রুয়ান্ডার কিগালিতে কয়েকদিন

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২১ । ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

শরীফ শেখ

রুয়ান্ডার কিগালি শহর

কিগালি এয়ারপোর্টে যখন নামলাম, তখন স্থানীয় সময় ১২টা ১০ অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় ভোর চারটা দশ। তার মানে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে কিগালি এয়ারপোর্ট পনেরো ঘণ্টার ফ্লাইট প্লাস সাড়ে ছয় ঘণ্টা ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে কাটানো মিলে মোট সাড়ে একুশ ঘণ্টার মামলা। এয়ারক্র্যাফট থেকে নেমে ইমিগ্রেশন ফরমালিটি করার পর এখানে আবার পিসিআর টেস্ট। টেস্টের রেজাল্ট দিতে বিকেল হয়ে যাবে। আমাদের অনুমতি দেওয়া হলো হোটেলে যেতে। কিন্তু হোটেলে চেকইনের পর কভিড টেস্টের রেজাল্ট না জানানো পর্যন্ত হোটেল কক্ষ থেকে বের হওয়া যাবে না।

আমরা আধঘণ্টার মধ্যেই হোটেলে পৌঁছলাম। হোটেল র‌্যাডিসন ব্লু। ফাইভ স্টার। আমরা রুয়ান্ডা ডিফেন্স ফোর্সের (আরডিএফ) বাসে করে এয়ারপোর্ট থেকে আসার পথে দেখলাম রুয়ান্ডান ক্যাপিটাল কিগালির এই হোটেল আর আমাদের ঢাকার র?্যাডিসন ব্লুর মধ্যে বিরাট ফারাক। ঢাকার র‌্যাডিসন ব্লুর তুলনায় আয়তনে অন্তত ষাট গুণ বেশি জায়গা জুড়ে এটার কম্পাউন্ড। রাতে আর এর চেয়ে বেশি ঠাহর করতে পারিনি আর সেদিকে মনও ছিল না। হোটেলে চেকইন করে ঘুমাতে হবে- এটাই ছিল আমাদের ইমিডিয়েট আরাধ্য। রুমবয় বলে গেল সকাল সাতটা থেক ব্রেকফাস্ট টাইম কিন্তু আমরা রুম থেকে বেরুতে পারব না। যতক্ষণ না কিগালি এয়ারপোর্টে করা কভিড টেস্টের রেজাল্ট নেগেটিভ আসছে, ততক্ষণ তারা রুমেই ব্রেকফাস্ট বা খাবার সরবরাহ করবে। রুমবয়কে আর কিছু জিজ্ঞেস করার অভিপ্রায় হলো না। তথাস্তু বলে ঘুমিয়ে পড়লাম শ্বেতশুভ্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে। ভেবেছিলাম ব্রেকফাস্ট গোল্লায় যাক, বেলা এগারোটার আগে ঘুম থেকে উঠব না। কেননা, ঢাকা থেকে রওনা দেওয়ার রাতে সারারাত জাগা। ঢাকা থেকে উড়াল দেওয়ার পর প্লেনে সকালের নাশতা খাইয়ে সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্লেনের সব জানালা বন্ধ করে দিয়ে রাতের নীরবতা এনে দিয়েছিল। প্রায় সবাই ঘুমিয়েছে এভাবে, আমি পারিনি।

সকালে ঘুম ভেঙে দেখি স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে সাতটা। খিদেও পেয়েছে, লং জার্নির ধকল কিছুটা কাটিয়ে উঠেছি। সাড়ে আটটার দিকে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে খুলে দেখি বিশাল দুটো ঠোঙায় করে ব্রেকফাস্ট আইটেম এসেছে। ঠোঙা খুলে কাটলারিসহ ডিসপোজেবল প্লাস্টিক কনটেইনারে খাবার পাওয়া গেল। সঙ্গে টকদই আর মিক্সফ্রুট সালাদের ভিন্ন ভিন্ন প্যাক।

