করেন। হরিপুর জেল থেকে ড. কামাল হোসেনকে পর দিন বঙ্গবন্ধুর কাছে নিয়ে আসা হয়। এছাড়া পরদিন সেনাবাহিনীর এক কর্নেল নিয়ে আসেন টিভি। পরদিন থেকে খবরের কাগজও সরবরাহ করা হতে থাকে।

সিহালার রেস্ট হাউসে ভুট্টো সাক্ষাৎ করতে এলে প্রথমেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আরে তুমি এখানে কি করছ?

ভুট্টোর উত্তর ছিল :আমি তো এখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং চিফ মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর।

কথোপকথনের এক পর্যায়ে ভুট্টো বললেন, পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে এখনও এক পাকিস্তানই আছে।

উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তাই যদি হয় তাহলে তুমি না, আমি হচ্ছি অখণ্ড পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ও চিফ মার্শাল ল' অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এখন বলো, আমি মুক্ত না বন্দি?

ভুট্টোর উত্তর ছিল, তুমি মুক্ত কিন্তু তোমাকে বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে আমার কয়েকদিন লাগবে।

সিহালার রেস্ট হাউসে জুলফিকার আলি ভুট্টোর মূল উদ্দেশ্য ছিল খুব ঢিলেঢালা হলেও পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি কনফেডারেশনের ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজি করানো। স্টেইনলি ওলপাট্থের উপর্যুক্ত বইয়ের ভাষ্য পড়ে বোঝা যায় তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে তুরস্ক, ইরান বা লন্ডন হয়ে বিমানযোগে ঢাকা গমনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি সরাসরি ঢাকা আগমনের পক্ষে ছিলেন। পরে তিনি লন্ডন হয়ে ঢাকা গমনের বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেন।

৭ই জানুয়ারি রাতে ভুট্টো তৃতীয়বারের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। পরদিন ৮ জানুয়ারি মধ্য রাতের পরে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনালের একটি বিশেষ বিমানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সঙ্গে ছিলেন ড. কামাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী। বঙ্গবন্ধুকে বিদায় জানাতে ভুট্টো বিমানবন্দরে এসেছিলেন। লন্ডন অবধি সাথে ছিলেন এয়ার মার্শাল জাফর চৌধুরী।

৮.

জানুয়ারির ৫ তারিখে (১৯৭২) শেখ মুজিব যখন বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন ৯ মাসের কারাসঙ্গী পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার খান (ছদ্ম নাম রাজা খান) শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি স্মৃতিচিহ্ন উপহার চান। বঙ্গবন্ধু বললেন, আমি কী দেব, আমার কাছে এখন তো কিছুই নেই।

পরে তিনি তার কাছে থাকা দস্তয়েভস্কির 'ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট' বইটি রাজা আনোয়ার খানকে উপহার দিয়েছিলেন।

উপহার দিতে গিয়ে বইয়ের টাইটেল পেইজে শেখ মুজিব লিখেছিলেন- 'মিথ্যা এবং সত্যের মধ্যে অনাদিকাল থেকে যুদ্ধ চলছে, যাতে প্রথমে মিথ্যার জয় হলেও শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় অনিবার্য।' স্বাক্ষর করে বঙ্গবন্ধু তারিখ লিখেছিলেন ৫ জানুয়ারি ১৯৭২।

৯.

মাত্র ৫ দিনের মধ্যে এই নিবন্ধটি দাঁড় করানো হয়েছে, যার কারণে না সম্ভব হয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা, না সম্ভব হয়েছে গুছিয়ে উপস্থাপনা করা। যেমন জি. ডাব্লিউ. চৌধুরীর 'দ্য লাস্ট ডেজ অফ ইউনাইটেড পাকিস্তান' বইটি খুঁজে পাওয়া গেল না। যাই হোক, এ নিবন্ধের একটিই উদ্দেশ্য আর তা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্ভরযোগ্য অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ ও সঠিক তথ্যসংবলিত জীবনী রচনার বিষয়ে গবেষক ও লেখকদের সচেতন করা। এ নিবন্ধে মাত্র ৭-৮টি বিষয় উদাহরণস্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে; ভুল ও অসংগতির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। একটি নির্ভরযোগ্য জীবনী রচনার জন্য অনেক উপাত্ত সংগ্রহ ও নৈর্ব্যক্তিক বিশ্নেষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। দেরি হয়েছে অনেক কিন্তু ব্রিটিশরা যেমন বলে, 'বেটার লেইট দ্যান নেভার'। তবে এর জন্য প্রচুর অর্থ বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে; প্রয়োজন হবে দক্ষ গবেষকের, ভারত ও পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের সহায়তা। এবং অবশ্যই শ্রমের সঙ্গে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি।

[সমাপ্ত]

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com