প্রকৃতি

দেড়শ বছরের সৌরভ

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২১ । ০১:৫৯ | প্রিন্ট সংস্করণ

নবীউর রহমান পিপলু, নাটোর

নাটোরের উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে নাগলিঙ্গম ফুল - সমকাল

দূর থেকেই নজর কাড়ে। গাছের ডালে ডালে সুশোভিত ফুল আর ফুল। কাছাকাছি হতেই তীব্র ঘ্রাণ। এই ফুলের সৌরভে রয়েছে গোলাপ আর পদ্মের সংমিশ্রণ। নাম তার নাগলিঙ্গম। ফুলটির পরাগচক্র দেখতে সাপের ফণার মতো। এ কারণেই হয়তো নাম নাগলিঙ্গম। জনশ্রুতি রয়েছে, এ গাছের ফুল ও ফল নাগ-নাগিনীর একান্ত সম্পদ। নাগলিঙ্গমের ফল হাতির প্রিয় খাবার। এ জন্য কোথাও কোথাও এটি 'হাতিফল' নামে পরিচিত। ভারতে এ ফুল 'শিবলিঙ্গম' নামে পরিচিত। গাছের পাশ দিয়ে যে কোনো সময় গেলেই এর সৌরভ মানুষকে মোহিত করে। নয়নকাড়া ফুল আর বিচিত্র গোলাকার ফলের জন্য নাগলিঙ্গম সবার কাছে বাড়তি আকর্ষণের। নাটোরের উত্তরা গণভবনের রাজপ্রাসাদের দক্ষিণে কয়েক গজ এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই নাগলিঙ্গমের। এ ফুল দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে।

উত্তরা গণভবনের হিসাব সহায়ক নুর মোহাম্মদ বলেন, দিঘাপতিয়া রাজার এই রাজপ্রাসাদের মূল ভবনের এক পাশে নাগলিঙ্গমের দুটি গাছ ছিল। প্রায় দেড়শ বছর আগে রাজা প্রমোদ নাথ রায় গাছ দুটি লাগান। জনশ্রুতি রয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন জঙ্গল থেকে নাগলিঙ্গম গাছ দুটি এনে রোপণ করা হয়। একটি অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যটি জীবিত। এখনও বেঁচে থাকা গাছটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। কাণ্ড ফুঁড়ে ছড়ার মতো বের হওয়া মঞ্জুরীতে রাশি রাশি ফুল ফুটে থাকে।

তিনি জানান, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পাওয়ার পর জেলা প্রশাসন মৃতপ্রায় অনেক গাছ বাঁচিয়ে তোলার সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজের হাতে রোপণ করা বিরল প্রজাতির হৈমন্তি ফুলের গাছ বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে।

নুর মোহাম্মদ বলেন, দিঘাপতিয়া রাজা দয়ারাম রায়ের (১৬৮০-১৭৬০) চতুর্থ বংশধর রাজা প্রমোদ নাথ রায় (১৮৪৭-১৮৮৩; ১৮৬৭ সালের নভেম্বরে তিনি জমিদারির দায়িত্ব গ্রহণ করেন) খুব শৌখিন মানুষ ছিলেন। তার সময়ে বিদেশ থেকে কিছু বিরল প্রজাতির ফুল, ফল আর ঔষধি গুণাগুণের গাছ এনে রোপণ করা হয়। ধারণা করা হয়, তার সময়েই এই নাগলিঙ্গম রোপণ করা হয়েছে। রাজার প্রিয় ফুলের তালিকায় ছিল বসন্ত আর গ্রীষ্ফ্মের এ ফুল।

সাপের ফণার মতো ফুলের ছয়টি পাঁপড়ির মাঝখানে শিবলিঙ্গ আকৃতির একটি গর্ভকে ঘিরে রাখা। অজানা এক মাদকতায় নাগলিঙ্গমের সৌরভ বহুদূর থেকে টানে। ছয়টি পাপড়ি আচ্ছাদনে ফুলগুলো খুব সহজেই নজর কাড়ে। ফুলের রং কমলাও নয় বাদামিও নয়, বরং এ দুইয়ের মিশ্রণে পাপড়িগুলোয় বেগুনি রঙের বর্ণচ্ছটা। আর পরাগচক্রে সাদা-বেগুনি-হলুদের সমাহার।

গাছে ফুল ধরার পর বেলের মতো গোল গোল ফল ধরে। এ গাছ, ফুল ও ফলের ঔষধী গুণ রয়েছে। প্রচলিত রয়েছে, পেটের পীড়া, মুখের ব্রণ সারাতে নাগলিঙ্গম বেশ কার্যকর। ডায়রিয়ার সমস্যা হলে এই গাছের পাতার রস খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়। নাগলিঙ্গম পাতা পিষে প্রলেপ দিলে বাত ব্যথা দূর হয়। নাগলিঙ্গম গাছের বাকল সিদ্ধ করে খেলে অর্শ্বরোগ ভালো হয়ে যায়। ম্যালেরিয়া রোগ নিরাময়ে নাগলিঙ্গমের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।

উত্তরা গণভবনসংশ্নিষ্টরা জানান, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন মানুষের পদচারণা না থাকায় গণভবনের গাছগুলো ফুল ও ফলে ভরে উঠেছে। সম্প্রতি গণভবন উন্মুক্ত করে দেওয়ায় আবার কোলাহল বেড়েছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com