খাবার পর রুমের পর্দা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে সকালের স্নিগ্ধ আলোতে সারা রুম ভরে গেল। চমৎকার একটা বারান্দা। বারান্দায় একটা মার্বেলের গোল টেবিল আর একটা চেয়ার। বারান্দার কাচের দরজা খুলতেই মনোরম শীতল বাতাস এসে গায়ে লাগল। এই দিকটা রুমের পশ্চিম দিক। সূর্যালোকে চারদিকের পাহাড় চূড়াগুলো ঝকঝক করছে। রুমে সে আলোর প্রবেশ আছে কিন্তু স্পর্শ নেই। বারান্দায় এসে রেলিং ধরে দাঁড়ালাম। সামনেই বিশাল সুন্দর গলফ কোর্টের মতো ট্রিমিং করা ঘাসের সবুজ গালিচাময় মাঠ আর এর পরেই চমৎকার চকচকে পাকা সড়ক। অদূরে কিগালির পাহাড়শ্রেণির সুউচ্চ বিপুল শয্যা। রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ পরপর একজন করে হেঁটে যাচ্ছে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে বা দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে। কেউ কেউ মর্নিং ওয়াকের ড্রেসে।

হঠাৎ দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো সামনের গালিচাসদৃশ মাঠে। দুটো বিশাল আকৃতির পাখি একসঙ্গে কিছুটা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাঁটছে আর লম্বা চঞ্চু দিয়ে খুঁটে খুঁটে কী যেন খাচ্ছে। মনে হচ্ছে ট্রিমিং করা ঘাসের আঘ্রাণ আস্বাদন করছে আর একই সঙ্গে ফাঁকেফুঁকে জড়িয়ে থাকা পোকাটোকা কিছু একটা খাচ্ছে। কোথাও দাঁড়িয়ে নয়, হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে আর খাচ্ছে। পাখি দুটো দেখতে কিছুটা আমাদের পানকৌড়ির মতো কালো কিন্তু খানিকটা ডাহুকের মতো চলাচল। তবে আমাদের ডাহুক বা পানকৌড়ি উভয়ের চেয়েই আকারে বড়। আর ঠোঁট আমাদের বকের ঠোঁটের মতো লম্বা। আর দু'পাশে ডানার ওপর চকচকে নীলচে সবুজের ছাপ।

পাখি দুটোর নির্লিপ্তভাবে পথ চলতে চলতে আহার গ্রহণ সত্যি উপভোগ্য ছিল। আমার দেখতে ইচ্ছে হলো, এই পাখির ওড়ার দৃশ্য। দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলাম, কিন্তু সেটি হলো না। হাঁটতে হাঁটতে ওরা আমার দৃষ্টিসীমার আড়ালে চলে গেল। আমি বারান্দা থেকে কক্ষে প্রত্যাবর্তন করে দরজা ভেজিয়ে দিলাম। কিগালিতে এখন শীত আসতে শুরু করেছে। তাই সকালের আবহাওয়ায় অনেকক্ষণ বারান্দার খোলা হাওয়ায় দাঁড়িয়ে থেকে শরীর বেশ হিম হয়ে এসেছে।

