
টিকাপ্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা
ধৈর্য ধরার আহ্বান
প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ২৩ আগস্ট ২১ । ০৩:০৭ | প্রিন্ট সংস্করণ
তন্ময় মোদক

ছবি: ফাইল
রাজধানীতে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আবদুর রাজ্জাক সরকার ও তার স্ত্রী মাহমুদা হক শোভনা টিকা নিতে সরকারি সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছিলেন গত মাসের ২৯ তারিখে। বাসা পাশে হওয়ায় টিকার নিবন্ধনের সময় শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালকে টিকাকেন্দ্র হিসেবে দিয়েছিলেন। এই দম্পতির ইচ্ছা ছিল, টিকা নেওয়া হয়ে গেলে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন।
তবে নিবন্ধনের তিন সপ্তাহের বেশি কেটে গেলেও এখনও টিকা গ্রহণের মেসেজ পাননি এই দম্পতির কেউই। এর মধ্যে বিভিন্নজনের মাধ্যমে টিকার মেসেজ পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা। পরে একপর্যায়ে নিজেই যান টিকাকেন্দ্রে। সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাকে 'ধৈর্য ধরার' পরামর্শ দিয়ে বিদায় করেন। এখন পর্যন্ত তাদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত না হলেও শঙ্কা কাটছে না তাদের।
আবদুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, 'শুধু আমি নই, আমার মতো অনেকেই টিকার তারিখ পাননি। আমার ভবনে ২২টির মতো পরিবারের বাস, এর মধ্যে মাত্র দুটি পরিবার টিকার আওতায় এসেছেন। পত্রপত্রিকায়ও একই চিত্র দেখতে পাচ্ছি। টিকার এসএমএস পেতে অনেক জায়গায় দেন-দরবার করেছি। কেউ কেউ আমার কাছে টাকাও চেয়েছেন। টিকার মজুদ না থাকলে নিবন্ধন করার কোনো মানেই হয় না। এটি আমার কাছে অতিরিক্ত ভোগান্তি মনে হচ্ছে।'
তবে রাজ্জাক দম্পতির আরও আগে নিবন্ধন করা কেউ কেউ এখনও টিকার মেসেজ পাননি। তাদেরই একজন মগবাজারের গৃহবধূ ফেরদৌসী আক্তার। তিনি নিবন্ধন করেছিলেন গত ১৯ জুলাই। এখনও টিকার জন্য ডাক পড়েনি তার। কয়েক সপ্তাহ ধরে টিকা নিবন্ধনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।
তাদের মতো নিবন্ধন করেও টিকা নিতে কোনো এসএমএস পাননি সারাদেশের প্রায় দুই কোটি লোক। এসবের পাশাপাশি করোনার টিকার কোনো ডোজ না নিয়েই টিকার দুই ডোজ সম্পন্নের সার্টিফিকেটও চলে এসেছে অনেকের। ভুক্তভোগীদের আশঙ্কা, টিকা না নিয়েও সরকারি সার্ভারে টিকার ডোজ সম্পন্ন চলে আসায় তারা আর টিকা নিতে পারবেন না। আবার আরেক শ্রেণি আছেন, যারা এক ধরনের টিকা নিলেও সার্টিফিকেটে অন্য ধরনের টিকা নিয়েছেন বলে ঘোষণা রয়েছে। এতে করে ভুক্তভোগীরা ভবিষ্যতে এসব বিষয় নিয়ে সমস্যায় পড়বেন কিনা- সে প্রশ্নটিও রাখছেন। আবার এমনও ঘটেছে যে, দুই ডোজ নেওয়ার পরও মেসেজ পেয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের।
এসব বিষয়ে গতকাল রোববার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, জট খুলতে কেন্দ্রগুলোতে বুথ বাড়ানো এবং প্রয়োজনে সাবসেন্টার করার নির্দেশনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া হয়েছে। যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা সবাই টিকা পাবেন। এ সময় টিকার তারিখবিষয়ক এসএমএস না এলে কাউকে টিকাকেন্দ্রে না যাওয়ার অনুরোধও করেছেন তিনি।
প্রথম ডোজই পাননি নিবন্ধিত এক কোটি ৮৭ লাখ লোক :স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত করোনার টিকা পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তিন কোটি ৪৯ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৬ জন নিবন্ধন করেছেন। এ ছাড়া পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন আরও চার লাখ ১২ হাজার ১৭৪ জন। সব মিলিয়ে তিন কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার ১০ জন টিকা নিতে নিবন্ধন করেছেন। এ সময় পর্যন্ত প্রথম ডোজ নিয়েছেন এক কোটি ৬৬ লাখ ৬১ হাজার ৪১২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৬৫ লাখ ৭৫ হাজার ৪৭৩ জন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট দুই কোটি ৩২ লাখ ৩৬ হাজার ৮৮৫ ডোজ টিকা বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল পর্যন্ত দেশে টিকা এসেছে তিন কোটি ১৭ লাখ ৬৮ হাজার ৭২০ ডোজ। বর্তমানে মজুদ আছে ৮৫ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ ডোজ। অন্যদিকে, নিবন্ধন করা এক কোটি ৮৬ লাখ ৭৪ হাজার ৫৯৮ জন এখনও প্রথম ডোজের অপেক্ষায় আছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, টিকা পাওয়া সাপেক্ষে বিতরণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নিবন্ধন করলেই সঙ্গে সঙ্গে টিকা পাওয়া যাবে- বিষয়টি এমন নয়। সিরিয়াল অনুযায়ী নিবন্ধিত ব্যক্তিরা পর্যায়ক্রমে টিকার আওতায় আসবেন। টিকা কেনার পাশাপাশি দেশীয়ভাবে উৎপাদনের প্রক্রিয়াও শুরু হতে যাচ্ছে। সুতরাং টিকা নিয়ে সংকট হবে না। তবে অপেক্ষা করতে হবে। সবাইকে ধাপে ধাপে টিকার আওতায় আনা হবে।
মহামারি প্রতিরোধে দেশের ৮০ শতাংশ বা প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে টিকাদানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান শুরু করে সরকার। টিকা সংকটের কারণে মে মাসে নিবন্ধন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হলেও গত ৮ জুলাই থেকে নিবন্ধন আবার শুরু হয়।
এর মধ্যে টিকা গ্রহণের বয়সসীমা ৪০ বছর থেকে কমিয়ে ২৫ বছর করা হয়। সর্বশেষ ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকার নিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য সুরক্ষা অ্যাপে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com