বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না হলে কঠোর আন্দোলন: বাম গণতান্ত্রিক জোট

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২১ । ১৭:৩৭ | আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২১ । ১৭:৩৭

সমকাল প্রতিবেদক

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাম গণতান্ত্রিক জোট।

জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো এবং বাস-লঞ্চের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার করা না হলে ‘কঠোর আন্দোলন’ গড়ে তোলা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা।

সোমবার বেলা এগারটায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছিল বাম জোট। সমাবেশ শেষে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বাম জোট। মিছিলটি মুক্তাঙ্গন, নূর হোসেন স্কোয়ার হয়ে সচিবালয়ের পূর্ব গেইটে এলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। তখন পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধস্তি হয় বাম জোট নেতাকর্মীদের। তখন সচিবালয়ের পূর্ব গেইটে সমাবেশ করেন বাম জোট নেতারা। 

উভয় সমাবেশে জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশীদ ফিরোজ সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন বাম জোটের কেন্দ্রীয় নেতা সিপিবির সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ (মার্কসবাদী)’র আকম জহিরুল ইসলাম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুল আলী, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) বিধান দাস।

বিক্ষোভ সমাবেশে বাম জোট নেতারা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও তেল পাচারের অজুহাত দেখিয়ে লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির ঘোষণা দেশবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৪৬ দশমিক ৬৩ টাকায় তেল কিনে সরকারকে ৮০ টাকায় কিনতে বাধ্য করছে। সরকার তিন ধরনের শুল্ক, রিফাইন খরচ, জাহাজ খরচ ও পরিবহন বাবদ এখান থেকে প্রায় ৩৪ শতাংশ অর্থাৎ লিটারপ্রতি ১৯ টাকার বেশি তুলে নিচ্ছে। এভাবে শুল্ক-ভ্যাটসহ সরকার গত ৭ বছরে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছে। 

বাম নেতাদের দাবি, মুনাফা থেকে মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করলেই অথবা কর কমালেই তেলের দাম বাড়ানোর কোনো প্রয়োজন হত না বরং কমানো যেত।

বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করের বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে কৃষি, পরিবহন, শিল্প ও বিদ্যুৎখাতে ব্যাপকভাবে পড়বে। কারণ পরিবহনের ৭২ দশমিক ৭৯ ভাগ, কৃষির ৯৯ দশমিক ৭৩ ভাগ, শিল্পের ৮০ দশমিক ৯৮ ভাগ, বিদ্যুৎ ১৫ দশমিক ২২ ভাগ ডিজেল নির্ভরশীল। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৬ ভাগ ফার্নেস অয়েল ব্যবহৃত হয়। মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে এই প্রতিটি সেক্টরের উপর নির্ভশীল প্রায় ১৬ কোটি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

ইতোমধ্যে বাস ও লঞ্চ এর ভাড়া যথাক্রমে ২৭ শতাংশ ও ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে সরকার।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাদের অভিযোগ, পরিবহন মালিকরা বর্ধিত যে ভাড়ার ঘোষণা বিআরটিএ দিয়েছে বাস্তবে তার চেয়ে বেশি ভাড়া যাত্রীদের থেকে আদায় করছে। সরকার ও পরিবহন মালিকদের সাজানো নাটকের মাধ্যমেই এই ভাড়া বৃদ্ধি করা হল। মালিকদের হাতে বাড়তি মুনাফা তুলে দেওয়া হল। তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে সরকার এবং ভাড়া বৃদ্ধি করে মালিক মুনাফা লুটবে। আর আপামর জনগণের শুধু পকেট কাটা যাবে। 

দেশের শাসন ব্যবস্থার এই জনবিরোধী অযৌক্তিক নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবব্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের বাম-প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বাম নেতারা।

বাম নেতাদের সমাবেশ থেকে অভিযোগ আসে, চাল- ডাল-তেল-পিয়াজসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এমনিতেই জনজীবনে দুর্বিসহ অবস্থা বিরাজ করছে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করে সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দিয়েছে। তার ওপর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি জনগণের কাছে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’র সামিল।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, অবিলম্বে ডিজেল, কেরোসিন, ফার্নেস অয়েল, এলপিজি ও অটোগ্যাসের বর্ধিত মূল্য এবং পরিবহনের বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান। অন্যথায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করার হুশিয়ারি দেন।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com