
রংপুর
২০ হাজার উদ্যোক্তা তৈরির কারিগর
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ০১ নভেম্বর ২১ । ১৬:৩১ | প্রিন্ট সংস্করণ
মেরিনা লাভলী

হাউজ থেকে রঙিন মাছের পোনা সংগ্রহ করছেন মৃদুল
রঙিন মাছ উৎপাদনে দেশের মডেল রংপুরের মৃদুল রহমান। নিজ বাড়িতে চৌবাচ্চায় চাষ করছেন প্রায় ৩৫ প্রজাতির অ্যাকুরিয়াম ফিশ বা রঙিন মাছ। নিজ খামার থেকে বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় দুই লাখ রেণু। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বেকার যুবকরা এসব রেণু কিনে খামার গড়ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ২০ হাজার তরুণ রঙিন মাছ উৎপাদন করে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। রঙিন মাছ চাষের পাশাপাশি ছাদ বাগানে বিদেশি ও উন্নতজাতের প্রায় ৬০ প্রজাতির আমগাছের সমাহার ঘটিয়েছেন তিনি।
রংপুর নগরীর মেডিকেল পূর্ব গেট এলাকার এক সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মৃদুল রহমানের। তার বাবার আসির উদ্দিন আহমেদ পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে মৃদুল রহমান চতুর্থ। ঢাকার সেন্ট্রাল ল' কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষে কর্মের সূচনা করেন কোচিং সেন্টার দিয়ে। এরপর কম্পিউটারের ব্যবসা। পরে সুবিধা করতে না পেরে রংপুর নগরীতে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেয়ার মালিকানায় পরিচালনা করছেন তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত অংশ থেকে এক একর জমিতে 'বাগান বাড়ি' নামে নিজের আবাস গড়ে তোলেন মৃদুল রহমান। শুরুতে শখের বসে রঙিন মাছের একটি চৌবাচ্চা করে সেখানে মাছ পোষা শুরু করেন তিনি। শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য আরেকটি পানির হাউস তৈরি করেন। শিশুরা বছরে এক-দু'বার সেখানে সাঁতারের জন্য আসে। সারা বছর এটি পড়ে থাকার ফলে ২০০৮ সালের দিকে সেখানে রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা নেন মৃদুল রহমান। প্রথম ধাপে ঢাকার কাঁটাবন থেকে এক লাখ টাকার মাছ কিনে আনেন তিনি। এরপর সেগুলো চৌবাচ্চা ও পানির হাউসে লালন-পালন শুরু করেন। রঙিন মাছ চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম পর্যায়ে ধাক্কা খান মৃদুল রহমান। কয়েক দিনেই মরে যায় সব মাছ। মৎস্য বিভাগের দ্বারে দ্বারে গিয়েও পাননি কোনো সমাধান। শখের মাছ মরে যাওয়ায় রঙিন মাছ চাষ নিয়ে কঠিন জেদ আসে তার। ইন্টারনেট ঘেঁটে মাছ চাষের সব কলাকৌশল শিখে নেন তিনি। এরপর আরও ৫০ হাজার টাকার মাছ কিনে নিয়ে এসে চাষ শুরু করেন। চৌবাচ্চাগুলোতে প্রকারভেদে মাছের উপযুক্ত পরিবেশ, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ও পানির তাপমাত্রা নিশ্চিত করেন। কোন মাছের আচারণ কী, কোথায় থাকতে পছন্দ করে এসব নির্বাচন করে মাছগুলো বিভাজন করে প্রতিপালন করতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু মাছ নিজে নিজে প্রজনন ঘটিয়ে সংখ্যা বাড়াতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে মৃদুল রহমানের। মাছের সংখ্যা বাড়তে দেখে তিনি চৌবাচ্চার সংখ্যাও বাড়াতে থাকেন এবং উৎপাদিত মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা শুরু করেন।
বর্তমানে বাড়ির উঠোনে ২৫টি চৌবাচ্চা তৈরি করেছেন মৃদুল রহমান। সেখানে ছোট, মাঝারি, বড় বিভিন্ন আকৃতির আকর্ষণীয় রঙিন মাছ চাষ হচ্ছে। প্রায় ৩৫ প্রজাতির রঙিন মাছ বা অ্যাকুরিয়াম ফিশ চাষ করছেন তিনি। এর মধ্যে প্লাটি, মলি, গাপ্পি, সোডটেইল, সার্ক, অ্যাঞ্জেল, অ্যালবিনো, সাকার, টাইগার, কার্প, পমেট, গোল্ডফিশ, চিকলেট, বাটার, বেলুন মলি, টেট্রা উল্লেখযোগ্য। এসব মাছ উঠানজুড়ে চৌবাচ্চাগুলোতে সারাদিন খেলা করছে। মাছের পরিচর্যায় ৯ জন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে এসব চৌবাচ্চায় লালন-পালন করা মাছগুলোর মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন মৃদুল রহমান।
একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে মৃদুল রহমানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর সারাদেশে রঙিন মাছ চাষে আইকন হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর থেকে মোবাইল ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন বেকার তরুণ উদ্যোক্তারা। রঙিন মাছ চাষে সফল হওয়ার নানা কৌশল রপ্ত করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন তারা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন উদ্যোক্তাদের রঙিন মাছ চাষে সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মৃদুল রহমান। প্রতি বছর তার খামারে উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ রেণু বিক্রি করছেন উদ্যোক্তাদের কাছে। এসব রেণু থেকে তার আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমার ফেসবুক গ্রুপে রেজিস্ট্রার্ড ২০ হাজার তরুণ উদ্যোক্তার রয়েছে। তাদের আমি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ওই সব তরুণ উদ্যোক্তা নিজেদের উৎপাদিত রঙিন মাছ বিক্রির জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেখানে কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তারা নিজেরা রঙিন মাছ চাষে আত্মনিয়োগ করায় এখন শতকরা ৬০ ভাগ আমদানি কমে গেছে।
মৃদুল রহমান বলেন, কলাকৌশল শিখে গেলে রঙিন মাছ চাষে তেমন ঝুঁকি নেই। দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমার খামারে মাছের মূল্য নিরূপণ করলে কয়েক কোটি টাকা দাঁড়ায়। কিন্তু আমি এক সঙ্গে সব মাছ বিক্রি করতে না পেরে আমি খণ্ডে খণ্ডে এসব মাছ বিক্রি করছি। সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন বেড়েই চলেছে। রঙিন মাছ বিক্রির বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বর্তমান দেশে যৎসামান্য বাড়িতে চৌবাচ্চা রয়েছে মাছ প্রতিপালনে। এ ছাড়া রঙিন মাছ প্রতিপালনে আগ্রহী হয়ে দেশে একটি বড় জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি। তাই তরুণ উদ্যোক্তারা সফল খামারি হয়ে গড়ে উঠতে পারলেও উৎপাদিত মাছ বিক্রি করতে হোঁচট খাচ্ছে। সরকার রঙিন মাছ রপ্তানির উদ্যোগ নিলে এ খাতে একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
মাছের পর গাছে ঝোঁক :রঙিন মাছের পাশাপাশি ফলের গাছের প্রতি ঝোঁক দিয়েছেন মৃদুল রহমান। চৌবাচ্চার পাশাপাশি এবং ছাদ ভরে তুলেছেন ফলের গাছে। প্রায় ৬০ প্রজাতির আম, বিদেশি ডালিম, ড্রাগন, বিদেশি কলাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ফলের গাছ রয়েছে তার সংগ্রহে। আমের মধ্যে কিউজাই, কাটিমন, মহালিশা, থাই-২, থাই-৭, ওয়ার্ল্ড কিং, গৌরমতি, বানানা, সূর্য্যপুরী, আলফানসো, ডকমাই, হাডিন, কেন্ট, টম্মি আটকিনস, ক্যারাবাও, গ্রাহাম উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর কলম চারা তৈরি করে তা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। আমার কাছে বিশ্বের সেরা ৩০টি আমের মধ্যে প্রায় ২৫টি জাত সংগ্রহে রয়েছে। যারা বিদেশ থেকে আমের চারাগুলো আনে, আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিনে নিই। এ ছাড়া আমি আমগাছের ফাঁকে ফাঁকে ড্রাগন চাষ করেছি। একই সঙ্গে আমও হচ্ছে ড্রাগন ফলও হচ্ছে। আমি নিজে খাচ্ছি এবং আত্মীয়ের মাঝে বিতরণ করছি। এ ছাড়া গাছের গোড়ায় সারা বছর শাকসবজি আবাদ হচ্ছে। নেপাল থেকে একটি কলার গাছ নিয়ে এসেছি। এ গাছটি লম্বায় ৩ থেকে ৪ ফুট হয়। ৪ মাসে কলা ধরে এবং কলার কান্দি ও গাছের উচ্চতা এক সমান হয়।
