
শহীদ মিনারে মুশতারী শফীর মরদেহে শ্রদ্ধা
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২১ । ১৩:০৫ | আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২১ । ১৩:০৫
সমকাল প্রতিবেদক

শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী
সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে তার মরদেহ নেওয়া হয় শহীদ মিনারে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
এর আগে সোমবার বিকেলে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগও ছিল। দুই ছেলে, চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
জীবদ্দশায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ সারাদেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। একযুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার মুশতারী শফী দেশে প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।
অবিভক্ত ভারতের মালদহ জেলার কালিয়াচক এলাকায় ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি জন্ম নেন মুশতারী শফী। ৬০ এর দশকে তিনি ‘বান্ধবী সংঘ’ নামে চট্টগ্রামে নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠন থেকে তিনি বান্ধবী নামে নিয়মিত একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। ‘মেয়েদের প্রেস’ নামে চালু করেন ভিন্নধর্মী একটি ছাপাখানাও।
১৯৭১ এর ২৬ মার্চ ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠার প্রথম পরিকল্পনা হয় তার বাসভবনেই। ৩০ মার্চ কালুরঘাট বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানি বিমান হামলা পর্যন্ত গোপনে সেই বাসাতেই বিপ্লবী বেতারের কার্যক্রম চালিয়ে যান তারা। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সংবাদ ও মতামত এবং পর্যালোচনা শুনে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার’ প্রচারের মেটেরিয়াল নিউজ, বুলেটিন ইত্যাদি তৈরির কাজে স্বামী ডা. মুহাম্মদ শফী ও ভাই খন্দকার এহসানুল হক আনসারীকে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন তিনি। অগ্নিঝরা সেই দিনে তার বাসাতেই রাখা হয় পাক সেনাদের কাছ থেকে লুট করা দুই ট্রাক অস্ত্রও।
এ খবর পেয়ে ১৯৭১ এর ৭ এপ্রিল পাকবাহিনী হানা দেয় মুশতারী শফীর বাসা নগরের এনায়েত বাজারের মুশতারী লজে। ডেন্টাল সার্জন স্বামী ডা. শফী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোটভাই এহসানকে ধরে নিয়ে যায় তারা। তাদের আর খোঁজ মেলেনি। জীবনে এতবড় আঘাত পাওয়ার পরও দমে যাননি তিনি। ভারতের আগরতলায় গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে সাহায্য করেন তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে শহীদ জাহানারা ইমামের ডাকে চট্টগ্রামে নেতৃত্বের ঝাণ্ডা তুলে ধরেন মুশতারী শফী। ১৯৯২ সালে তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক হন। ১৯৯৫ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ কেন্দ্রের আহ্বায়ক হন তিনি। তার নেতৃত্বেই যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে ঝিমিয়ে পড়া আন্দোলন পুনরায় উত্তাল হয়ে উঠে।
আজীবন সংগ্রাম বরণ করে নেওয়া এই নারী একাধারে লিখেছেন ২২টি বই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য তাকে ২০১৬ সালে বাংলা একাডেমি ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করে। এছাড়া অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ অর্ধশত স্বীকৃতি রয়েছে তার ঝুলিতে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com