
জয়নাল হাজারী: আলোচিত-সমালোচিত এক রাজনীতিক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২১ । ২০:১৫ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২১ । ২২:২৪
সমকাল প্রতিবেদক ও নিজস্ব প্রতিবেদক, ফেনী

জয়নাল হাজারী
জয়নাল হাজারী। একনামে তাকে কে না চেনেন! রাজনীতিতে উত্থান-পতন, বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়েনি। ফেনীর একসময়ের আলোচিত-সমালোচিত এ আওয়ামী লীগ নেতা শেষসময়ে ছিলেন দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। আজীবন এই দল করেই চিরবিদায় নিলেন সোমবার।
সেই জয়নাল হাজারীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সাধারণ মানুষ আপনাকে এত ভয় পায় কেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, আমাকে ভয় হয়ত একসময় পেত, মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম, লড়াই করেছি। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে লড়াই করে এলাকায় দলকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। আরও অনেক কারণে মানুষ ভয় পেত। তবে এখন একেবারেই ভয় পায় না। এখন আমাকে দেখলে মানুষ এগিয়ে আসতে চায়।
অভিযোগ রয়েছে, এক সময় তার ভয়ে অনেকে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্য থাকাকালে তার তৈরি বাহিনীর নির্যাতনের কথা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ হয়। তিনি আওয়ামী লীগের বাইরে ‘স্টিয়ারিং কমিটি' নামে একটি নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে তার দাবী, 'স্টিয়ারিং কমিটি' মানুষের জন্য কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করেছে। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে ওই বাহিনী লড়াই করেছে।
১৯৮৪ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দুই দশক ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন জয়নাল হাজারী। ফেনী সদর আসন থেকে ১৯৮৬, ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সালে তিন বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মূলত ১৯৯৬ সালের পর তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান। ওই সময় ফেনীতে ‘ত্রাস' সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিএনপি অবশ্য বরাবরই জয়নাল হাজারীকে ‘সন্ত্রাসীদের গডফাদার’ বলে এসেছে। তার কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগও কয়েক দফা বিব্রতকার পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৬ আগস্ট রাতে যৌথবাহিনী তার বাড়িতে অভিযান চালায়। তখন পালিয়ে যান তিনি। ২০০৪ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর দীর্ঘদিন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় ছিলেন জয়নাল হাজারী।
ফেনী থেকে হাজারিকা নামে প্রকাশিত একটি দৈনিকের সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার বিরুদ্ধে করা সব মামলা থেকে একে একে অব্যাহতি পান। ২০১০ সাল থেকে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি। পলাতক অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়, যার মধ্যে পাঁচটিতে সাজার রায়ও হয়েছিল।
পরে অবশ্য দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয় জয়নাল হাজারীকে। ২০১৯ সালে তাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদে স্থান দেওয়া হয়।
পরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এক ফেসবুক লাইভে জয়নাল হাজারী বলেন, ‘আমাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাতে সই করে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ নেই। যে ফোরামে আমির হোসেন আমু ভাই, তোফায়েল ভাই সদস্য, সেই জায়গায় স্থান দিয়ে শেখ হাসিনা আমার প্রতি আন্তরিকতা দেখিয়েছেন।’
সবকিছু মিলিয়ে জয়নাল হাজারী ছিলেন দেশের আলোচিত-সমালোচিত এক রাজনীতিক।
© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩
সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ
টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com