পরদিন ২১ জুন, আমাদের ভিজিট জেনোসাইড মেমোরিয়াল। হোটেলটির রেস্তোরাঁ মূল ভবনের বাইরে গাড়ি বারান্দার ওপারে আরেকটি পৃথক ভবনে। নিচতলায় একটি, দোতলায় একটি। আমাদের ব্রেকফাস্ট দোতলায়। অন্যান্য ফাইভ স্টার হোটেলের মতোই এখানে আইটেমের অভাব নেই। পছন্দমতো যে যার রুচিমতো খাবারের সুবিধাযুক্ত। আমি এসব সফরে যা করি, আজও এর ব্যতিক্রম করলাম না। বিভিন্ন রকমের বাদাম, বীজ, মাফিন, ক্রোয়াসোঁ, ইয়োগার্ট, হানি, ফ্রুটস আর শেষে গ্রিন টি। এসব নিয়ে বিশাল ছাদবিহীন বারান্দায় বিভিন্ন দিকে সাজানো টেবিল-চেয়ারের একটিতে গিয়ে আয়েশ করে বসে পড়লাম। গ্রিন টির পরিবেশন দেখলে বুঝতেন কী অবস্থা। আফ্রিকীয় ওয়েটারকে কৃষ্ণসুন্দরী না বলে লবঙ্গসুন্দরী বলাই বোধ হয় উপযুক্ত। কারণ কৃষ্ণ শব্দটা রাধার বিপরীতে মানালেও, সুন্দরী শব্দের প্রিফিক্স হিসেবে কৃষ্ণ অনেকের কাছে মানানসই না-ও ঠেকতে পারে। হাত ইশারায় ডেকে বললাম, কুড ইউ গিভ মি আ কাপ অব গ্রিন টি টু মি? লবঙ্গসুন্দরী একটি দন্ত বিকশিত চমৎকার করপোরেট হাসি দিয়ে শিয়রলি স্যার বলে সামনে থেকে অন্তর্হিত হলো। কিছুক্ষণ পরেই দেখি একটি ট্রেতে একেবারে রাজকীয় কাপ-পিরিচসহ একই সেটের কেতলিভর্তি চা নিয়ে হাজির।

কিগালি জেনোসাইড মেমোরিয়াল কিগালি তথা রুয়ান্ডান নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় হুটু ও টুটসি জাতিগত সম্প্রদায়ের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হয়। মূলত এটি ছিল তৎকালীন হুটু সরকারের ছত্রছায়ায় টুটসি জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করার এক জঘন্য হত্যাযজ্ঞ, গণহত্যা। এই গৃহযুদ্ধে সারাদেশে এক মিলিয়নের বেশি টুটসি নিহত হয়। ১৯৯৪ সালে পল কাগামের নেতৃত্বে এই গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। পল কাগামে টুটসি জাতিগত সম্প্রদায়ের একজন সেনা কর্মকর্তা। তার নেতৃত্বে গৃহযুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়। তিনি যে সরকার গঠন করেন, তার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ না করে অন্য একজন নেতাকে প্রেসিডেন্ট পদ প্রদান করেন। তিনি সে সময় দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট পদ এবং একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ২০০০ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হন এবং ২০০১ সালে কিগালি জেনোসাইড মেমোরিয়াল স্থাপন করেন। সারাদেশে নিহতদের মধ্যে আড়াই লক্ষাধিক রুয়ান্ডান নাগরিকের দেহাবশেষ এনে এই মেমোরিয়ালে কবর দেন এবং এটিকে দেশের এবং বিদেশের মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্র দর্শনীয় স্থান হিসেবে তৈরি করেন। পর্যটকদের জন্য এখানে অ্যাম্পিথিয়েটার আছে, যেখানে রুয়ান্ডান জেনোসাইডের ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা আছে। আমরাও তা দেখি। এরপর আমরা জেনোসাইডের বিষয়ে বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে দেয়ালে স্থাপিত আলোকচিত্র ও মানচিত্র দেখি এবং একজন গাইড আমাদের সব বুঝিয়ে দেয়। আমাদের সঙ্গে রুয়ান্ডান ডিফেন্স ফোর্সের পক্ষে প্রটোকল অফিসার হিসেবে একজন কর্নেল, একজন মেজর ও একজন মহিলা ক্যাপ্টেন সার্বক্ষণিক ছিলেন। আমাদের টিমলিডার এনডিসির সিনিয়র ডিরেক্টিং স্টাফ মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে রুয়ান্ডান সেনাবাহিনীর প্রটোকল অফিসার এবং মেমোরিয়ালের কিউরেটরসহ একটি নির্ধারিত স্থানে দাঁড়িয়ে পূর্ণ সামরিক কায়দায় ও মর্যাদায় গণহত্যায় নিহতদের আত্মার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করি।