আমি রঙিন মাছ ও বাগান নিয়ে কাজ করছি। যারা বেকার, কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, আমি তাদের বলতে চাই, আধুনিক কৃষি একটি বড় ব্যবসা। পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের এ ব্যবসা পরিচালিত করলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য।
লেখক: প্রতিনিধি, রংপুর
রংপুর নগরীর মেডিকেল পূর্ব গেট এলাকার এক সল্ফ্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম মৃদুল রহমানের। তার বাবার আসির উদ্দিন আহমেদ পেশায় ব্যবসায়ী ছিলেন। সাত ভাইবোনের মধ্যে মৃদুল রহমান চতুর্থ। ঢাকার সেন্ট্রাল ল' কলেজ থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষে কর্মের সূচনা করেন কোচিং সেন্টার দিয়ে। এরপর কম্পিউটারের ব্যবসা। পরে সুবিধা করতে না পেরে রংপুর নগরীতে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শেয়ার মালিকানায় পরিচালনা করছেন তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত অংশ থেকে এক একর জমিতে 'বাগান বাড়ি' নামে নিজের আবাস গড়ে তোলেন মৃদুল রহমান। শুরুতে শখের বসে রঙিন মাছের একটি চৌবাচ্চা করে সেখানে মাছ পোষা শুরু করেন তিনি। শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য আরেকটি পানির হাউস তৈরি করেন। শিশুরা বছরে এক-দু'বার সেখানে সাঁতারের জন্য আসে। সারা বছর এটি পড়ে থাকার ফলে ২০০৮ সালের দিকে সেখানে রঙিন মাছ চাষের পরিকল্পনা নেন মৃদুল রহমান। প্রথম ধাপে ঢাকার কাঁটাবন থেকে এক লাখ টাকার মাছ কিনে আনেন তিনি। এরপর সেগুলো চৌবাচ্চা ও পানির হাউসে লালন-পালন শুরু করেন। রঙিন মাছ চাষের অভিজ্ঞতা না থাকায় প্রথম পর্যায়ে ধাক্কা খান মৃদুল রহমান। কয়েক দিনেই মরে যায় সব মাছ। মৎস্য বিভাগের দ্বারে দ্বারে গিয়েও পাননি কোনো সমাধান। শখের মাছ মরে যাওয়ায় রঙিন মাছ চাষ নিয়ে কঠিন জেদ আসে তার। ইন্টারনেট ঘেঁটে মাছ চাষের সব কলাকৌশল শিখে নেন তিনি। এরপর আরও ৫০ হাজার টাকার মাছ কিনে নিয়ে এসে চাষ শুরু করেন। চৌবাচ্চাগুলোতে প্রকারভেদে মাছের উপযুক্ত পরিবেশ, অক্সিজেন, অ্যামোনিয়া ও পানির তাপমাত্রা নিশ্চিত করেন। কোন মাছের আচারণ কী, কোথায় থাকতে পছন্দ করে এসব নির্বাচন করে মাছগুলো বিভাজন করে প্রতিপালন করতে থাকেন। এর মধ্যে কিছু মাছ নিজে নিজে প্রজনন ঘটিয়ে সংখ্যা বাড়াতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে মৃদুল রহমানের। মাছের সংখ্যা বাড়তে দেখে তিনি চৌবাচ্চার সংখ্যাও বাড়াতে থাকেন এবং উৎপাদিত মাছ বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা শুরু করেন।
বর্তমানে বাড়ির উঠোনে ২৫টি চৌবাচ্চা তৈরি করেছেন মৃদুল রহমান। সেখানে ছোট, মাঝারি, বড় বিভিন্ন আকৃতির আকর্ষণীয় রঙিন মাছ চাষ হচ্ছে। প্রায় ৩৫ প্রজাতির রঙিন মাছ বা অ্যাকুরিয়াম ফিশ চাষ করছেন তিনি। এর মধ্যে প্লাটি, মলি, গাপ্পি, সোডটেইল, সার্ক, অ্যাঞ্জেল, অ্যালবিনো, সাকার, টাইগার, কার্প, পমেট, গোল্ডফিশ, চিকলেট, বাটার, বেলুন মলি, টেট্রা উল্লেখযোগ্য। এসব মাছ উঠানজুড়ে চৌবাচ্চাগুলোতে সারাদিন খেলা করছে। মাছের পরিচর্যায় ৯ জন কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। বর্তমানে এসব চৌবাচ্চায় লালন-পালন করা মাছগুলোর মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন মৃদুল রহমান।
