অন্যদৃষ্টি

'বিশ্বধর্ম' আবশ্যিক হোক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২১ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

মো. কোহিনুর হোসেন

ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না, এমন কোনো মানব সভ্যতার কথা জানা যায় না। ধর্ম মানুষের সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক জীবনে, অর্থনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ইউনেস্কোর জরিপসূত্রে বর্তমান বিশ্বে ১৯টি ধর্মমত প্রচলিত আছে। অনুসারীদের সংখ্যার ভিত্তিতে এসব ধর্ম থেকে কয়েকটি ধর্মপ্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্ম হিসেবে বিবেচ্য। বলা যায়, পৃথিবীর কোনো ধর্মই সর্বজনীন নয়। একে অন্যের পরিপূরক। আন্তঃধর্মীয় দ্বন্দ্ব বা অন্য ধর্মের প্রতি অশ্রদ্ধার মূলে রয়েছে অন্য ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতা থেকে সৃষ্টি হয় নানা সংঘাত, অবিশ্বাস এবং কখনও কখনও ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড বা বিশ্বযুদ্ধ। শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে সৃষ্টি হয়েছে নানা মতবাদ ও ধর্মীয় শ্রেণিগোষ্ঠী। আন্তঃধর্ম নিয়ে চলছে নানা প্রকার সমালোচনা ও বিভ্রান্তি। এই বিভেদের সুযোগ নিচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র। ফলে ধর্মের মূল উদ্দেশ্য শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে।

উপমহাদেশের ধর্মীয় ইতিহাসে বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে রয়েছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ঐতিহ্য। কিন্তু সে ঐতিহ্য ক্রমেই লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছে। আমাদের প্রজন্ম যেন দিন দিন সাম্প্রদায়িক হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যের ধারা লুপ্ত হয়ে যাবে। আমরা অভিভাবক হিসেবে দেউলিয়া হয়ে পড়ব, অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রজন্মের হাতে পৌঁছে দিতে না পারার অভিযোগে অভিযুক্ত হবো।

সরকার বিশ্ব শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতি রেখে বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমকে বিশ্বমানের উপযোগী করে তোলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শুরু করেছেন। সরকারের এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। ২০২৩ সাল থেকে প্রবর্তন হতে যাচ্ছে একটি বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক সবার জন্য এক ও অভিন্ন শিক্ষা পদ্ধতি। বিজ্ঞান নিত্য পরিবর্তনশীল।

তাই জাতির কল্যাণে ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে শিক্ষা বিজ্ঞানের বিবর্তন আবশ্যক।

আমার আলোচনার বিষয় হলো 'বিশ্বধর্ম'। বিশ্বধর্ম বলতে বুঝি পৃথিবীর সর্বত্র রাষ্ট্র স্বীকৃত ধর্মগুলো। পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মের মধ্যে খ্রিষ্টান, ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, ইহুদি ও অন্যান্য লোকধর্ম রয়েছে। সব ধর্মমত সত্য, তবে তার রূপ ও বিশ্বাস ভিন্ন। সব ধর্মের মূল গ্রন্থগুলোর সংকলন ও সংরক্ষণ একই রকম কিন্তু ব্যাখ্যা ও রূপরেখা ভিন্ন ভিন্ন। আমরা যদি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ কামনা করি তাহলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশের আদলে হিন্দু ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ, খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ, বৌদ্ধ ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে গড়ে তুলতে হবে। প্রাথমিক থেকে নিম্ন মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বিশ্বধর্ম শিক্ষা একটি বিষয় ও মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় পার্টের মাধ্যমে যদি অভিন্ন একই শিক্ষা ব্যবস্থায় সংযোজন করা যায়, তাহলে দেখা যাবে সবাই তার নিজস্ব ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে জানবে-বুঝবে এবং পরধর্মমত সহিষ্ণুতার শিক্ষা লাভ করবে। বিশ্বধর্ম বিষয়টি সবার জন্য আবশ্যিক হবে। এর ফলে প্রত্যেকের মধ্যেই অন্য ধর্মের প্রতি ছাত্রজীবন থেকেই শ্রদ্ধাবোধ ও সম্মানবোধ তৈরি হবে। আমাদের নীতিনির্ধারক, গবেষক ও সুশীল সমাজকে এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার।

মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষ বিষয়টি ছিল এ মনোভাবেরই লিখিত দলিল। কিন্তু জাতির পিতাকে হত্যার ভেতর দিয়ে সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করে সেটাকে পদদলিত করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য রচিত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ। সেই বিষবৃক্ষ আজ ফল দিতে শুরু করেছে। এখনও সময় আছে সেই বিষবৃক্ষ সমূলে উপড়ে ফেলার। আর তা করা গেলে সেটা হবে বাঙালি জাতির আরেকটি বড় বিজয়।

শিক্ষক
ap.m.k.hossain@gmail.com

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com