বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ‘ভিআইপি’ ফাঁদে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২১ । ১২:০৩ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২১ । ১২:০৩

মোহাম্মদ আলী মৃধা, শিবচর

ছবি: সমকাল

মাদারীপুর জেলার শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে ‘ভিআইপির’ ফাঁদে সাধারণ চালক ও যাত্রীদের তীব্র ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ‘ভিআইপি’ পারাপারে অগ্রাধিকার থাকার সাধারণদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ফেরিঘাটে।

নিয়ম অনুযায়ী ফেরি পার হওয়ার জন্য দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানবাহনগুলো প্রথমে ঘাটের টার্মিনালে সিরিয়ালে থাকতে হয়। ঘাটে ফেরি আসলে ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী সিরিয়ালে থাকা গাড়িগুলো ফেরিতে ওঠানো হয়। তবে সিরিয়ালে আটকে থাকা গাড়ির চালকেরা অভিযোগ করেন, ‘ভিআইপির কথা বলে পরে এসেও অনেক গাড়ি আগে পার হয়ে যাচ্ছে। আর আমাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকতে হচ্ছে। বিকেল সাড়ে ৪টার পরে ফেরি বন্ধ হয়ে যায়। অথচ দীর্ঘ সময় ঘাটে থেকেও পদ্মা পার হতে পারে না সিরিয়ালে আটকে থাকা সাধারণ চালকেরা।’

সরেজিমনে দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ রয়েছে। টার্মিনালে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, পিকআপসহ হালকা যানবাহনের দীর্ঘ সিরিয়াল ছিল। সিরিয়ালে কেউ ২ ঘণ্টা আবার কেউ ৪ ঘণ্টা ধরেও পদ্মা পার হবার জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন। ঘাটে আসা যানবাহনকে প্রথমে টার্মিনালে প্রবেশ করতে হচ্ছে। সেখান থেকে সিরিয়াল মেনে কিছু কিছু যানবাহন ফেরিঘাটে যাচ্ছে। মাত্র ৪টি ফেরি চলাচল করায় ঘাটে দুর্ভোগ যেন যাচ্ছেই না। যানবাহনের চালক বলেন, ‘ফেরি সার্ভিস বাড়ানো হোক। অথবা ভিআইপির নামে সিরিয়াল ব্রেক করে ফেরিতে গাড়ি ওঠানো বন্ধ হোক। তাহলেই সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ কমে আসবে।’

মো. জাহাঙ্গীর নামের এক চালক বলেন, ‘আমি শুক্রবার সকালে ঘাটে আসি। ঘাটে ঢুকতেই ট্রাফিক পুলিশ আমাকে টার্মিনালে গাড়ি পার্ক করতে বলেন। এরপর চারঘণ্টা ধরে সিরিয়ালে আটকা। অথচ ভিআইপি গাড়ি একের পর এক চলে যাচ্ছে। মাত্র ৪টা ফেরি চলে। ভিআইপি গাড়িতেই ফেরি লোড হয়ে যায়। সিরিয়াল থেকে গাড়ি টানে না।’

প্রাইভেটকার চালক মো. রোমান বলেন, ‘একটি বাসা-বাড়ির মালপত্রবাহী পিকআপও ভিআইপি নামে আগে ফেরিতে উঠে গেছে। পিকআপ কীভাবে ভিআইপি হয়? আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘাটে আটকে থাকি। সিস্টেম করে বেশির ভাগ গাড়ি ভিআইপি বলে পার করে দিচ্ছে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই!’

চালকেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ঘাটের দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে কিছু কিছু গাড়ি সিরিয়ালে না দিয়ে সরাসরি ফেরিঘাটে পাঠিয়ে দেয়। আর বলে, এগুলো ভিআইপি! এই ভিআইপির ফাঁদেই আমরা সাধারণেরা আটকে আছি।’

ঘাটে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘প্রতিদিনই বিভিন্ন কর্তা-ব্যক্তিদের ফোন-ম্যাসেজ থাকে গাড়ি পার করে দেওয়ার জন্য। ঘাটে এসে অনেকেই ফোন ধরিয়ে দেন। আমাদের কিছুই করার থাকে না।’

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ৮ নভেম্বর থেকে ফেরি চালু হয়। তবে শুধু দিনের বেলায় চারটি ফেরি দিয়ে হালকা যানবাহন পারাপারের নির্দেশনা রয়েছে। নৌরুটে এখন ফেরি কম, বেগম রোকেয়া, কুঞ্জলতা ও সুফিয়া কামাল সকাল সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত চলাচল করছে।’

বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. জামালউদ্দিন জানান, ‘এখানে নির্ধারিত ফি’র বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। কোনো ভিআইপি টোকেনও দেওয়া হয় না। মূলত ফেরির সংখ্যা এবং সময় সীমিত থাকায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ, যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। এরপরও অ্যাম্বুলেন্স, নারী ও শিশুদের নিয়ে আসা যানবাহন, অসুস্থ্য রোগী থাকলে আমরা তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ফেরিতে ওঠার ব্যবস্থা করে দেই। যদি ফেরির সংখ্যা এবং সময় বাড়ানো হতো তবে এমন দুর্ভোগ থাকতো না।’

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ঘাটের সহ ব্যবস্থাপক সামসুল আবেদীন জানান, ‘নৌরুটে ফেরির সংখ্যা ও সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশনা আমরা এখনও পাইনি। সময় এবং ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটে চাপ একটু বেশি।’

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : আলমগীর হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com