মেমোরিয়াল পরিদর্শনের পর আমরা রুয়ান্ডান পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থিত ক্যাম্পেইন এগেইনস্ট জেনোসাইড মিউজিয়ামে গমন করে সেখানে গণহত্যার বিপক্ষে যে ক্যাম্পেইন হয়েছিল, তার ঐতিহাসিক তথ্যচিত্র দেখি। ভবনটির ছাদের ওপর একটি মন্যুমেন্ট আছে। রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের একজন যোদ্ধা কীভাবে কামান তাক করছে তার একটি ভাস্কর্য। আরও দুটি ভাস্কর্য আছে ভবনটির পেছনে ও ডান পাশের বৃক্ষশোভিত লনে। আমাদের অর্ধশত সংখ্যক সদস্যের টিমটিকে দু'ভাগে ভাগ করা হয় এবং প্রতিভাগের জন্য একজন করে শিক্ষিত স্মার্ট রুয়ান্ডান ইয়াং লেডি গাইড দেওয়া হয়। গাইড আমাদের সবকিছু দেখান এবং ইতিহাস ঐতিহ্য চমৎকার ধারাবর্ণনাসহ বলেন।

পরদিন ২২ জুন ২০২১ তারিখে আমাদের পরিদর্শন ভেন্যু ছিল রুয়ান্ডান ডিফেন্স ফোর্স (আরডিএফ) সদর দপ্তর। আরডিএফ সদর দপ্তরের একটি বিশাল হলে আমাদের ডেলিগেশনের উদ্দেশ্যে চারটি সেশনে চারটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে রুয়ান্ডান ডিফেন্স ফোর্সের বিভিন্ন অ্যাক্টিভিটিজ তুলে ধরা হয়। রুয়ান্ডান মিলিটারি হসপিটাল কীভাবে মিলিটারি ও সিভিলিয়ানদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে, তা তুলে ধরা হয় প্রথমে। তারপর বিভিন্ন কৃষি প্রকল্প, দুঙ্খামার, মৎস্যখামারের বিভিন্ন কর্মকা তুলে ধরা হয়। সমবায়ভিত্তিক এসব খামারের সদস্য মিলিটারিরা ছাড়াও সাধারণ রুয়ান্ডান নাগরিকরা।

২৩ জুন ২০২১ তারিখে আমরা দেশটির পার্লামেন্ট ভবন দেখতে যাই। পার্লামেন্টে এ সময় সেশন ছিল না। শুধু বাংলাদেশ ডেলিগেশনের জন্য এদিন পার্লামেন্ট ভবন খোলা হয়। আমাদের স্বাগত জানান পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার। তার সভাপতিত্বে বিশাল পার্লামেন্ট কক্ষে পার্লামেন্ট মেম্বারদের মতোই আসন গ্রহণ করি। পার্লামেন্ট সচিব মহোদয় একটি পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন রুয়ান্ডান পার্লামেন্ট ও রুয়ান্ডান পলিটিক্যাল সিস্টেম সম্পর্কে। আমরা জানতে পারি, পল কাগামের দল রুয়ান্ডিজ প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (আরপিএফ) ক্ষমতায় আরোহণের পর বিরুদ্ধপক্ষীয় হুটু গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অহিংস নীতি গ্রহণ করে। এই যে এত এত টুটসিদের গণহত্যা চালিয়ে মেরে ফেলা হলো, তা ক্ষমা করে দেন। বিধান করা হয়, প্রেসিডেন্ট এবং পার্লামেন্টের উপপ্রধান একই দলের হতে পারবেন না। তাই নয় শুধু, মন্ত্রিসভায় বিরোধী দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে সরকার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এই শপথ গ্রহণ করা হয় যে, রুয়ান্ডার নাগরিকদের একমাত্র জাতীয়তা হবে রুয়ান্ডান, নো হুটু নো টুটসি।

