আবরারের কক্ষে চার নতুন মুখ

স্মৃতিতে ১০১১

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২১ । ০০:০০ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২১ । ০১:৩২ | প্রিন্ট সংস্করণ

বকুল আহমেদ

কক্ষটির দরজা ভেড়ানো। বারান্দা-সংলগ্ন দুটি জানালাও বন্ধ। দরজায় লেখা-১০১১। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এ কক্ষেই থাকতেন আবরার ফাহাদ। দরজায় টোকা দিতেই খুললেন এক তরুণ। জানালেন, তার নাম রায়হান আমিন রানা। তিনিসহ চার শিক্ষার্থী কয়েকদিন আগে শেরেবাংলা হলের এই কক্ষে উঠেছেন। এই কক্ষ থেকে ঘুমন্ত আবরারকে ডেকে দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে আটকিয়ে নির্মম নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ভুলে যাননি কেউই।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ১০১১ নম্বর কক্ষের সামনে দাঁড়িয়েই রায়হানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, কক্ষের আগের আসবাবপত্রের কিছুই নেই। আবরার এই কক্ষে থাকতেন তা তিনি ওঠার আগেই জানতেন। দরজা দিয়ে ঢুকেই দুপাশে দুটি সিট এবং অপরপ্রান্তে দুই জানালার পাশে দুটি। দুটির একটিতে থাকতেন আবরার। এখন সেই সিটটিতেই থাকেন রায়হান।

শেরেবাংলা হলের হাজার ব্লকের পাঁচতলা ভবনের দোতলার ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দরজা ভেড়ানো। জানালাও খোলা। জানালার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল ভেতরে কয়েকজন তরুণ। ডাকতেই এক তরুণ দরজা খুললেন। জানালেন, তার নাম সিহাবুর রহমান। সম্প্রতি তিনিসহ চার শিক্ষার্থী এই কক্ষে উঠেছেন। আবরারকে এই কক্ষে নিয়ে নির্যাতনের ঘটনা জানেন তিনি। বললেন, একই হলের দোতলার অপর একটি কক্ষে তারা থাকতেন। ওই কক্ষে রঙের কাজ চলছিল। এ কারণে চারজনই ২০১১ নম্বর কক্ষে উঠেছেন। আবরার হত্যাকাণ্ডের সময় এই কক্ষে যে আসবাবপত্র ছিল তাও বদলানো হয়েছে। শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এ কে এম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের পর তদন্তের স্বার্থে  পুলিশ কক্ষ দুটি তালাবদ্ধ রেখেছিল। তদন্ত শেষে কক্ষ দুটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এখন দুটি কক্ষেই শিক্ষার্থী থাকছেন।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে শেরেবাংলা হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, হাজার ব্লকের দোতলার পশ্চিম পাশের যে কক্ষে আবরারকে নির্যাতন করা হয়েছিল সেটিতে থাকতেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সে সময়ের নেতা অমিত সাহা। শুধু এটি নয়, দোতলার পশ্চিম পাশের সবগুলো কক্ষেই একই সংগঠনের নেতারা থাকতেন। তাদের অত্যাচারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ ছিলেন। তারা বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করায় এখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। কেউ খবরদারি করে না। সবাই যার যার মতো পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত।

কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিবির সন্দেহে ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে রাতভর নির্যাতন করা হয়। একপর্যায়ে মারা যান তিনি। আবরার হত্যার রায়ে গত বুধবার ২০ জনের ফাঁসি ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত।



© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com