
সাইবার হামলায় 'অচল' ইরানের পেট্রল স্টেশন
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২১ । ১০:৫০ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২১ । ১০:৫০
অনলাইন ডেস্ক

সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ইরানের জ্বালানি বিতরণ নেটওয়ার্ককে অচল করে দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার এই সাইবার আক্রমণ চালানো হয় বলে ইরান সরকারের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি।
ইরান সরকার বলছে, এই সাইবার আক্রমণের পেছনে একটি দেশ রয়েছে। তবে দেশটির নাম উল্লেখ করেনি তারা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'প্রিডেটরি স্প্যারো' নামে পরিচয় দেওয়া একটি গ্রুপ দাবি করেছে, তারা ওই সাইবার আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু ইরানের শীর্ষ ইন্টারনেট নীতি-নির্ধারণী সংস্থা এই আক্রমণের পেছনে একটি বেনামি 'স্টেট অ্যাক্টর (বিদেশি কোনো সরকার দ্বারা পরিচালিত কেউ)' রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, এর লক্ষ্য ছিল 'মানুষের মধ্যে ক্ষোভ জাগিয়ে তোলা'।
দেশটির সরকার জানিয়েছে, সাইবার আক্রমণের মাধ্যমে ইরানের পেট্রল বিক্রির বিভিন্ন সংস্থার আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ককে বিকল করে দেওয়া হয়। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশটির মোটর গাড়ি চালকেরা সরকারের ইস্যু করা স্মার্ট কার্ড দিয়ে হ্রাসকৃত মূল্যে পেট্রল কিনতে পারতেন। তাই ভর্তুকি দেওয়া জ্বালানি কেনার জন্য দেশটির পেট্রোল স্টেশনগুলোতে সব সময়ই দীর্ঘ লাইন থাকত।
সরকার আরও জানায়, একই সঙ্গে হ্যাকাররা রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের হাইওয়েতে বসানো ডিজিটাল বিলবোর্ডেরও দখল নেয়। সেগুলোতে তারা একটি বার্তা পোস্ট যাতে লেখা ছিল 'খামেনি, আমাদের জ্বালানি কোথায়?'
ইরানের জ্বালানি তেল বিতরণ সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বুধবার সকাল নাগাদ দেশটির মোট ৪ হাজার ৩০০ পেট্রল স্টেশনের মাত্র পাঁচ শতাংশ হ্যাকারদের কবল থেকে মুক্ত করে চালু করা সম্ভব হয়েছে।
এ ছাড়া প্রায় তিন হাজার স্টেশন ভর্তুকি-বিহীন দামে 'অফলাইনে' জ্বালানি বিক্রি করতে পারছে বলেও জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ, ইরান সরকারের অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতির কারণে দেশটির মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমে খারাপ হয়েছে। সে কারণে ইরানে বেশিরভাগ মানুষ সরকারের ভর্তুকি দেওয়া দামে বিক্রি করা জ্বালানির ওপর নির্ভর করে।
বুধবার ইরানের মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রেসিডেন্ট রাইসি বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং জনজীবনে বিঘ্ন ঘটিয়ে মানুষের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করার জন্য কেউ এ কাজ করেছে। তবে কর্তৃপক্ষের সতর্কতার কারণে হ্যাকাররা এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারেনি।
ইরানের সুপ্রিম কাউন্সিল অব সাইবার স্পেসের সেক্রেটারি আবোল হাসান ফিরুজাবাদী বলেন, হামলার পেছনে একটি দেশ রয়েছে। কিন্তু 'কোন দেশ এবং কীভাবে' সে হামলা চালানো হয়েছিল তা জানানোর সময় এখনো হয়নি।
এদিকে আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ফারস বলছে, হ্যাকিংয়ের এই ঘটনাটি দুই বছর আগে ইরানে পেট্রলের দাম ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেওয়া হলে দেশজুড়ে যে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল, তার দ্বিতীয় বার্ষিকী উদযাপনের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ওই বিক্ষোভ দমনে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, সেসময় ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। যদিও ইরানের কর্মকর্তারা সে দাবি নাকচ করে আসছেন।
মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে এক পোস্ট দিয়ে প্রিডেটরি স্প্যারো বলছে, সাইবার আক্রমণটি আসলে 'এ অঞ্চল এবং বিশ্বের মানুষের বিরুদ্ধে তেহরানের সন্ত্রাসী সরবারের চালানো সাইবার কর্মকাণ্ডের একটি জবাব।'
একই সঙ্গে ইরানের জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের আগেই সতর্ক করা হয়েছিল বলে দাবি করেছে হ্যাকার গ্রুপটি।
তারা বলছে, ইরানের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে 'খুব দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি' হতে পারে এমন কিছু না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।
গ্রুপটি দাবি করেছে, জুলাই মাসে ইরানের রেল নেটওয়ার্কে সাইবার আক্রমণের পেছনেও ছিল তারা। সে সময় স্টেশনের বোর্ডগুলোতে বিলম্বিত বা বাতিল বলে ভুল বার্তা প্রদর্শিত হয়।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com