এখানে একটি কথা বলা দরকার। তাহলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রুয়ান্ডা বেলজিয়ামের কলোনি হয়ে যায়। অনেকেই জানেন ব্রিটিশরা যেখানে কলোনি স্থাপন করেছে, সেখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি ব্রিটিশরা গ্রহণ করেছে। কিন্তু ফরাসি ও বেলজিয়ানরা যেখানেই কলোনি গেড়েছে, সে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি তারা গ্রহণ করেনি, বরং সেই দেশবাসীরাই তাদের ভাষা শিখেছে। এভাবেই রুয়ান্ডায় ফরাসি ভাষা চালু হয়ে যায়। ফলে রুয়ান্ডানরা ফরাসি ভাষা জানে ও বলে। তাদের স্থানীয় ভাষা কিনিয়ারুয়ান্ডান হলেও অফিশিয়ালি ভাষা তিনটি- কিনিয়ারুয়ান্ডান, ফরাসি ও ইংরেজি। এ ছাড়া কিছু ভাষা আছে, যা অপ্রধান। পল কাগামে ক্ষমতা গ্রহণের পর হুটু নেতাদের ক্ষমা করে দেন এবং রাষ্ট্রের নাগরিক পরিচয় মাত্র একটাই নির্ধারণ করেন, তাহলো তারা সবাই রুয়ান্ডান, নো হুটু, নো টুটসি। আপনি রুয়ান্ডার যে কোনো মানুষকে যদি জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি হুটু না টুটসি? তিনি উত্তর দেবেন, উই আর নেইদার হুটু নর টুটসি, উই আর রুয়ান্ডান। বর্তমান সরকার দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে এই জাতিগত ঐক্য আনয়নের ব্যাপারে সম্পূর্ণ সফল। দেশটিকে এমনভাবে সাজিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পল কাগামে যে, দেশটিতে দুর্নীতি নেই বললেই চলে। দুর্নীতির বিষয়ে ঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি শুধু কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবেও স্বীকৃত। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ২০২০ কর্তৃক দেশটির পুলিশ ফোর্সকে সমগ্র আফ্রিকার পুলিশ ফোর্সের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বা এক নম্বর দক্ষ বা ইফিশিয়েন্ট পুলিশ ফোর্স বলেছে। কাতার সরকারের সহায়তায় ২০১৯ সালে এখানে কিগালি কনভেনশন সেন্টারের সামনে সাদা ইস্পাতের তৈরি একটি হাতের তালুর মন্যুমেন্ট স্থাপন করা হয়। এর নাম অ্যান্টি-করাপশন মন্যুমেন্ট। এটি উদ্বোধন করেন কাতারের আমির খলিফা শেখ হামাদ আল থানি। দেশটির রাজধানী কিগালি আফ্রিকার সবচাইতে পরিচ্ছন্ন শহর (ক্লিনেস্ট সিটি ইন আফ্রিকা)।

২৪ ডিসেম্বর আমাদের রুয়ান্ডা ভিজিটের শেষ দিন। আমাদের কিগালি ভ্রমণ অতঃপর শেষ হয় কিন্তু আমাদের হৃদয়ে গেঁথে থাকে কিগালির স্মৃতি, আফ্রিকার আতিথেয়তা। কিগালির আবহাওয়া, পরিচ্ছন্নতা, সড়ক ও ভৌত অবকাঠামো আমাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে, একটি জাতি মাত্র পঁচিশ বছরে কীভাবে হতদরিদ্র ভৌত ও আর্থসামাজিক অবকাঠামো, অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা থেকে দ্রুত উন্নতির দিকে যাচ্ছে ঈর্ষণীয়ভাবে। রুয়ান্ডার সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব, রাজনৈতিক ঐক্য, জনগণের অংশগ্রহণ, দেশপ্রেম, সততা, পরিশ্রম, উপযুক্ত শিক্ষা- এসব কিছু থেকে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com