
ঢাকায় নতুন নিয়মে চলছে বাস
প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২১ । ১৪:৫৩ | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২১ । ২০:৪২
সমকাল প্রতিবেদক

ঢাকা নগর পরিবহনের বাস, ছবি: সমকাল
রাজধানী ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের (বিআরআর) অংশ হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ সেবা চালু হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর উদ্বোধন করেন। এসময় ঢাকার দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের পর টিকিট কেটে ফুলে ফুলে সাজানো দ্বিতল বাসে যাত্রীদের সঙ্গে অনুষ্ঠানস্থল থেকে ধানমন্ডির শংকর পর্যন্ত আসেন দুই মেয়র।
গ্রিন ক্লাস্টার নামে কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত প্রায় ২১ কিলোমিটার রুটে রোববার সকালে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০টি সবুজ রঙের বাস চালু করা হয়, যাতে প্রতি কিলোমিটারে দুই টাকা ১৫ পয়সা ভাড়া দিতে হবে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর বিআরটিসি ডিপোতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র তথা বাস রুট রেশনালাইজেষশন কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলে নূর তাপস। বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র তথা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আতিকুল ইসলাম। সঞ্চলনা করেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয়ক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক তথা কমিটির সদস্যহ নীলিমা আখতার।
বাসের রুট পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনা ২০০৪ সালের। ২০১৫ সালে শুরু হয় বাস্তবায়নের কাজ। বিআরআর পদ্ধতিতে একটি রুটের সব বাস একই রঙে একই কোম্পানির অধীনে চলে। ফলে বাসে বাসে প্রতিযোগিতা হয় না। এক বাস আরেক বাসকে ওভারটেক করে না। মালিকরা বিনিয়োগের অনুপাতে মুনাফা পান। ট্রান্সসিলভা কোম্পানির ২০টি এবং সরকারি পরিবহর সংস্থা বিআরটিসির ৩০টি দ্বিতল বাস নিয়ে চালু হয়েছে বিআরআর।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সুশৃঙ্খল ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই মেয়রকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। আমি এর সাফল্য কামনা করি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি গত ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। সেখানে থেকে আজ রিলিজ হয়ে বাসায় না গিয়ে সরাসরি মন্ত্রণালয়ে এসেছি। আমি এই উদ্যোগটাকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমার উপস্থিতিতে সেটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একের পর এক উন্নয়ন দৃশ্যপমান হচ্ছে।
বিআরআর পদ্ধতিতে একটি রুটে একটি মাত্র কোম্পানির বাস চলবে। তবে ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর রুটে আগে থেকে চলমান বাসগুলোও নগর পরিবহন বাসের সঙ্গে চলছে। ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির পর গ্রিন ক্লাস্টারে নগর পরিবহনের বাস ছাড়া অন্য কোনো বাস চলবে না। ২০২৩ সালের মধ্যে পুরো ঢাকায় নগর পরিবহনের বাস চলবে। তখন অন্য বাস থাকবে না।
নানা ঘাটতি রেখে বিআরআর চালু করা হয়েছে। এ পদ্ধতির মূল ধারণাই হচ্ছে, একটি রুটের সব বাস একই ব্য বস্থাপনায় চলবে। তবে মেয়র ফজলে নূর তাপস বলেছেন, এ নিয়ে ব্য তিব্যবস্ত হওয়ার কিছু নেই। পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। নানা ভুল-ক্রুটি হবে। সেগুলো শোধরে নেওয়া হবে। আগামী দুই মাসে আরও একশ বাস নামানো হবে। দক্ষিণের মেয়র জানান, রুট পারমিট ও ফিটনেসবিহীন বাস ঢাকায় থাকবে না। সেগুলো বন্ধে কঠোর হতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বাসের চালকরা সবুজ ইউনিফরমধারী হবেন। বাসগুলো নির্দিষ্ট স্থানে থেমে যাত্রী ওঠাবে, নামাবে। অন্যব কোথাও থামবে না। চালক শ্রমিকদের পরিচয়পত্র থাকবে। গ্রিন ক্লাস্টারের বাসে কিলোমিটারে ভাড়া হবে দুই টাকা ১৫ পয়সা।
কাউন্সিলর নজরদারি করবেন, বাস ঠিকঠাক চলছে কি-না। সকাল ৬টা থেকে ১১টা এবং বিকেল ৪টা থেকে ১০টা পর্যন্ত পিকআওয়ারে পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর বাসগুলো চলবে। অন্যব সময় ১০ মিনিট অন্তর অন্তর চলবে।
পরে দুই মেয়র উদ্বোধন অনুষ্ঠান স্থল থেকে ফুলে ফুলে সাজানো বিআরটিসির দ্বিতল বাসে যাত্রীদের সঙ্গে ধানমন্ডির শংকর পর্যন্ত আসেন। শংকরে বাসচালক জানান, তারা মাসে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা বেতনে বাস চালাবেন।
নগর পরিবহনের বাসে ই-টিকিট ব্যববস্থা রয়েছে। যাত্রী ছাউনি থেকে নগদ টাকায় পস মেশিনের মাধ্যমের নির্দিষ্ট গন্তব্যের ছাপানো টিকিট পাওয়া যাবে। মেশিনে গন্তব্যা ও দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করা রয়েছে। ফলে বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই।
যাত্রী সার্ভিসেস লিমিটেড টিকিট ব্যিবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস প্রেসিডেন্ট গোলাম ইশফাক সমকালকে বলেছেন, কার্ডের মাধ্য মে নয় আপতত নগদ টাকায় প্রিন্ট টিকিট দেওয়া হবে।
প্রথম বাসের যাত্রী নাভিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ভালো একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেকসই হলে আরামে ভ্রমণ করা যাবে। মাত্রই উদ্বোধন হল। কিছু দিন গেলে বোঝা যাবে, কেমন সেবা দিচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের ঘণ্টাখানেক পরেই বিদ্যামান বাসগুলোকে নগর পরিবহনের যাত্রী ছাউনির সামনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। রাস্তা আটকে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী তুলতে দেখা গেছে। সে কারণে নগর পরিবহনের বাসকে অপেক্ষায় থাকতে হয়।
গ্রিন ক্লাস্টার ঘাটারচর থেকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসে দুটি উপ-পথে ভাগ হয়েছে। একটি উপ-পথ টাউন হল, আসাদগেট, সোবহানবাগ, কলাবাগান হয়ে সায়েন্সল্যাব যাবে। আরেকটি শংকর, জিগাতলা হয়ে সায়েন্সল্যাবে যাবে। আবার মৎস্য ভবন মোড়ে দুই ভাগে ভাগ হয়েছে। একটি উপ-পথ কাকরাইল, ফকিরাপুল হয়ে মতিঝিল এবং আরেকটি পল্টন, দৈনিক বাংলা হয়ে মতিঝিলে মিলেছে। সেখান থেকে টিকাটুলী, ওয়ারী, জনপথ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, সাইনবোর্ড, মৌচাক হয়ে কাঁচপুরের চিটাগং রোডে গিয়ে শেষ হয়েছে।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২২
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com