একটি বেসরকারি গণমাধ্যমে মৃদুল রহমানকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রচারের পর সারাদেশে রঙিন মাছ চাষে আইকন হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর থেকে মোবাইল ফোনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মৃদুল রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন বেকার তরুণ উদ্যোক্তারা। রঙিন মাছ চাষে সফল হওয়ার নানা কৌশল রপ্ত করতে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন তারা। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিদিন উদ্যোক্তাদের রঙিন মাছ চাষে সমস্যা, সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মৃদুল রহমান। প্রতি বছর তার খামারে উৎপাদিত প্রায় দুই লাখ রেণু বিক্রি করছেন উদ্যোক্তাদের কাছে। এসব রেণু থেকে তার আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আমার ফেসবুক গ্রুপে রেজিস্ট্রার্ড ২০ হাজার তরুণ উদ্যোক্তার রয়েছে। তাদের আমি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ওই সব তরুণ উদ্যোক্তা নিজেদের উৎপাদিত রঙিন মাছ বিক্রির জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। সেখানে কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ উদ্যোক্তারা নিজেরা রঙিন মাছ চাষে আত্মনিয়োগ করায় এখন শতকরা ৬০ ভাগ আমদানি কমে গেছে।
মৃদুল রহমান বলেন, কলাকৌশল শিখে গেলে রঙিন মাছ চাষে তেমন ঝুঁকি নেই। দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমার খামারে মাছের মূল্য নিরূপণ করলে কয়েক কোটি টাকা দাঁড়ায়। কিন্তু আমি এক সঙ্গে সব মাছ বিক্রি করতে না পেরে আমি খণ্ডে খণ্ডে এসব মাছ বিক্রি করছি। সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন বেড়েই চলেছে। রঙিন মাছ বিক্রির বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। বর্তমান দেশে যৎসামান্য বাড়িতে চৌবাচ্চা রয়েছে মাছ প্রতিপালনে। এ ছাড়া রঙিন মাছ প্রতিপালনে আগ্রহী হয়ে দেশে একটি বড় জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠেনি। তাই তরুণ উদ্যোক্তারা সফল খামারি হয়ে গড়ে উঠতে পারলেও উৎপাদিত মাছ বিক্রি করতে হোঁচট খাচ্ছে। সরকার রঙিন মাছ রপ্তানির উদ্যোগ নিলে এ খাতে একটি উজ্জ্বল সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।
মাছের পর গাছে ঝোঁক :রঙিন মাছের পাশাপাশি ফলের গাছের প্রতি ঝোঁক দিয়েছেন মৃদুল রহমান। চৌবাচ্চার পাশাপাশি এবং ছাদ ভরে তুলেছেন ফলের গাছে। প্রায় ৬০ প্রজাতির আম, বিদেশি ডালিম, ড্রাগন, বিদেশি কলাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ফলের গাছ রয়েছে তার সংগ্রহে। আমের মধ্যে কিউজাই, কাটিমন, মহালিশা, থাই-২, থাই-৭, ওয়ার্ল্ড কিং, গৌরমতি, বানানা, সূর্য্যপুরী, আলফানসো, ডকমাই, হাডিন, কেন্ট, টম্মি আটকিনস, ক্যারাবাও, গ্রাহাম উল্লেখযোগ্য। সেগুলোর কলম চারা তৈরি করে তা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করেন। আমার কাছে বিশ্বের সেরা ৩০টি আমের মধ্যে প্রায় ২৫টি জাত সংগ্রহে রয়েছে। যারা বিদেশ থেকে আমের চারাগুলো আনে, আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিনে নিই। এ ছাড়া আমি আমগাছের ফাঁকে ফাঁকে ড্রাগন চাষ করেছি। একই সঙ্গে আমও হচ্ছে ড্রাগন ফলও হচ্ছে। আমি নিজে খাচ্ছি এবং আত্মীয়ের মাঝে বিতরণ করছি। এ ছাড়া গাছের গোড়ায় সারা বছর শাকসবজি আবাদ হচ্ছে। নেপাল থেকে একটি কলার গাছ নিয়ে এসেছি। এ গাছটি লম্বায় ৩ থেকে ৪ ফুট হয়। ৪ মাসে কলা ধরে এবং কলার কান্দি ও গাছের উচ্চতা এক সমান হয়।
আমি রঙিন মাছ ও বাগান নিয়ে কাজ করছি। যারা বেকার, কাজের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে, আমি তাদের বলতে চাই, আধুনিক কৃষি একটি বড় ব্যবসা। পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের এ ব্যবসা পরিচালিত করলে সাফল্য ধরা দিতে বাধ্য।
লেখক: প্রতিনিধি, রংপুর
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com