অলিম্পিকের প্রতি দেশের মানুষের আবেগ

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২১ । ১৬:২০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২১ । ১৭:৩২

ড. বিশ্বজিৎ সুর চৌধুরী

৮ আগস্ট টোকিওতে এবারের অলিম্পিকের আসরের সমাপনী অনুষ্ঠান অনাড়ম্বরভাবে শেষ হলো। কত আনন্দ অশ্রু, কত বেদনার ক্রন্দন দেখলাম। এই অলিম্পিকের ১৭ দিনে মানুষের ক্ষমতা, আর অনুভূতি ভাগাভাগি করার এক বিশ্বমেলা প্রাণ ভরে উপভোগ করলাম। সারা পৃথিবীর অ্যাথলেটরা করোনার ঝুঁকির মধ্যেও টোকিও অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করেছেন। জাপানও ইতিহাস সৃষ্টি করল মহামারির মধ্যে অলিম্পিকের মতো এত বিশাল আয়োজন করে। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্টও বলেছিলেন জাপান জন্যই এই আয়োজনে তিনি সম্মতি দিয়েছিলেন। সাবাস জাপান!

যদিও অলিম্পিকে যারা মেডেল জিতেছেন তারাই সেরা। কিন্তু যারা মেডেল জিততে পারেননি তাদের একান্ত প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই ছোট করা যাবে না। কারণ, পরাজিতরা না থাকলে জয়ীরা জয়ী হতে পারতেন না। পৃথিবীতে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে। জীবনযুদ্ধেও যারা পরাজিত বা পিছিয়ে পড়া তাদের প্রতি আমাদের যেন অবহেলা না থাকে। সমাজের সম্মান তারা হয়তো পান না; কিন্তু আপনার আমার সহানুভূতিটুকু তো পেতে পারেন। তারা জীবনে পরাজিত আর এ জন্যই আপনি আজ সমাজের দাপটের সঙ্গে চলছেন, এটা ভুললে তো চলবে না।

বাংলাদেশ অলিম্পিকের এই আসরে অংশগ্রহণ করেছে। বিষয়টি আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। তবে, এটাও তো সত্যি বছরের পর বছর মেডেলশূন্য হয়ে দেশে ফিরুক সেটাও তো চাইনি। আফ্রিকার মতো অনেক দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ, সিরিয়ার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশও যদি মেডেল পায়, বাংলাদেশের খালি হাতে ফেরাটা কষ্টের। অলিম্পিকে অ্যাথলেট পাঠাতে গেলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হয়। শিশু বয়স থেকে তাদের ট্রেইন-আপ করতে হয়। আবার অলিম্পিকের জন্য দেশের জনগণের মধ্যে আবেগ-ভালোবাসা থাকতে হয়; যেমনটি আছে আমাদের ক্রিকেটের প্রতি। সাম্প্রতিক টি-২০তে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় প্রত্যেক বাংলাদেশিকে আনন্দ দিয়েছে। আবার যখন বাংলাদেশ কখনও হারে সমানভাবে সবাই কষ্ট পান। তেমন আবেগের প্রয়োজন দেশের মানুষের অলিম্পিকের বেলায়।

জাপান প্রথম বার অলিম্পিকের আয়োজন করেছিল, এখন থেকে ৫৭ বছর আগে। এবার দ্বিতীয় বারের মতো গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করল। প্রথমবার আয়োজন করার ফলে দেশে ব্যাপক উন্নতি হয়। যেমন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলার সিস্টেম শুরু হয় তখন। কারণ, সারা পৃথিবী থেকে লোকজন আসবে তাই তাদের দেশকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন তো রাখতেই হবে। এই বোধ থেকে তাদের ময়লা-আবর্জনা নিস্কাশনের চমৎকার ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। এ দেশে প্রত্যেক মানুষের ভীষণ আবেগের জায়গা এই অলিম্পিক। এটি আন্তর্জাতিক এক মিলন মেলা, যেখানে নিজের দেশকে অ্যাথলেটরা অন্য ধরনের উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারেন। সে দেশ হতদরিদ্র হলেও, নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও ওই দেশের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বেড়ে যায়, যখন অলিম্পিকে একটা মেডেল জেতে। পরবর্তী অলিম্পিক, প্যারিস ২০২৪-এ বাংলাদেশ নিদেনপক্ষে একটি মেডেল পাবে, বাংলাদেশকে সারা পৃথিবী সম্মানের চোখে দেখবে এটি নিশ্চয় মোটেও বেশি চাওয়া নয়?

হারও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, যদি তা থেকে আমরা শিক্ষা নেই। জিততে সবাই চান। তারজন্য নিষ্ঠা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। তবে, অলিম্পিকের মতো আসরে জিততে গেলে শুধু অ্যাথলেটরাই নন, সেই দেশের জনগণেরও এই অলিম্পিকের প্রতি পূর্ণ সম্পৃক্ততা আর আবেগের বিকল্প নেই। আমাদের জন্যও তা সমানভাবেই প্রয়োজন।


© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com