ডিসি সম্মেলন শুরু ১১ জানুয়ারি

আমলাদের জাতিসংঘের মিশনে পাঠানোর প্রস্তাবে জনপ্রশাসনের সায়

প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২১ । ২১:২৭ | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২১ । ২১:২৭

সমকাল প্রতিবেদক

জাতিসংঘের মিশনে বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)। তাদের এ প্রস্তাবে সায় দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এজন্য আমলাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিকে শিগগির এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হবে।

আসন্ন জেলা প্রশাসক সম্মেলন উপলক্ষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনের প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‌আগামী ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ডিসি সম্মেলন হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হবেন। এছাড়া রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির সঙ্গেও বৈঠকে বসবেন ডিসিরা। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত অধিবেশনে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখা গঠনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। আইএমইডি থেকে জেলা প্রশাসকদের মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের ক্ষমতা অর্পণ করা হলে এ শাখা সৃজন করা হবে। এছাড়া জনপ্রশাসনের পদায়ন নীতিমালা পরিবর্তন, ডিসি কার্যালয় ও সার্কিট হাউসে নিরাপত্তার জন্য আরও ১০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগ, ইউএনও কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চার্টার অব ডিউটিজ সুনির্দিষ্ট, ডিসির স্বেচ্ছাধীন তহবিলে যৌক্তিকভাবে বরাদ্দ, প্রকল্প ছাড়া ১১-১৬ গ্রেডভুক্ত পদের নিয়োগ বিভাগীয় বাছাই বোর্ডের অধীনে আনা, বিভাগীয় শহরে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল স্থাপন, জেলা পর্যায়ে বঙ্গবল্পূব্দ মাল্টি-পারপাস কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, পদ্মা সেতু-সংলগ্ন জাজিরা উপজেলায় আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা।

২০১৭ সালের জেলা প্রশাসন সম্মেলনে প্রথম প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদেরও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্ত হওয়া-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নেওয়া হয়। প্রস্তাবটিকে যাচাই-বাছাই করে বাস্তবায়নের বিবেচনায় রেখেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে ফের এ বিষয়ে প্রস্তাব দেন ডিসিরা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবে এবার পুরোপুরি সায় দিয়েছে। এর ফলে জাতিসংঘের মতো বড় একটি আন্তর্জাতিক চাকরি বাজারে দেশের অনেক কর্মকর্তার যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

উল্লেখ্য, বিশ্বের চারটি দেশের ১৪টি সক্রিয় শান্তিরক্ষা মিশনে ১২০টি দেশের ১৪ হাজার বেসামরিক কর্মকর্তা ও প্রায় এক লাখ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য কাজ করছেন।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া বলেন, 'জাতিসংঘের মিশনে অনুমতি পাওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এজন্য নানা ধরনের অভিজ্ঞতা লাগে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সুনির্দিষ্টভাবে কোন দায়িত্বে নিয়োগ করা হবে, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে দায়িত্বের জন্য নিয়োগ করা হবে সে বিষয়ে তাদের দক্ষতা থাকলে ভালো; প্রশিক্ষণের প্রয়োজন থাকলে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে।'

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, 'জাতিসংঘের মিশনে যদি সাধারণ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের জন্য কাজ থাকে, তাহলে তারা জানাবে। এরপর বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বসে সিদ্ধান্ত নিলে হবে না।' তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের মিশনে অনেক ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা লাগে। সাধারণত যাদের সামরিক বা আধাসামরিক প্রশিক্ষণ আছে, জননিরাপত্তা ও বিভিন্ন অপারেশনমূলক কাজে অভিজ্ঞতা আছে, তাদের প্রয়োজন হয়।'

সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম জানান, জাতিসংঘ মিশনের নিয়োগ জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে নিয়োগ করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক পদ্ধতিতে বাংলাদেশের কোনো সরকারি কর্মকর্তা মিশনে যুক্ত হননি। তাই প্রাথমিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সিভিল অফিসার পর্যায়ে কীভাবে যুক্ত হওয়া যায় সে বিষয়ে অনুমতি পাওয়ার পর আলোচনা করবে মন্ত্রণালয়।

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও ১৯৮৯ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা শান্তি মিশনে যোগ দিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। মিশনে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে আর্থিক প্রণোদনা পান। এর একটি অংশ সরকারের কোষাগারে জমা হয়। ফলে একদিকে যেমন বিদেশি রেমিট্যান্স বাড়ে, তেমনি ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হন সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা।

© সমকাল ২০০৫ - ২০২৩

সম্পাদক : মোজাম্মেল হোসেন । প্রকাশক : আবুল কালাম আজাদ

টাইমস মিডিয়া ভবন (৫ম তলা) | ৩৮৭ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা - ১২০৮ । ফোন : ৫৫০২৯৮৩২-৩৮ | বিজ্ঞাপন : +৮৮০১৭১৪০৮০৩৭৮ | ই-মেইল: samakalad@gmail.com